গাইবান্ধায় শীতের সন্ধ্যায় চিতই-ভাপার জমজমাট বেচাকেনা

  • মাসুম বিল্লাহ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাইবান্ধা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গাইবান্ধায় শীতের সন্ধ্যায় চিতই-ভাপার জমজমাট বেচাকেনা, ছবি: বার্তা২৪.কম

গাইবান্ধায় শীতের সন্ধ্যায় চিতই-ভাপার জমজমাট বেচাকেনা, ছবি: বার্তা২৪.কম

গাইবান্ধায় জমে উঠেছে শীতের পিঠার মৌসুমি দোকানগুলো। সন্ধ্যা নামতেই শহরের ফুটপাতে অন্তত ১০টি স্থানে চিতই ও ভাপা পিঠার জমজমাট পসরা বসায় পিঠা দোকানিরা। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব অস্থায়ী দোকানে সমানতালে বাড়ে পিঠা প্রেমি মানুষের ভিড়। কেউ একা, কেউবা দলবদ্ধভাবে স্বাদ নেন শীতের পিঠার। আবার কেউ কেউ আসেন সপরিবারে।

এছাড়া কর্মব্যস্ত দিন শেষে অফিস ফেরত চাকরীজীবি, শীতের সন্ধ্যায় ঘুরতে বের হওয়া দম্পতি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও দিনমজুরসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষই ভিড় জমান এসব পিঠার দোকানে।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা যায়, গাইবান্ধা পার্কমোড়, এক নং ট্রাফিক, ফায়ার সার্ভিস মোড়, ঘাঘট লেক পাড়, রেল স্টেশনের পূর্ব ও পশ্চিম পার্শ্বে এবং জেলা পরিষদ মোড়সহ অন্তত ১০ থেকে ১৫ স্থানে বসেছে শীতের চিতই-ভাপার অস্থায়ী দোকান। প্রত্যেকটি পিঠার দোকানেই প্রচন্ড ব্যস্ত সময় পার করছেন দোকানিরা। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই তাদের। ক্রেতাদের চাহিদামতো পিঠা সরবরাহে যেন এক প্রকার হিমশিমই খাচ্ছেন তারা।

এসময় পার্কমোড়ে ভাপা পিঠা খেতে আসা আশরাফ আলী নামের এক সরকারি চাকরিজীবী বলেন, ‘প্রত্যেক বছর শীতে আমাদের শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাপা পিঠার ভ্রাম্যমাণ দোকান বসে। কর্মব্যস্ত দিন শেষে স্ত্রী ও সন্তানসহ পিঠা খেতে এসেছি। অনেক ভাল লাগছে।’

বিজ্ঞাপন

রনি মিয়া নামের এক পিঠা প্রেমী বলেন, ‘আসলে পিঠা ছাড়া যেন শীত অপূর্ণ মনে হয়। তাই পিঠা খেতেই এসেছি। দোকানিরা ভাপা পিঠার স্বাদ বাড়াতে চালের গুঁড়ার সঙ্গে খেজুরের গুড়, নারকেল, মোরব্বা, বাদাম, কিসমিস ও জয়ফলসহ বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে পিঠা তৈরি করে থাকেন। যা খেতে অসাধারণ লাগে।’

শহরের সব চেয়ে বড় পিঠার পসরা বসে এক নং ট্রাফিক মোড়ে। এখানে এক সঙ্গে বসে তিনটি দোকান বসে। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখানে পিঠা বেচা-কেনা চলে। এদিন এখানে পিঠা খেতে আসা সদ্য বিবাহিত সিরাজ-শামীমা দম্পতি বলেন, বিষণ্ণতা কাটাতে বিকেলে শহরে ঘুরতে বের হয়েছি। ঘুরে-ফিরে পিঠার দোকানে আসলাম। চিতই পিঠা খাচ্ছি। এই পিঠা অতিরিক্ত ঝালের সর্ষে ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তা দিয়ে খেতে অসাধারণ লাগছে।’

এখানকার মৌসুমি পিঠা ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বলেন, আমি এখানে ২০০৪ সাল থেকে চিতই পিঠার অস্থায়ী দোকান বসাই। শীতের তিন থেকে চার মাস আমি এই ব্যবসা করি। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পিঠার দোকান চলে। প্রতিদিন প্রায় ২০-২৫ কেজি আটার চিতই পিঠা বিক্রি হয়। প্রতিটি পিঠার দাম মাত্র ১০ টাকা।


পার্ক মোড়ের ভাপা পিঠা ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তাফা বলেন, শীত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি পার্কের মোড়ে ভাপা পিঠার দোকান বসাই। পুরো শীতের সময়টাতে বেচাকেনা করি। চেষ্টা করি মানুষকে সুস্বাদু পিঠা খাওয়াতে। পিঠার দাম ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত।

শীতের পিঠা বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থার সভাপতি ও নাট্যজন আলমগীর কবীর বাদল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাঙালির এই পিঠার সংস্কৃতি প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী। বাংলার শীত পিঠা-পুলির উৎসবকে কেন্দ্র করে আরও আনন্দময় হয়ে ওঠে। শীত মৌসুমে শীতের পিঠার স্বাদ নেওয়াটই বাঙালির আনন্দ। স্বাদ আর সাধ্যের মধ্যে পাওয়া এসব পিঠার প্রচলন যেন যুগযুগ ধরে থাকে সেই প্রত্যাশার কথাও জানান এই নাট্যজন।