পাঁচ টাকার বিনিময়ে সেবা নিতে বরিশালের সদর হাসপাতালে প্রতিদিন শতশত রোগী ও তাদের স্বজনরা ভিড় জমায় । তবে এই সেবার অন্তরালে জেঁকে বসেছে দালালচক্র। তারা সরকারি হাসপাতালে আগত রোগীদের বিভ্রান্ত করে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা ক্লিনিকে পরীক্ষার নামে মোটা কমিশনের কারবার চালাচ্ছে।
সদর হাসপাতালের প্রবেশপথেই ১০-১২ জন নারীর একটি দল ঘোরাফেরা করে। এরা দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীদের বোঝাতে থাকে যে, এখানে সঠিক চিকিৎসা হয় না। তাদের বক্তব্যে কেউ বিভ্রান্ত হচ্ছেন, কেউবা ধমক দিয়ে তাড়াচ্ছেন। নতুন রোগী দেখলেই তারা ছুটে যায় এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছেন।ত
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই নারীচক্র বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পক্ষে কাজ করে এবং প্রতিটি রোগী নিয়ে যাওয়ার কমিশন পায় ১৫%-২০%। বরিশালের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, যেমন গেইন, পদ্মা, ও মমতাজ সেন্টারের মতো প্রতিষ্ঠানের হয়ে এদের সক্রিয় দালালি কারবার চালতে দেখা গেছে।
নারী চক্রের সদস্যদের দাবি, তাদের কাজ দালালি হলেও চিকিৎসকরাও তো ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কমিশন পেয়ে প্যাডে নির্ধারিত কেন্দ্রের নাম লিখে দেন। বরিশালের নামকরা একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্যাডে সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসকের সইসহ পরিক্ষা নির্দেশনার বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে দেখা যায়।
চিকিৎসক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর এই যোগসাজশ হতদরিদ্র মানুষদের মধ্যে হাসপাতালের সরকারি সেবা নিয়ে সন্দেহ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সদর হাসপাতালে মাত্র পাঁচ টাকায় টিকিট কেটে ডায়রিয়া, জলাতঙ্ক ভ্যাক্সিনসহ প্রাথমিক চিকিৎসা পাওয়া গেলেও অধিকাংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রোগীদের বাইরে যেতে হচ্ছে। ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি রোগীর আসা-যাওয়া। তবে আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও এক্সরের মতো পরীক্ষার সুযোগ না থাকায় রোগীদের বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে।
গাইনি ও শিশু বিভাগ বরাবরই রোগীর ভিড় বেশি। পাশাপাশি হাসপাতালের ভিড়ে কেবিন রোগীদের খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। এক কেবিন রোগীর স্বজনের দাবি, ১৩০ টাকার খাবার সরবরাহ করতে খরচ হয় ১৭৫ টাকা দাবি করা হলেও প্রকৃত খরচ তার থেকে কম।
পরিচ্ছন্নতা এবং নিরাপত্তা অভাব এখানকার রোগীদের প্রধান অভিযোগ। রোগীদের রাতের বেলা তালা মেরে রাখা হয় যাতে বাইরে থেকে কুকুর ঢুকে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি না করে। দিনের বেলাতেও কুকুরের আনাগোনা স্বাভাবিক।
নার্স মমতাজ বেগম বললেন,পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ একান্ত প্রয়োজন। নার্সিং সেবায় সমস্যা নেই, কিন্তু পরিচ্ছন্নতার ঘাটতি পুরো সেবা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
বরিশাল সদর হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, প্যাথলজিক্যাল সাপোর্ট, এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ঘাটতি আছে। তবে ১২ তলা ভবন নির্মাণের পর হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধা বাড়বে। নিরাপত্তা দেয়াল ও কর্মী নিয়োগের আবেদন করা হয়েছে।
দু-শো বছরের পুরোনো বরিশাল সদর হাসপাতাল এখনও দরিদ্র মানুষের জন্য ভরসার জায়গা। তবে বর্তমানের দালালচক্র, পরীক্ষা-নিরীক্ষার সীমাবদ্ধতা, এবং নিরাপত্তা সংকট দ্রুত সমাধান করা না হলে এই হাসপাতালের সুনাম ও কার্যকারিতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। জনগণের চাপ ও কর্তৃপক্ষের সক্রিয়তা হয়ত দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান নিয়ে আনা সম্ভব।