ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় মিষ্টি আলুর লতা রোপণ করছেন চাষিরা। গত মৌসুমে লাভ হওয়ায় এবারও মিষ্টি আলু চাষে আগ্রহী এখানকার কৃষকরা। বর্তমানে ক্ষেতে লতা লাগাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। তাই সদ্য গজানো আলুর চারার পরিচর্যায় তাদের বাড়তি মনোযোগ। আবার কেউ ধান কাটার পর আলু রোপণের জন্য জমি প্রস্তুতে ব্যস্ত ।
কাঁঠালিয়া কৃষি অফিস জানায়, এ উপজেলায় এ মৌসুমে মিষ্টি আলুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৬ হেক্টর। উঁচু মাটি মিষ্টি আলু চাষের জন্য খুব উপযোগী। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাঠের পর মাঠ মিষ্টি আলু চাষে কাজ করছেন মিষ্টি আলু চাষিরা। মিষ্টি আলু চাষে চাষিদের সব প্রকার সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কচুয়া, সৈয়দপুর কচুয়া, লতাবুনিয়া, কচুয়া ও চেচঁরী রামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চেচঁরী, বানাইসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠ থেকে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় মিষ্টি আলুর লতা বপণ। ফাল্গুন মাসের প্রথম দিক থেকে মিষ্টি আলু মাটির নিচে পরিপক্ব হয় এবং এসব আলু তোলা শুরু হয়। চৈত্র ও বৈশাখ মাসে এখানকার মাঠে আবাদকৃত আলু তোলার জন্য আবারও ব্যস্ত হয়ে পড়বে মিষ্টি আলুর চাষিরা।
দক্ষিণ কচুয়া গ্রামের মিষ্টি আলুচাষি মো. সাব্বির হাওলাদার বলেন, এ মৌসুমে ৩৩ শতক জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। গত বছর প্রতি মণ মিষ্টি আলু পাইকারি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছিলাম। ৩৩ শতক জমিতে লতা রোপণ ও আলু তোলা পর্যন্ত মোট খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। এ বছর ভালো ফলন হলে লক্ষাধিক টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি।
দক্ষিণ কচুয়া এলাকার মিষ্টি আলুচাষি মো. ফজলু হাওলাদার বলেন, এ এলাকায় এই মৌসুমে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি মিষ্টি আলুর আবাদ হয়। চলতি মৌসুমে আমি ৩৩ শতক জমিতে আগাম মিষ্টি আলুর চাষ করেছি। এখন মাঝে মধ্যে নিজেই জমির পরিচর্যা করি। এবার মিষ্টি আলুর ফলন ভালো হবে আশা করছি। এ আলু বিক্রি করতে কোনো কষ্ট করতে হয় না। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে জমি থেকে আলু তোলার পর নিয়ে যায়।
চাষি মো. মোশারেফ হোসেন মোল্লা বলেন, ২০ শতাংশ জমিতে আগে অন্য ফসলের আবাদ করতেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফলন পেতেন না। এ বছর কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষি অফিস থেকে মিষ্টি আলুর বীজ সংগ্রহ করে আবাদ করেছেন। তিনি আশাবাদী এ সামান্য জমি থেকে প্রায় ৫০-৬০ মণের মতো আলু পাবেন। যেখানে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হবে।
তিনি আরও বলেন, মিষ্টি আলু রোপণের আগে জমি প্রস্তুত করতে পাওয়ার টিলার দিয়ে তিনটি চাষ করেছেন। এরপর জৈব সার, জিপসাম সার, ইউরিয়া, জিংক ও পটাশ দেয়া হয়। যেখানে গোবর ৪০ ভার (৮০ ঝুড়ি), জিপসাম সার ৩৫ কেজি, জৈবসার ৪০ কেজি, জমি চাষাবাদের আগে ও সেচের সময় দুই দফায় ইউরিয়া সার ৩০ কেজি, ডিএপি ৩০ কেজি এবং সেচ একবার।
এতে প্রায় চারা কেনাসহ সাড়ে ৬ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। জমি চাষের ১৫ দিন পর চারা রোপণ করা হয়। কৃষি অফিস থেকে মিষ্টি আলু বারী-৮ জাতের বীজ সংগ্রহ করা হয়।
কাঁঠালিয়া সদর ইউনিয়নের পশ্চিম আউরা গ্রামের চাষি নুরনবী তালুকদার বলেন, এটা মৌসুমী ক্ষেত। মাটিতে রস থাকলে একবার সেচ দিলেই হয়। এবার সফল হলে আবারও মিষ্টি আলু লাগাবো। আলু উঠানোর পর ওই জমিতে অন্য ফসল লাগানো হবে।
দক্ষিণ চেচঁরী গ্রামের চাষি মো. ছায়েদ আলী ফকির বলেন, কৃষি অফিস থেকে আমাদের মিষ্টি আলু চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আগামীতে আমরা পতিত জমিগুলোতে মিষ্টি আলুর আবাদ করবো।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, বাড়ির আশপাশে আনাচে-কানাচে ও পতিত জমিতে মিষ্টি আলু চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। অধিক পরিমাণ ফলন পেতে উন্নত জাতের ফসল উৎপাদনে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
কাঁঠালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরান বিন বলেন, মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ আছে। মিষ্টি আলু চাষে সময় লাগে কম এবং ফলনও ভালো হয়। প্রতি একরে প্রায় ১০০-১৩০ মণ পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে। এটি লাভজনক ফসল এবং দামও ভালো।