চট্টগ্রামে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে মহান বিজয় দিবস। দেশ স্বাধীন করতে গিয়ে ১৯৭১ সালে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরীর কাট্টলীতে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে শুরু হয় মহান বিজয় দিবস কর্মসূচি। পরে সেখানে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) ভোর ৬টা ২৫ মিনিটে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রথম পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, উপ পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মো. নোমান হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল এ) এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহাবুবুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. শরীফ উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সাদি উর রহিম জাদিদসহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র, রেলওয়ে পুলিশ, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি, চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরের পক্ষ থেকে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একই সাথে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের নেতারাও সেখানে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। বিজয় দিবসকে ঘিরে কাট্টলীর স্মৃতিসৌধ এলাকায় চার স্থারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
এসময় বিভাগীয় কমিশনের ড. মো. জিয়াউদ্দীন বলেন, এবারের বিজয়ের পরিবেশটা অনেকটা ভিন্ন। ১৯৭১ সালে যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমরা বিজয়ী অর্জন করেছি। সেটি স্বাধীনতার পরে অনেকটা ব্যর্থ হয়েছে পূরণে। যার ফলে আরো একটি আকাঙ্ক্ষা নিয়ে একই ধারাবাহিকতায় ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে আমরা যে বিজয় লাভ করেছি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সেটির পূর্ণ শপথ আবার গ্রহণ করেছি।
জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, আজকে আমরা বিজয়ের ৫৪ বছরে পা দিয়েছি। আমরা প্রতিবছর যারা মুক্তিযুদ্ধের প্রাণ দিয়েছে তাদের শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে আসি। আজকে আমরা কট্টলীর এই অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে এসেছি। এখানে আগে ইটভাটা ছিল সেটি উচ্ছেদ করে ৩০ এখন জায়গা উদ্ধার করেছি। ৩১ শতক জায়গায় স্থায়ীভাবে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। এটির নকশাও প্রণয়ন করা হয়েছে। আশা করছি এটা আমরা অতি দ্রুত সময়ে অনুমোদন পাব। এখানে স্মৃতিস্তম্ভ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, একাত্তরের চেতনাকে ধারণ করে জুলাই বিপ্লবের চেতনা কে সামনে নিয়ে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ সুখী সমৃদ্ধ বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চাই।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষ হয়ে যুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশটি লাখো শহীদ এবং মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা এই বিজয় অর্জন করেছি। বিজয় অর্জনের চেয়ে রক্ষা করাটা কঠিন। যার কারণে বারবার আমাদের এই গণতন্ত্র যাত্রাপথে বারবার হোচট খেয়েছি, আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হয়ে গেলেও এখন আমরা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছি মৌলিক অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছি।
মেয়র আরও বলেন, আজকের এই বিজয় দিবসে আরো একটি বিজয়া আমাদেরকে এ বছর স্মরণ করিয়ে দেয়। সেটি হচ্ছে ২৪ শে জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার বিজয়। এই বিজয় মূলত মানুষের ঐক্যবদ্ধতার বিজয়। আগামী তো আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে কাজ করব। আজকের এই দিনে ৭১ থেকে ২৪ সকল শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।