রাজবাড়ীতে ছাত্রদল কর্মী হত্যার রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার ২
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে ফারুক সরদার (২৬) নামে ছাত্রদলের এক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলার মূল আসামিসহ ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর আগে বুধবার (৩০ অক্টোবর) রাতে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকা ও ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার খলিল মন্ডলের হাট এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মামলার এজাহারনামীয় ১নং আসামি গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের উত্তর দৌলতদিয়া সোহরাব মন্ডল পাড়া গ্রামের রমজান ফকিরের ছেলে রিপন ফকির (২৬) ও মামলার ৩নং আসামি উত্তর দৌলতদিয়ার সোহরাব মন্ডল পাড়া গ্রামের রমজান ফকিরের ছেলে মমিন ফকির(২৭)।
নিহত ফারুক সরদার উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সোহরাব মণ্ডলপাড়ার পল্লীচিকিৎসক শহিদ সরদারের ছেলে। তিনি দৌলতদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের কর্মী ছিলেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ জানায়, বুধবার (৩০ অক্টোবর) রাত ৮ টা ৫০ মিনিটের দিকে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে দৌলতদিয়া ৭নং ফেরীঘাট এলাকা রিপন ফকির ও রাত ১০ টার দিকে ফরিদপুর কোতয়ালী থানার খলিল মন্ডলের হাট হইতে ৩নং আসামী মমিন ফকির গ্রেফতার করা হয়।
আসামী রিপন ফকির জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায় তার সাথে ফারুক সরদারের পূর্বে থেকেই মাটির ব্যবসা নিয়ে বিরোধ ছিল। সোহরাব মন্ডল পাড়া আক্কাস আলী স্কুল এলাকার সিনিয়র ও জুনিয়রদের মধ্যে ফুটবল খেলায় প্রতিযোগিতা হয়। সেই খেলায় আসামী রিপন ফকির ফারুক সরদারকে নিমন্ত্রণ না করায় আসামী রিপন ফকির ও ফারুক সরদারের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়।
পরে ফুটবল খেলায় খরচের টাকা উত্তোলনের জন্য ফুটবল খেলার খেলোয়াররা সহ উত্তর দৌলতদিয়া পোড়াভিটা এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে ৮ হাজার টাকা উত্তোলন করে। এ বিষয়েও আসামী রিপন ও ফারুক সরদারদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় উভয় পক্ষের পরিবারের লোকজন ও আত্মীয় স্বজনসহ সমাধানের চেষ্টা করে। গত ১২ অক্টোবর রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফারুক সরদার ১৫/২০ জন বন্ধু সহ আসামী রিপন ফকিরের দৌলতদিয়া যৌনপল্লির ভিতরে থাকা দোকানে আক্রমন করে।
আসামী রিপন ফকির কোন উপায়ান্তর না পেয়ে তার দোকানে থাকা ডাব কাটার ছোল হাতে নিয়ে ফারুক সরদারের সাথে থাকা অপর ভিকটিম আল আমিনকে কোপ দেয়। আল আমিন কোপ খেয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। তখন ফারুক সরদার ও আসামী রিপন ফকিরের মধ্যে ধস্তাধস্তি হলে রিপন ফকিরের দোকানের সামনে থেকে ফারুক সরদারকে এলোপাথারী কুপিয়ে দৌড়িয়ে পোড়াভিটার বাঁশের সাকোর নিকট পানিতে ফেলে দিয়ে রিপন পালিয়ে যায়।
আসামী রিপন ফকির জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ডাব কাটার ছোল পোড়াভিটার সাকুর সামনে পানির মধ্যে আছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ডাব কাটার ছোলটি আজ ভোর সাড়ে ৪টায় যৌনপল্লীর লাল ভানুর বাড়ির পাশে পোড়া ভিটাস্ত বাশের সাঁকোর সামনে পানির মধ্যে থেকে উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ রাকিবুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ অক্টোবর রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর সামনে ছাত্রদল কর্মী ফারুক সরদারকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় স্থানীয়রা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসাপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফারুককে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহত ফারুকের স্ত্রী সুমি আক্তার বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।