ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে ট্রেইনি চিকিৎসকদের সড়ক অবরোধ
মাসিক ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৫০ হাজার টাকা করার দাবিতে কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়ে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন পোস্টগ্রাজুয়েট ট্রেইনি ডাক্তাররা। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে সড়কের উভয়দিকে যান চলাচল। দেখা দিয়েছে যানজট।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর শাহবাগ বিএসএমএমইউ হাসপাতালের ভেতরে দেশের সব প্রাইভেট পোস্টগ্রাজুয়েট ট্রেইনি ডাক্তাররা অবস্থান নিয়ে এই দাবি জানান। পরে বেলা ১টার পর আন্দোলনকারী ডাক্তাররা শাহবাগ মোড়ের সড়ক অবরোধ করে রাস্তায় অবস্থান নেন।
এর আগে আন্দোলনকারীরা বলেন, ডাক্তারদের অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠান ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটি এবং তার সহযোগী সংগঠন পোস্টগ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যসোসিয়েশন গত ২০২২ সাল থেকেই বেসরকারি পোস্ট গ্রাজুয়েট চিকিতসকদের যৌক্তিক দাবি ভাতা বৃদ্ধির জন্য রাজপথে আন্দোলন করে আসছে।
নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা রেখে স্বাস্থ্যখাতের সকল স্টেকহোল্ডার যথাক্রমে বিসিপিএস, বিএসএমএমইউ, স্বাস্থ্য শিক্ষা মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য সচিব এবং সহকারী স্বাস্থ্য উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. সায়েদুর রহমান সহ সকলের সাথে দেখা করি। সবাই ভাতা বৃদ্ধির দাবিকে যৌক্তিক বলেন এবং দ্রুত বাস্তবায়ন করবেন বলে কথা দেন। ভাতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় নথি যথার্থ ধাপ পার করে অর্থ মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়। কিন্তু ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ে নথিভুক্ত হয়ে পড়ে আছে। আমাদের প্রত্যাশা ক্রমে হতাশায় রূপান্তরিত হয় যখন নজরে আসে ভাতা বৃদ্ধির সেই গুরুত্বপূর্ণ নথিটি অর্থ ছাড়ের জন্য অনুমোদিত হয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেনি। যার প্রতিবাদে গত ১৪ই ডিসেম্বর আমরা ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটি এর নেতৃত্বে শহীদ মিনার থেকে রাজু ভাস্কর্য পর্যন্ত মশাল মিছিল করি এবং ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করা হয়।
তারা বলেন, পরদিন ১৫ই ডিসেম্বর ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস থেকে দুজন মুখপাত্র ডা. জাবির হোসেন এবং ডা. তানভীর আহমেদ, নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে ডা. আহাদ এবং ডা আশরাফ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র সারজিস আলম সহ অর্থ মন্ত্রণালয় মিটিং করা হয়। আশ্বস্ত করা হয় সেদিনই এই নথিটি অনুমোদন দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। অথচ আজ ২২ ডিসেম্বর এখন পর্যন্ত ভাতা বৃদ্ধির নথি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়নি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গত স্বৈরাচার সরকার ও কথা দিয়ে পরবর্তীতে কথা রাখেনি। বাংলাদেশের পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসক সমাজ আর আশ্বাসে বিশ্বাস করবে না।
ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটির নেতৃত্বে সকল পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসক বরাবরের মতো সকল নিয়মতান্ত্রিক ধাপ অতিক্রম করে চিকিৎসকদের অধিকার আদায়ে এবং যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে রাজপথে নামতে বাধ্য হচ্ছে।
দ্রুত ভাতা বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা না হলে সারা বাংলাদেশে পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকগণ কর্মবিরতি পালন চলমান থাকবে।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া ড.ফিরোজ বলেন, আজ থেকে আমাদের কর্মবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই কর্মবিরতি চলমান থাকবে।
তিনি বলেন, আমাদের এখন ২৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেয়া হয়। কিন্তু তারপরও ঠিকমতন আমাদের ভাতা দেয়া হয় না। কারোর পাঁচ মাসের ভাতা বাকি, কারোর সাত মাসের ভাতা বাকি। আমাদের যে টাকা ভাতা দেয়া হয় এই টাকা দিয়ে কিভাবে একটি সংসার চালানো সম্ভব। বর্তমান সময়ে একজন মানুষের খেয়ে পড়ে চলতে গেলেইতো ২৫ হাজার টাকা লাগে। আমাদের যে টাকা ভাতা দেয়া হয় সেই তুলনায় অমানবিক পরিশ্রম করা লাগে। হাসপাতালের পুরো কাজটাই করে এই ট্রেইনি ডাক্তাররা। সুতরাং সবকিছু বিবেচনা করে সর্বনিম্ন হলেও আমাদের ৫০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক দেয়া উচিত।
আন্দোলনকারী ড.মেহেদী হাসান বলেন, আমাদের দাবির বিষয়ে জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে লিখত ভাবে জানানো হয়েছে। সমন্বয়ক সারজিস তিনি আমাদের দাবির বিষয়ে পজেটিভ। তিনিও কথা বলেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাতানো কাগজপত্র অনুমোদন দিয়ে সাক্ষর করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে সেখানে সেগুলো আটকে আছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কাগজপত্রের অনুমোদন করে প্রঞ্জাপন জারি করতে গত ১৮ তারিখের আগে অর্থ মন্ত্রণালয়কে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছিল। আমাদের এই আন্দোলন অনেক অগে থেকেই চলমান ছিল।
দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে যারা রেসিডেন্স, নন রেসিডেন্স এবং ট্রেইনি ডাক্তার আছে তাদের মূলত বর্তমানে ২৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেয়া হয়। এই টাকায় বর্তমান সময়ে কিছুই হয় না। যার কারনে আমরা ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৫০ হাজার টাকা করার দাবিতে একত্রিত হয়েছি। এবার আমাদের দাবি আদায়ে এই আন্দোলনকে বেগবান করা হচ্ছে। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত এই কর্মবিরতি ও আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।