সাবেক ডিবি প্রধান হারুন ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুদকের ৩ মামলা
জাতীয়
প্রায় ৪১ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, তার স্ত্রী শিরিন আক্তার ও ছোট ভাই এবিএম শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটি থেকে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে, সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে ১৭ কোটি ৫১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ, তার তার স্ত্রী শিরিন আক্তার ১০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং তার ছোট ভাই এবিএম শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে ১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা ও ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে।
সন্ত্রাস বিরোধ আইনের মামলায় করা নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নিশীতা ইকবাল নদীসহ ৪ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) দুই দিনের রিমান্ড শেষে আসামিদের আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার উপপরিদর্শক তারেক মোহাম্মদ মাসুদ।
আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহর আদালত এ আদেশ দেন।
কারাগারে যাওয়া অপর আসামিরা হলেন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলফাতারা কাজল, এআইইউব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী শোভন মজুমদার ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী হাসান ইমাম শোভন।
গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরদিন ১৫ ডিসেম্বর রাজধানীর কলাবাগান থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় তাদের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১৩ ডিসেম্বর ভোরে রাজধানীর কলাবাগান থানাধীন পান্থপথস্থ আল বারাকা রেষ্টুরেন্টের সামনে পাকা রাস্তার উপর এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাতানামা ১০০/১৫০ জন আসামিরা একত্রে সমবেত হয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ব্যানার ব্যবহার করে জনসম্মুখে সরকারের বিরুদ্ধে অপ-প্রচারের উদ্দেশ্যে এবং ছাত্রলীগের কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য মিছিল বের করে। আসামিরা বিভিন্ন উস্কানিমূলক স্লোগান দেয়।
সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য তারা পরিকল্পনা করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
‘সন্ত্রাসী’ কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার।
মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা জন্য ছয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের আয়োজন করেছে থাইল্যান্ড। আগামী বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে যোগ দিতে থাইল্যান্ড যাচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, মিয়ানমারের উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং সীমান্তবর্তী দেশগুলোর করণীয় নিয়ে জরুরি বৈঠকের আয়োজন করেছে থাইল্যান্ড। ব্যাংককে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, চীন, লাওস ও কম্বোডিয়াকে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ওই বৈঠকে যোগ দেবেন।
বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মূলত মিয়ানমারের পুরো পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। মিয়ানমারের চলমান অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে মানবপাচার, চোরাচালান, মাদকসহ নানাবিধ অপরাধ বেড়ে চলেছে। এসব বিষয় আলোচনায় থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পটুয়াখালীর পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরো বিদ্যুৎ উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) ভোরে কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের (৬৬০ মেগাওয়াট) উৎপাদন বন্ধ করা হয়। এর আগে, গত ৯ নভেম্বর থেকে রক্ষণাবেক্ষণের কারণে দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদনও বন্ধ রাখা হয়েছিল।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-এর নির্দেশনায় পার্শ্ববর্তী পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঞ্চালন লাইন স্থাপনের জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প কর্মকর্তা শাহ আবদুল মাওলা জানিয়েছেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনরায় শুরু হবে।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্প কর্মকর্তা শাহ আবদুল মাওলা বলেন, ৯ নভেম্বর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ করা হয়েছিল। গতকাল পিডিবি’র নির্দেশে প্রথম ইউনিটও বন্ধ করা হয়েছে। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আগামী সাত দিনের মধ্যে পুনরায় উৎপাদন শুরু হবে।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশে নির্মাণাধীন পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। জানুয়ারি মাসের শুরুতেই এটি পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাওয়ার কথা রয়েছে। এ প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন জানান, সুইচিং পয়েন্টসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর নির্মাণ শেষ হয়েছে। সবকিছু সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে জানুয়ারির প্রথম দিকে উৎপাদন শুরু হবে।
তিনি বলেন, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের অন্যতম বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প, যা বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সাময়িক বন্ধ হলেও এটি দেশের বিদ্যুৎখাতের উন্নয়নে একটি বড় অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চার বছর পঞ্চগড়ের ভারী শিল্প সুগার মিল বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) এর অধীন ৬টি (পঞ্চগড়, রংপুর, পাবনা, কুষ্টিয়া, সেতাবগঞ্জ ও শ্যামপুর) ৬টি চিনিকলের আখ মাড়াইয়ের স্থগিতাদেশ প্রদান করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মাড়াই স্থগিতকৃত চিনিকলসমূহ পুনরায় চালু করার জন্য ও চিনিকল লাভজনকভাবে চালানোর নিমিত্ত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা প্রণয়নের লক্ষে গঠিত টাস্কফোর্সের সুপারিশ ও মতামতের আলোকে ০৩/১২/২০২৪ তারিখে স্মারক মূলে পর্যাপ্ত আখ প্রাপ্তি সাপেক্ষে ১ম পর্যায়ে শ্যামপুর, সেতাবগঞ্জ চিনিকল, ২য় পর্যায়ে পঞ্চগড় ও পাবনা চিনিকল এবং ৩য় পর্যায়ে কুষ্টিয়া ও রংপুর চিনিকলের মাড়াই কার্যক্রম পুনরায় চালুকরণের লক্ষে উপর্যুক্ত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হলো।
জানা যায়, প্রায় ২১ দশমিক ২৮ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে উত্তরের জেলার একমাত্র ভারী শিল্প চিনিকল। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে নানা কারণে লোকসান গুণতে শুরু করে কারখানাটি। ২০২০ সালে এসে লোকসানে পড়ে দেশের ছয়টি কারখানার সঙ্গে পঞ্চগড় চিনিকলেরও আখ মাড়াই কার্যক্রম স্থগিত করে সরকার। তখন থেকে আখ মাড়াই বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে গত ৪ বছর ধরে মিলের পুরো এলাকা জুড়ে ভুতুরে পরিবেশ বিরাজ করে। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে আখ মাড়াই ও পরিবহনের মূল্যবান যন্ত্রপাতি।
ভারী শিল্পের এ খাতটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নষ্ট হতে চলেছে চিনিকলের মূল্যবান জিনিসপত্রও। ২০১৮ সালে ৬ কোটি ৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) নির্মাণ শুরু হলে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ ইটিপির নির্মাণ কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবিএম ওয়াটার কোম্পানি লিমিটেড।
পঞ্চগড় চিনিকল কর্তৃপক্ষ জানায়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার চিনিকলটি চালুর উদ্যোগ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। ঠাকুরগাঁও চিনিকলের তত্ত্বাবধানে পঞ্চগড়ে আখ চাষ হচ্ছে। ৩১টি ইক্ষুক্রয় কেন্দ্র এর মধ্যে ৮টি চালু রয়েছে। বর্তমানে ৭৯২ একর জমিতে আখ আবাদ হচ্ছে। এখন আখ মাড়াইয়ের মৌসুম চলমান। মাঠে ২০০ একর জমিতে আখ চলমান রয়েছে। আখ চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হবে। যাকে কৃষকরা আখ চাষে আগের সেই উদ্যমে আসে।
এদিকে গত ১৬ নভেম্বর বন্ধ হয়ে থাকা সুগার মিল পরিদর্শনে এসে পঞ্চগড়সহ বন্ধ থাকা সকল সুগার মিল চালুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে কথা বলেছিলেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
পঞ্চগড় চিনিকলের তেঁতুলিয়ার সিডিএ মনিরুজ্জামান জামান , চিনিকল চালুর প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি বিকেলে শুনেছি। পঞ্চগড়ে আগে ৫০-৬০ হাজার মেট্রিক টন আখ আবাদ হতো। বর্তমানে ১৫-২০ হাজার মেট্রিক টন আবাদ হচ্ছে। ইক্ষুক্রয় কেন্দ্রগুলো চালু করে দেয়া হয় তাহলে আখ আবাদ বেড়ে যাবে। আগে তেঁতুলিয়া উপজেলায় ২০/২২ হাজার মেট্রিক টন আখ হতো। এখন ১০ হাজার হবে। চিনিকল চালু ঘিরে আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সাথে যোগাযোগ রাখছি।
পঞ্চগড় সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ৬টি চিনিকল চালুর বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। গত নভেম্বর মাসে শিল্প উপদেষ্টা মহোদয় পরিদর্শন করে গেছেন। বর্তমানে এ জেলায় ৭৯২ একর জমিতে আখ আবাদ হচ্ছে। ৩১টি ইক্ষুক্রয় কেন্দ্র এর মধ্যে ৮টি চালু রয়েছে। এখন তো আখ মাড়াইয়ের মৌসুম। মাঠে ২০০ একর জমিতে আখ রয়েছে। আখ রোপনের সময় শুরু হয়েছে। আমরা চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা চেষ্টা করছি।