‘দ্বিগুণ অর্জন দিয়ে শেষ হলো শেভরনের উদ্যোক্তা প্রকল্প’
লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ অর্জনের মধ্যদিয়ে পরিসমাপ্তি হলো শেভরন বাংলাদেশের উদ্যোক্তা প্রকল্প। উদ্যোক্তারা তাদের সাফল্যগাঁথা বর্ণনা দিয়ে বিমোহিত করলেন অতিথি ও দর্শকদের।
‘টেকসই উন্নয়নের যাত্রায় উদ্যোক্তার ক্ষমতায়ন’ এর লক্ষ্যে পরিচালিত হয় উদ্যোক্তা প্রকল্প। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে দীর্ঘ ৪ বছরের সফল যাত্রার সমাপনী আয়োজন করা হয়।
প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল ১১০টি ভিডিও (গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন) সমবায় সমিতি, ১ হাজার ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি উদ্যোগের (এমএসএমই) মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি, তাদের মূলধন সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি করা। ২০২০ সাল থেকে প্রকল্পটি সিলেট এবং হবিগঞ্জের শেভরন বাংলাদেশের গ্যাস ক্ষেত্র এলাকায় সক্রিয় ছিল। এর মাধ্যমে প্রায় ৪২ হাজার ৫০০ মানুষ ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। তাদের আর্থিক প্রবৃদ্ধি ৩৫ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য থাকলেও ৪ বছর শেষে ৫৪ শতাংশ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে বলে জানানো হয় অনুষ্ঠানে।
অনুষ্ঠানে ভিডিও ডকুমেন্টারির মাধ্যমে কয়েকজনের এবং আবার কয়েকজন উদ্যোক্তা স্বশরীরে হাজির হয়ে তাদের সাফল্যগাঁথা তুলে ধরেন। কেউ গরু পালন করে, কেউ কোয়েল পাখি পালন করে, কেউ হাস পালন করে, আবার কেউ কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। যারা অনেকে করোনা মহামারির সময় সব হারিয়ে নিঃস্ব হতে বসেছিলেন।
প্রকল্পের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন ভাগ্যের চাকা। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত এসব নারী আগে অন্যের উপর নির্ভরশীল ছিলেন, এখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে অন্যদের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেছেন। এতে করে তাদের সামাজিক মর্যাদাও অনেকগুণ বেড়েছে বলে জানালেন রীনা গোমেজ।
উদ্যোক্তা-এম্পাওয়ারিং এন্টারপ্রেনারস প্রকল্পটি শেভরন বাংলাদেশ দ্বারা অর্থায়িত এবং আইডিই দ্বারা বাস্তবায়ন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, স্মল ইজ ভার্নারেবল (ক্ষুদ্র ঝুঁকিপূর্ণ)। বড় উদ্যোক্তারা তাদের বাজারে ঢুকতে দেয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থাপনাও তাদের বিরুদ্ধে কাজ করে।
তিনি বলেন, এনজিও কাজের দুর্বল দিক হচ্ছে, যতোক্ষণ প্রকল্প ততোক্ষণ জীবন্ত, পরে হারিয়ে যায়। এমনভাবে উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে, তারা যেনো হারিয়ে না যায়। তাদেরকে এমনভাবে সক্ষম করে তুলতে হবে, যাতে পরে আর আপনার ভূমিকার প্রয়োজন না হয়। তাদেরকে সরকারের বিভিন্ন ধরণের সুযোগ সুবিধার সঙ্গে পরিচিত করতে হবে। তাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে নিতে না পারলে সাফল্য আসবে না।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য উদ্যোক্তা প্রকল্পের প্রশংসা করে বলেন, প্রকল্পের চিন্তা সঠিক ছিল বলে মনে হয়েছে। প্রকল্প কার্যকর বলে মনে করি।
বিশেষ অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শেভরন বাংলাদেশের ডিরেক্টর (ফাইনান্স) গ্রেগ বার্নস, ডিরেক্টর (কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স) মুহাম্মদ ইমরুল কবির, মৎস্য বিভাগের উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ) ফিরোজ আহমেদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা)-আইসিটি উইং ড. এফএম মাহবুবুর রহমান, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের প্রিন্সিপ্যাল বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হোসনে আরা বেগম।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইডিই বাংলাদেশের কান্ট্রিডিরেক্টর সামীর কার্কি। আইডিই বাংলাদেশের মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন বিশেষজ্ঞ পারমিতা দত্তের সঞ্চালনায় আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন শেভরন বাংলাদেশের সিই এবং এসআই ম্যানেজার একেএম আরিফ আখতার, ফিল্ড কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স ম্যানেজার খন্দকার তুষারুজ্জামান, আলিম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মোঃ হুমায়ূন কবীর, আইডিই বাংলাদেশের সহযোগী পরিচালক (প্রোগ্রাম) মোহাম্মদ শোয়েব ইফতেখার, হেড অব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ মোঃ আফজাল হোসেন ভূঁইয়া, উদ্যোক্তা প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. হান্নান আলী ।
শেভরন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সমন্বিত জ্বালানি কোম্পানি, জ্বালানি শিল্পের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই যান পদচারনা রয়েছে। শেভরন বাংলাদেশ ব্লক টুয়েলভ, লিমিটেড এবং ব্লকস থার্টিন ও ফোরটিন, লিমিটেড (শেভরন বাংলাদেশ) নিয়ে বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদক। দেশিয় প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের প্রায় ৬০ শতাংশ এবং দেশিয় কনডেনসেট উৎপাদনের ৮৩ শতাংশ যোগান দিয়ে যাচ্ছে। শেভরন বাংলাদেশ তার গ্যাসক্ষেত্র এলাকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক ও পরিবেশ উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে আসছে। অন্যদিকে আইডিই একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা যা নিম্ন আয়ের মানুষদের অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে ক্ষমতায়ন করতে কাজ করে যাতে তারা বহুবিধ প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে পারে। আইডিই ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশে তার প্রথম কান্ট্রি প্রোগ্রাম হিসাবে যাত্রা শুরু করে।