পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের ঘোষণা অনুযায়ী সারাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে পলিথিন উৎপাদন, বিক্রয়, সরবরাহ ও বাজারজাতকরণ। সেই মোতাবেক সারাদেশে পলিথিন উৎপাদন ও সরবরাহের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) অভিযানের মাধ্যমে জরিমানাসহ ৪৮৪৫ কেজি পলিথিন জব্দ করে উৎপাদনকারী কারখানাগুলো সিলগালা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া ১৪টি অভিযান পরিচালনা করে ২১টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৬ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা আদায় করাসহ প্রায় ৪৮৪৫.২ কেজি পলিথিন জব্দ এবং ১টি পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানা সিলগালা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অন্যদিকে, নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন বিক্রয় করার অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তরের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা সালেহা সুমী এর নেতৃত্বে ঢাকা মহানগরের মালিবাগ কাঁচাবাজার এলাকায়ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে ৪টি প্রতিষ্ঠানকে ২ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায়সহ ১৬ কেজি পলিথিন জব্দ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
পরিবেশ অধিদপ্তরের দূষণ বিরোধী এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় একটি গুদাম থেকে ৩১৫ বস্তা বিনা মূল্যের প্রণোদনার সার জব্দ করা হয়েছে। ওই দোকানের মালিক মাজহারুল আহসানের মেসার্স আর এম ট্রেডার্স নামে একটি সারের দোকান রয়েছে এবং তিনি বিএডিসির সার ডিলার।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রণোদনার দুই ট্রাক সার বিএডিসি থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল উপজেলা কৃষি কার্যালয়ে। দুই ট্রাকে এমওপি ও ডিএপি ৬৩০ বস্তা সার ছিল। ৩ নভেম্বর এসব সার সরকারি গুদামে যাওয়ার কথা ছিল। তবে ৩১৫ বস্তার এক ট্রাক সার যায় বিএনপি নেতা মাজহারুল আহসানের গুদামে। স্থানীয় সংবাদকর্মীদের কাছ থেকে এমন তথ্য পেয়ে গতকাল বুধবার বিকালে ধোবাউড়া মধ্যবাজারে মেসার্স আর এম ট্রেডার্স নামে তাঁর একটি সারের দোকানে অভিযান চালিয়ে ৩১৫ বস্তা সার জব্দ করে ও গুদাম সিলগালা করে দেন।
এবিষয়ে গুদাম মালিক মাজহারুল আহসান বলেন, গত ৩১ অক্টোবর আমি কক্সবাজারে গিয়েছিলাম। গত ৩ নভেম্বর সরকারী প্রণোদনার ৬৩০ বস্তা সার আসে। এসময় আমার গুদামে সার কম ছিল। যে কারণে কৃষি কর্মকর্তা আমাকে ফোন করে জানায়, সার আসছে। পরে আমি তাকে বলি আমাকে এক ট্রাক সার দিয়ে দেন। আমি কক্সবাজার থেকে ফিরে আমার সার এনে আপনাকে দিয়ে দেব। এমন কথার পর আমার গুদামে ৩১৫ বস্তা সার রাখা হয়। আমার সার আগামীকাল বা তার পরদিন আসবে। সার আসলে ফেরত দেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় রাজনৈতিক কয়েকটি গ্রুপ আছে। তারা আমাকে বিভিন্নভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ারের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন বলেন, সরকারি সার বাইরের গুদামে ছিল। ওই গুদামে কি ভাবে সার গেল, তার সদুত্তর দিতে না পারায় গুদাম সিলগালা করা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগকেও জানানো হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক নাছরিন আক্তার বানু বলেন, বিষয়টি শোনার পর আমরা খোঁজখবর নিতে শুরু করেছি। যে গুদামে সার রাখা হয়েছিল, সেটিও বিএডিসির। ওই গুদাম মালিকের এক ট্রাক সার আসার কথা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে ট্রাকের উল্টাপাল্টা হয়েছে। তারপরেও বিষয়টি আমাদের জানাতে গুদাম কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার ও পৃথক আরেক অভিযানে পরিত্যক্ত অবস্থায় অস্ত্র উদ্ধার করেছে র্যাব-২।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাব-২ এর মিডিয়া কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) শিহাব করিম।
তিনি বলেন, রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই বিরোধী বিশেষ অভিযান চালিয়ে সাত ছিনতাইকারী’কে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব-২।
এছাড়া রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি পিস্তল, একটি রিভলভার, দুইটি ম্যাগাজিন, ২০ (বিশ) রাউন্ড গুলি এবং চারটি ওয়াকি-টকি উদ্ধার করা হয়েছে।
কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলায় পুকুরের পাড় দিয়ে মাদরাসা যাওয়ার পথে পানিতে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) উপজেলার ৫নং পাঁচথুবি ইউনিয়নের শালধর (সামারচর) এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- একই এলাকার মফিজ মিয়ার ছেলে মো. সামিউল (৪) ও মজিদ মিয়ার ছেলে মো. ওমর (৫)। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টার দিকে দুই ভাই একসাথে পুকুরের পাড় দিয়ে মাদরাসা যাওয়ার সময় মো. সামিউল পুকুরে পড়ে যায়। তখন সামিউলকে বাঁচাতে গিয়ে তার চাচাতো ভাই ওমরও পানিতে পড়ে যায়। পরবর্তীতে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্থানীয় লোকজন পুকুরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সামিউল ও ওমর এর মৃতদেহ পুকুরে ভাসমান অবস্থায় দেখতে পায়। তাৎক্ষণিক স্থানীয় লোকজন তাদেরকে পানি থেকে উদ্ধার করে। ততক্ষণে দুইজনই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কুমিল্লা কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিনুল ইসলাম বলেন, পানিতে ডুবে দুই চাচাতো ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়দের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি।
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ডেঙ্গু রোগীর জন্য বরাদ্দকৃত তরল স্যালাইন পাচ্ছেন না পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীরা। এ স্যালাইন হাসপাতাল থেকে দেবার কথা থাকলেও তা মিলছে না বলে অভিযোগ রোগী ও তার স্বজনদের। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, পর্যাপ্ত স্যালাইন রয়েছে। তাহলে কেনো রোগীরা স্যালাইন পাচ্ছেন না, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ডেঙ্গু রোগীরা। বেডের তুলনায় রোগী বেশি হওয়ায় অধিকাংশই হাসপাতালের মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দু’চারজনের কাছে মশারি থাকলেও অধিকাংশই মশারি ছাড়াই চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে হাসপাতালের অন্যান্য রোগীরা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। এ আশঙ্কা মুক্ত নন চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা। এতে রোগীদের যেমন সচেতনতার অভাব, তেমনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও তদারকির অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ রোগী ও তার স্বজনদের।
ডেঙ্গু রোগীদের মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা দেবার ক্ষেত্রে উদাসীনতা অভিযোগ রয়েছে। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে হাসপাতাল থেকে রোগীদের একটি তরল স্যালাইনও দেয়া হয়নি। রোগী ও তার স্বজনরা জানান, স্যালাইন চাইলেও বলা হয় সাপ্লাই নেই। এক্ষেত্রে বাইরে থেকে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে। এতে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে রোগীদের।
এ ব্যাপারে ঈশ্বরদীর আওতাপাড়ার বাসিন্দা ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী লিমন বলেন, ‘৩ দিনের জ্বর নিয়ে গতকাল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। ভর্তির পর থেকে হাসপাতাল থেকে সকালে দুইটা নাপা ট্যাবলেট দিয়েছে। তাছাড়া স্যালাইন ট্যালাইন কিচ্ছু দেয় নাই। চাইলে বলে- সাপ্লাই নাই। সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসায় অন্তত স্যালাইনটা পাওয়ার কথা, সেটিও মিলছে না। গরীব মানুষ কীভাবে এখানে চিকিৎসা নেবে?’
পাবনা শহরের শাপলা প্লাস্টিক এলাকার বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন। ছোটভাই মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে ৩ দিন ধরে হাসপাতালে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) শ্যালকও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এদের দেখভালের পুরো দায়িত্ব তার ওপর। তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে অন্তত স্যালাইনটা পাওয়ার কথা। কিন্তু সেটাও মিলছে না। তাদের নাকি সাপ্লাই নাই। প্রতিবছরই এগুলোই দেখতে হয়। ডেঙ্গু আসলেই স্যালাইন সংকট। হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন বলে আছে, রোগীরা চাইলে নাই।’
তিনি বলেন, জিনিসের যে দাম তাতে মধ্যবিত্তরাও এখন চরম দারিদ্রতায় ভুগছেন। হাসপাতালে এদের কারোরই সেবা নেয়ার পরিবেশ নাই। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার কোনো পরিবেশ নাই, তবুও এখানে আসেন খরচ কমাতে। একটা স্যালাইনও যদি না মেলে হাসপাতাল থেকে তাহলে কীভাবে খরচ বাঁচবে? উল্টো দালালদের দ্বারা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
রোগী ও তার স্বজনদের অভিযোগের সত্যতা জানতে কথা হয় হাসপাতালে দায়িত্বরত একাধিক ইন্টার্ন নার্সদের সাথে। তারা জানান, একেক সময় একেক ওয়ার্ডে সেবা দেন তারা। তবে গত কয়েকদিন ধরে মেডিসিন ওয়ার্ডে সেবা দিচ্ছেন। স্যালাইনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তারাও জানান- হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর জন্য তরল স্যালাইন সাপ্লাই নেই বলেই জানেন তারা।
এ ব্যাপারে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) জাহিদুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে স্যালাইন সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। রোগীরা কেন পাচ্ছেন না সেটি খোঁজ নিচ্ছি।
হাসপাতালের তথ্য বলছে, পাবনায় চলতি বছরে এযাবৎ ৩২৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। জানুয়ারি মাসে প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। বর্তমানে ১৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বছরের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রয়েছে অক্টোবর মাসে। এ মাসে মোট ১৭৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। পাবনায় এখনো কোনো মৃত্যু নেই। তবে গত অক্টোবরের শেষের দিকে ঈশ্বরদী উপজেলার এক শিশু রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু ঘটে।
এ উপজেলা থেকেই বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন বলে দাবি বিশ্লেষকদের।