আগুনে স্বপ্ন পুড়ে ছাই, মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছে কড়াইল বস্তিবাসী

  • অভিজিত রায় কৌশিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

বিত্তবানদের নগরী হিসেবে পরিচিত রাজধানীর গুলশান এলাকা। বিত্তবানদের এই নগরীর বিপরীত প্রান্তে খেটে খাওয়া সমাজের নিম্ন শ্রেণির কিছু মানুষের বসবাস। আর এই দুই শ্রেণির মানুষের মধ্যে সীমানা হিসেবে রয়েছে একটি মাত্র লেক। এই লেকের ধারেই গড়ে উঠেছে নিম্নবিত্তদের আবাসস্থল কড়াইল বস্তি।  

গতকাল বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেল সোয়া ৪টায় কড়াইলের বৌ-বাজার বস্তিতে ভয়াবহ আগুন লাগে। নিমিষেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় প্রায় দেড় শতাধিক বসতি ঘর। একই সঙ্গে পুড়ে যায় এই দেড় শতাধিক পরিবারের স্বপ্ন। ছাইয়ের গন্ধে মিশে যায় তাদের আর্তনাদ। ফলে সব হারিয়ে এখন কোন রকম মাথা গোঁজার ঠাঁই প্রস্তুতে ব্যস্ত বস্তিবাসীরা।  

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১১টা। মহাখালী থেকে গুলশান ১ এর মধ্যবর্তী স্থান থেকে বয়ে গেছে একটি লেক। লেক পার হলেই কড়াইল বস্তি। বস্তিতে ঢুকতেই চোখে পড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের নির্মম চাহনী।

দীর্ঘ দিন কড়াইল বস্তির বাসিন্দা কবিরাজ জালাল। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার প্রায় ৪ লাখ টাকার মালামাল সব পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। আর কিচ্ছু অবশিষ্ট নেই। এখন থাকার মতন একটা ঘরও থাকলো না। এখন আমরা থাকবো কোথায়? খাবো কি? কে দেখবে আমাদের?  

বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, কাল রাতে কিছু মানুষ এসে খাবার দিয়ে গিয়েছিল। সাথে একটা কম্বলও দিয়েছিল। সেই কম্বল গায়ে দিয়েই সারা রাত এই খোলা আকাশের নিচে কাটিয়েছি। এখন সরকার যদি আমাদের না দেখে তাহলে আমরা কোথায় যাবো? কি করবো? কি খাবো? মানুষ কতদিন আমাদের খাওয়াবে।

রাকিব হাসান নামের এক বাসিন্দা বলেন, কাল যখন আগুন লাগে তখন আমি এলাকায়ই ছিলাম। বস্তির একটি বাড়িতে আগুন লাগে। সেই বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ওই আগুনেই আমাদের সব পুড়ে শেষ হয়ে যায়।

পোড়া আবর্জনা পরিষ্কারে ব্যস্ত কড়াইল বস্তির বাসিন্দা মো. ইয়াকুব। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা এখানে ১০ জন থাকতাম। ৫টা ছোট ছোট ঘর ছিল আমাদের। সবগুলো পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। গতকাল রাতে আমাদের এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলাম। সেখানেই খাওয়া দাওয়া করেছি। কিন্তু অন্যের বাসায় কয়দিন থাকা যায়। ঢাকা শহরে মানুষ এক বেলা খাবার দিতে পারে কিন্তু থাকার জায়গা দিতে পারে না। সর্বোচ্চ ২/১ দিন থাকা যায় অন্যের বাসায়। এর পর কিছু না বললেও এক বাসায় বেশিদিন থাকতে কেমন লাগে? তাই যেমন পারি বাশ কাঠ আর পলিথিন দিয়ে আপাতত থাকার মতন একটা ব্যবস্থা করছি। তারপর সরকার যদি কোন সহযোগিতা করে তখন আবার ঘর তুলতে হবে। তাছাড়া ঘর করা এখন আর সম্ভব না। এই আগুনে আমার ঘরের মালামাল ও নগদ টাকাসহ প্রায় ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।


  

মো. মেহেদী হাসান বলেন, আমরা চার জনে একসাথে থাকতাম। একটা রুম ছিলো আমাদের। কিন্তু কালকের আগুনে সব পুড়ে গেছে। সারা রাত এই শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে বসে কাটিয়েছি। আজ রাতে কি করবো জানি না। বিভিন্ন এনজিওর লোকেরা এসে আমাদের খাবার দিচ্ছে। সেই খাবার খেয়েই বেঁচে আছি।

এর আগে গতকাল বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেল সোয়া ৪টায় রাজধানীর কড়াইলে বৌ-বাজার বস্তিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

সে সময় ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের কন্ট্রোল রুম থেকে দায়িত্ব কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান জানান, বিকেল সোয়া ৪টার দিকে কড়াইল বৌ-বাজার বস্তিতে আগুন লাগার খবর আসে। খবর পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ৭টি ইউনিট। তবে রাস্তায় যানজট থাকার কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়েছে।


পরে ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ৫টা ১২ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও হতাহতের কোনো খবর জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা।

তবে ভয়াবহ এই আগুনে প্রানহাণির কোন ঘটনা না ঘটলেও অনেকেই আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলেও জানান এলাকাবাসী।