পাবনা জেনারেল হাসপাতালে স্যালাইন পাচ্ছেন না ডেঙ্গু রোগীরা

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পাবনা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পাবনা জেনারেল হাসপাতালে স্যালাইন পাচ্ছেন না ডেঙ্গু রোগীরা

পাবনা জেনারেল হাসপাতালে স্যালাইন পাচ্ছেন না ডেঙ্গু রোগীরা

এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ডেঙ্গু রোগীর জন্য বরাদ্দকৃত তরল স্যালাইন পাচ্ছেন না পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীরা। এ স্যালাইন হাসপাতাল থেকে দেবার কথা থাকলেও তা মিলছে না বলে অভিযোগ রোগী ও তার স্বজনদের। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, পর্যাপ্ত স্যালাইন রয়েছে। তাহলে কেনো রোগীরা স্যালাইন পাচ্ছেন না, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ডেঙ্গু রোগীরা। বেডের তুলনায় রোগী বেশি হওয়ায় অধিকাংশই হাসপাতালের মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দু’চারজনের কাছে মশারি থাকলেও অধিকাংশই মশারি ছাড়াই চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে হাসপাতালের অন্যান্য রোগীরা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। এ আশঙ্কা মুক্ত নন চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা। এতে রোগীদের যেমন সচেতনতার অভাব, তেমনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও তদারকির অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ রোগী ও তার স্বজনদের।

ডেঙ্গু রোগীদের মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা দেবার ক্ষেত্রে উদাসীনতা অভিযোগ রয়েছে। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে হাসপাতাল থেকে রোগীদের একটি তরল স্যালাইনও দেয়া হয়নি। রোগী ও তার স্বজনরা জানান, স্যালাইন চাইলেও বলা হয় সাপ্লাই নেই। এক্ষেত্রে বাইরে থেকে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে। এতে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে রোগীদের।

বিজ্ঞাপন
বেড না পাওয়ায় হাসপাতালের মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা

এ ব্যাপারে ঈশ্বরদীর আওতাপাড়ার বাসিন্দা ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী লিমন বলেন, ‘৩ দিনের জ্বর নিয়ে গতকাল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। ভর্তির পর থেকে হাসপাতাল থেকে সকালে দুইটা নাপা ট্যাবলেট দিয়েছে। তাছাড়া স্যালাইন ট্যালাইন কিচ্ছু দেয় নাই। চাইলে বলে- সাপ্লাই নাই। সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসায় অন্তত স্যালাইনটা পাওয়ার কথা, সেটিও মিলছে না। গরীব মানুষ কীভাবে এখানে চিকিৎসা নেবে?’

পাবনা শহরের শাপলা প্লাস্টিক এলাকার বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন। ছোটভাই মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে ৩ দিন ধরে হাসপাতালে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) শ্যালকও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এদের দেখভালের পুরো দায়িত্ব তার ওপর। তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে অন্তত স্যালাইনটা পাওয়ার কথা। কিন্তু সেটাও মিলছে না। তাদের নাকি সাপ্লাই নাই। প্রতিবছরই এগুলোই দেখতে হয়। ডেঙ্গু আসলেই স্যালাইন সংকট। হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন বলে আছে, রোগীরা চাইলে নাই।’

পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ডেঙ্গু রোগীরা

তিনি বলেন, জিনিসের যে দাম তাতে মধ্যবিত্তরাও এখন চরম দারিদ্রতায় ভুগছেন। হাসপাতালে এদের কারোরই সেবা নেয়ার পরিবেশ নাই। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার কোনো পরিবেশ নাই, তবুও এখানে আসেন খরচ কমাতে। একটা স্যালাইনও যদি না মেলে হাসপাতাল থেকে তাহলে কীভাবে খরচ বাঁচবে? উল্টো দালালদের দ্বারা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

রোগী ও তার স্বজনদের অভিযোগের সত্যতা জানতে কথা হয় হাসপাতালে দায়িত্বরত একাধিক ইন্টার্ন নার্সদের সাথে। তারা জানান, একেক সময় একেক ওয়ার্ডে সেবা দেন তারা। তবে গত কয়েকদিন ধরে মেডিসিন ওয়ার্ডে সেবা দিচ্ছেন। স্যালাইনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তারাও জানান- হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর জন্য তরল স্যালাইন সাপ্লাই নেই বলেই জানেন তারা।

এ ব্যাপারে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) জাহিদুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে স্যালাইন সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। রোগীরা কেন পাচ্ছেন না সেটি খোঁজ নিচ্ছি।

হাসপাতালের তথ্য বলছে, পাবনায় চলতি বছরে এযাবৎ ৩২৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। জানুয়ারি মাসে প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। বর্তমানে ১৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বছরের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রয়েছে অক্টোবর মাসে। এ মাসে মোট ১৭৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। পাবনায় এখনো কোনো মৃত্যু নেই। তবে গত অক্টোবরের শেষের দিকে ঈশ্বরদী উপজেলার এক শিশু রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু ঘটে।

এ উপজেলা থেকেই বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন বলে দাবি বিশ্লেষকদের।