রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা বিএনপির সভাপতিসহ, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃত্বে ও মদদে অবৈধ সিগারেট, বাজার ফান্ড, পৌর টোল, বালুর মহাল দখল, মানুষকে জিম্মি করে টাকা নেওয়া, ঠিকাদারি কাজ বন্ধ করে চাঁদা আদায় করা, রাতের আধারে বিভিন্ন বাগানের গাছ কেটে নেওয়া’সহ নানান অভিযোগের বিষয় নিয়ে অবশেষে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ওমর আলীসহ যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবকদলের মোট নয় জনকে দল থেকে বহিস্কার করেছে রাঙামাটি জেলা বিএনপি।
১৫ তারিখে স্বাক্ষর করা তিনটি পত্রের মাধ্যমে এই পদক্ষেপ নিয়েছে দলটির নেতৃবৃন্দ। দলের দায়িত্বশীল সূত্র থেকে প্রাপ্ত পৃথক তিনটি পত্রের মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) মধ্যরাতে সংগঠনটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উক্ত বহিস্কারাদেশ পত্রে উল্লেখ করা হয়, দলের মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টি ও দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করাসহ দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগে বাঘাইছড়ি উপজেলা বিএনপির সভাপতি (১) মোঃ ওমর আলী, (২) উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মোঃ নুর উদ্দিন, (৩) পৌর যুবদলের সদস্য নুর কবির, (৪) উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম জিন্নাত, (৫) পৌর স্বেচ্ছাসেবকদলের আহবায়ক ইমরান হোসেন জুম্মান, (৬) কাচালং কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব সারওয়ার গাজী, (৭) পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক শাহাদাৎ মোল্লা, (৮) পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুর রহমান ও (৯) উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক আমির হোসেনকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত দলীয় সকল পদ-পদবী স্থগিত করা হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ ওমর আলীকে পৃথক পত্র এবং অপর আটজনকে আরেকটি পত্রের মাধ্যমে এই বহিস্কারাদেশ প্রদান করা হয়।
রাঙামাটি জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু নাছির ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ স্বাক্ষরিত উক্ত বহিস্কারাদেশ পত্রে উল্লেখ করা হয়; গত ১৩ ও ১৪ জানুয়ারী চট্টগ্রাম হতে প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, স্থানীয় বাঘাইছড়ি উপজেলা ও পৌর বিএনপি নেতৃবৃন্দের লিখিত অভিযোগ, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশীত সংবাদের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হয় যে, আপনারা দলের মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টি ও দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করাসহ দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত রয়েছেন।
এরূপ অপকর্ম হতে বিরত থাকার জন্য কেন্দ্রীয় ও রাঙামাটি জেলা বিএনপি'র পক্ষ হতে দলের সকল নেতাকর্মীকে বহু-বার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু আপনারা দলের দায়িত্বশীল পদে বহাল থেকে দলের সকল নির্দেশনা অমান্য করে এসকল গঠনতন্ত্র ও শৃংখলা বিরোধী কর্মকান্ড চালিয়ে দলীয় সুনাম ও দলীয় শৃংখলা নষ্ট করেছেন।
আপনারা দলের সকল নির্দেশনা অমান্য করে দলীয় গঠনতন্ত্র ও শৃংখলা বিরোধী কর্মকা চালিয়ে দলীয় সুনাম ও দলীয় শৃংখলা নষ্ট করায় আপনার সকল পর্যায়ের দলীয় সকল পদ পদবী ও পদের কার্যক্রম দলের গঠনতন্ত্রের ৫(গ) ধারা মোতাবেক অভ্যন্তরিণ শৃংখলা রক্ষার প্রয়োজনে পরবর্তি নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হইল। উক্ত সময়ে আপনি কোন প্রকার দলীয় কর্মকান্ডে অংশ গ্রহন ও দলীয় পদ পদবী ব্যবহার করিতে পারিবেন না।
এদিকে আরেকটি পত্রের মাধ্যমে উল্লেখ করা হয়, বাঘাইছড়ি উপজেলা বিএনপির সভাপতি ওমর আলী, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃত্বে ও মদদে অবৈধ সিগারেট, বাজার ফান্ড, পৌর টোল, বালুর মহাল দখল, মানুষকে জিম্মি করে টাকা নেওয়া, ঠিকাদারি কাজ বন্ধ করে চাঁদা আদায় করা, রাতের আধারে বিভিন্ন বাগানের গাছ কেটে নেওয়া’সহ বিভিন্ন প্রকার সংবাদ গণমাধ্যমে তুলে ধরা হয়।
এছাড়াও বিষয়টি নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মাধ্যমেও জেলা বিএনপিকে লিখিত অভিযোগ প্রদান করা হয়।
দলের জন্য বিব্রতকর ও মানহানীকর এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে উল্লেখিত অভিযোগ সমুহ সরেজমিনে তদন্ত ও স্বচ্ছতার সহিত যাচাই-বাছাই করে আগামী ৩০/০১/২০২৫ইং তারিখের মধ্যে অভিযোগের সত্যতার বিষয়ে লিখিত রিপোর্ট জেলা বিএনপি বরাবরে দাখিল করা জন্য একটি তদন্ত ও যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়।
রাঙামাটি জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ আবু নাছিরকে আহবায়ক করে উক্ত কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে, জেলা বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আলী বাবর, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শাকিল, এসএম শফিউল আজম, আব্দুল কুদ্দুছ। এই কমিটিকে আগামী ৩০ শে জানুয়ারীর মধ্যে জেলা বিএনপি বরাবরে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।