সরকার ঘোষিত তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের বার্ষিক মজুরি বা ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধি করে ৯ শতাংশের ঘোষণা প্রত্যাখান করে তারা বার্ষিক মজুরি ১৫ শতাংশ করাসহ বিভিন্ন দাবিতে সাভারের আশুলিয়ায় কর্মবিরতি পালন করছেন পোশাক শ্রমিকেরা। শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করলে সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণা করে। পরে শ্রমিকেরা কারখানা থেকে বের হয়ে যান।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে সাড়ে ৯টা থেকে পর্যায়ক্রমে এসব কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।
পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে বৃহস্পতিবার আশুলিয়ায় বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬–এর ১৩ (১) ধারায় বন্ধ কারখানার সংখ্যা ৮টি। এগুলো হলো, এজে সুপার গার্মেন্টস লিমিটেড, মাম গার্মেন্টস লিমিটেড, ফিরোজা গার্মেন্টস লিমিটেড, নাসা সুপার গার্মেন্টস লিমিটেড, নাসা বেসিক লিমিটেড, টাউজার লাইন লিমিটেড, আল মুসলিম অ্যাপারেলস ও এস সুহি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক।
বিজিএমইএ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে আশুলিয়ার কারখানায় কাজ না করে চলে গেছে বা কাজ বন্ধ রয়েছে এমন কারখানা রয়েছে ১৩টি এবং স্ব-বেতনে ছুটি আছে ৮টি কারখানায়।
শিল্পাঞ্চল পুলিশ জানায়, আশুলিয়ায় ১৩টি কারখানায় কাজ বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে ১০টি কারখানা কর্তৃপক্ষ আজকের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন।
বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মী ও একাধিক কারখানার শ্রমিকেরা জানান, শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরা গত কয়েকদিন ধরে শ্রমিকদের বার্ষিক মজুরি বা ইনক্রিমেন্ট ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি, নিন্মতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা, বাৎসরিক অর্জিত ছুটির বকেয়া পুরো টাকা প্রতিবছর পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী শ্রমিক বলেন, গত শনিবার থেকেই সমস্যা হচ্ছিল। ওইদিন দুপুর ৩টা পর্যন্ত কাজ করছিলাম। এরপর এই কয়দিন ফ্যাক্টরিতে গেলেও অল্প সময় কাজ হলেও পরে আবার কাজ বন্ধ করে সবাই বসে ছিলো। পরে ছুটি দিলে সবাই চলে যায়। আমাদের ইনক্রিমেন্ট, বেতন বাড়াতে বাড়াতে হবে বছরে যে ছুটির টাকা পুরোটাই পরিশোধ করতে হবে।
সমস্যা সমাধানে শ্রমিকদের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তারা বলছেন, কারখানা লেভেলের শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে শ্রমিকদের দাবি সুর্নিদিষ্ট করে সেগুলো সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারের গৃহিত পদক্ষেপগুলোর তথ্য শ্রমিকদের যথাযথভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে অবহিত করতে হবে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে সরকারের কথা বলতে হবে। শ্রমিক থামিয়ে দেয়া যাবে না। সমস্যা দেখতে হবে। সবাই ষড়যন্ত্র তত্ত্বের উপর কথা বলছেন কিন্তু মূল সমস্যা খুঁজে বের করতেছেন না।
তিনি বলেন, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে মজুরি বৃদ্ধির দাবি যৌক্তিক, এছাড়া বছর শেষে ছুটির টাকা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। সকল বিষয় নিয়ে সরকারকে কাজ করতে হবে। শ্রমিকদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নের মধ্য দিয়ে তাদের যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে হবে, তথ্য জানাতে হবে।
আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূইয়া জানান, আজ ১৩টি কারখানায় কাজ বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে ১০টি কারখানা কর্তৃপক্ষ আজকের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন ৩টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছেন।