বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একটা রাজনৈতিক আকাক্সক্ষা তৈরি হচ্ছে। আমরা দেখেছি আমাদের প্রবীণ যে নেতৃত্ব রয়েছে, এই প্রবীণ নেতৃত্ব আমাদের তরুণ প্রজন্মের ভাষা বুঝতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের তরুণদের মনুষত্ব বুঝতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের তরুণদের কথা তারা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের তরুণদের চিন্তা এবং চেতনার সঙ্গে, আমাদের মনস্তত্ত্বের সঙ্গে তাদের যোজন যোজনের দূরত্ব রয়েছে। প্রবীণরা যেখানে চিন্তা করে মোবাইল চালানোই হচ্ছে ধ্বংসের কারিগর, আমরা দেখেছি এই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই আমাদের এই যে গণঅভ্যুত্থানের জোট তৈরি হয়েছিল।’
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে চারটায় চুয়াডাঙ্গা নাগরিক কমিটির আয়োজনে চুয়াডাঙ্গা শিল্পকলা একাডেমির মুক্তমঞ্চ চুয়াডাঙ্গা রাইজিং অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রবীণ রাজনীতিবিদরা ছিলেন আপসকালীন। আমরা দেখেছি আমাদের কাছে খবর আছে, কারা কারা তিনটা নির্বাচনে শেখ হাসিনার সঙ্গে আপস করেছে। কাদের সঙ্গে খুনি শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। কাদের কাদের সঙ্গে খুনি শেখ হাসিনা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। এই জিনিসগুলো কিন্তু আমাদের জানা রয়েছে। সুতরাং আপনারা যারা আওয়ামী লীগের বিচার বাদ দিয়ে, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের জন্য চিন্তা করছেন, আপনারা এই তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে আপনারা দালালি করছেন।’
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘কাদের কাদের আওয়ামী লীগের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল আমাদের জানা আছে। কেউ কেউ আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করার জন্য দালালি করছে। তারা আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থাকবে কি না, সেই চিন্তায় আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের শাস্তির বিষয়ে কিছু বলছে না। আমাদেরকে হাসিনা-আওয়ামী লীগ কিনতে পারে নাই। পার্লামেন্টে সিট দিয়ে আমাদের কিনতে পারবেন না। আমাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যে রাজৈনিক সচেতনতা তৈরি হয়েছে, তা ধরে রাখতে হবে। দয়া করে ক্ষমতামুখি হয়েন না। যারা ক্ষমতামুখি হয়েছেন, তাদেরকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসবে কি আসবে না, এই আলোচনা অনেক পরে। আগে খুনি হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামানের বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগের কমিটির লিস্ট ধরে ধরে বিচার করতে হবে। তারপর আলোচনা হবে, আওয়ামী লীগ নির্বাচন করবে কি করবে না। আগে বিচার নিশ্চিতের জন্য রাজৈনৈতিক দল থেকে দাবি তুলুন। আওয়ামী লীগ আমাদের দেশের টাকা লুট করে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।’
হাসনাত আব্দুল্লাহ ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই দেশের ছাত্র সমাজ যদি এক হয়ে কাজ করে, তবে এটি কোনোভাবেই স্বৈরাচারের কূটচাল চালানো শক্তির কাছে হারবে না। আওয়ামী লীগের অত্যাচারের শিকার হয়েছেন যারা, তাদের কথা কখনো ভুলে যাবেন না। এই ছাত্র-জনতা, যারা রাস্তায় প্রাণ দিয়েছে, তাদের আত্মত্যাগ আমাদের ভবিষ্যত গড়তে সহায়তা করবে। তিনি আরও বলেন, ‘আপনার আমার রাজনৈতিক বিভাজন প্রয়োজন নেই। পরবর্তী বাংলাদেশ আমরা নির্মাণ করব। আমাদের বিভক্তিতে ফ্যাসিস্টদের লাভ। আওয়ামী লীগের পুর্নবাসন ঠেকাতে আমাদের এক হয়ে থাকতে হবে।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রসঙ্গে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গাতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। উন্নয়নের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিকল্প নেই। চুয়াডাঙ্গাতে কোনো উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়নি। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা যে সরকারই আসুক, শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপা কিন্তু চুয়াডাঙ্গার পাশেই আছে। আপনাদের প্রতিরোধ করেই কিস্তু ওনাকে ঢাকায় যেতে হবে। টুক করে আপা কিন্তু ঢুকে পড়বে, খেয়াল রাখিয়েন। আওয়ামী লীগের আমলে তিনটা নির্বাচনে যে ভোট দিয়েছে, সে ৩০-৪০টা করে দিয়েছে। আবার যে দিতে পারেনি, সে একটাও পারেনি। গত ১৬ বছর আপনাদের নির্যাতনের মধ্যদিয়ে যেতে হয়েছে। গণহত্যার কারণে ইতিহাসে খুনি শেখ হাসিনার নাম লেখা থাকবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটিন আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্কের সভাপতিত্বে এবং সদস্যসচিব সাফফাতুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম, জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সেল সদস্য মোল্লা এহসান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক বাবু খান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মেহেরপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ, কুষ্টিয়া জেলা সদস্যসচিব মুস্তাফিজুর রহমান, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য এসএম আসরাফ সুইট প্রমুখ।