খেলাফত আরবি শব্দের আভিধানিক অর্থ প্রতিনিধিত্ব বা প্রতিনিধির পদ। অন্য অর্থে- ক. ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার মূলনীতি ও খ. ইসলামি শাসন সংস্থা।
খেলাফত থেকেই খলিফা শব্দের উদ্ভব, যার অর্থ খেলাফত সংগঠনের সর্বোচ্চ পদাধিকারী, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি, জাতির ইহলৌকিক ও পারলৌকিক বিষয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত নেতা বা আমিরুল মুমিনিন।
খোলাফায়ে রাশিদিন (হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.), হজরত উমর (রা.), হজরত উসমান (রা.) ও হজরত আলী (রা.)-এই চার খলিফা) মোটামুটি এ নীতির ওপর নির্বাচিত ছিলেন।
চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.)-এর মৃত্যুর পর মুসলমানদের মধ্যে খেলাফত নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। হজরত মুয়াবিয়া (আ.) নিজের ছেলে ইয়াজিদকে তার উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করার মাধ্যমে কার্যত খেলাফতের অবসান ঘটান ও বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও পরবর্তী শাসকেরা নিজেদের খলিফা ও তাদের শাসনকে খেলাফত নামে অভিহিত করতেন।
১৯২৪ সালে কামাল আতাতুর্ক খলিফার পদও বিলুপ্ত করেন এবং উসমানীয় বংশের সব লোককেই নির্বাসনে পাঠান। এক বছর পর আরবে বাদশাহ হুসেন ইবনে আলী নিজেকে খলিফা বলে ঘোষণা করেন। কিন্তু ইবনে সৌদ তাকে তা ত্যাগ করতে বাধ্য করেন। এভাবে মুসলিম বিশ্বে খেলাফতের অবসান ঘটে।
হজরত মোয়াবিয়া (রা.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত উমাইয়া বংশীয় খলিফারা দামেস্কে অধিষ্ঠিত ছিলেন। খারেজি ও শিয়ারা তাদের স্বীকৃতি দেননি। ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে আব্বাসীয় বংশ খেলাফত অধিকার ও বাগদাদে তাদের রাজধানী স্থাপন করেন। কিন্তু উমাইয়া বংশীয়দেরই একজন প্রথম আবদুর রহমান স্পেনে পালিয়ে গিয়ে ৭৮০ সালে কর্ডোভার একটি আমিরাত স্থাপন করেন, যা পরে কর্ডোভার খেলাফত বা পাশ্চাত্য খেলাফত নামে পরিচিতি লাভ করে। এটি ১০০১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
মুসলমানদেরই আরেকটি দল (শিয়া) ফাতিমীয় বংশ উত্তর আফ্রিকায়, বিশেষত মিসরে, ৯০৯-১১৭১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত খেলাফত পরিচালনা করেন। হালাকু খানের নেতৃত্বে মঙ্গোলীয়রা বাগদাদে প্রবেশ করলে আব্বাসীয় শাসকেরা মিসরে পালিয়ে যান ও সেখানে নামমাত্র খেলাফত টিকিয়ে রাখেন। পরে ১৫১৭ খ্রিষ্টাব্দে উসমানীয়-তুর্কি বংশ মিসর দখল করে এবং এই বংশের সুলতান প্রথম মুসলিম খলিফা পদবি গ্রহণ করেন।
সর্বশেষ উসমানীয় সুলতান ষষ্ঠ মোহাম্মদ (১৯১৮-২২) পর্যন্ত এই শাসকেরাই খলিফা উপাধি ধারণ করতেন।
১৯২২ সালে কামাল আতাতুর্ক ষষ্ঠ মোহাম্মদকে ক্ষমতাচ্যুত, সুলতানের পদ বিলুপ্ত ও তুরস্ককে প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করেন। ষষ্ঠ মোহাম্মদ পালিয়ে যান ও নির্বাসনে তার মৃত্যু হয়। দেশত্যাগের পর তাকে খলিফার পদ থেকে অপসারণ করা হয়। তার জ্ঞাতি ভাই আবদুল মজিদ খলিফার পদবিতে তার স্থলাভিষিক্ত হন।
১৯২৪ সালে কামাল আতাতুর্ক খলিফার পদও বিলুপ্ত করেন এবং উসমানীয় বংশের সব লোককেই নির্বাসনে পাঠান। এক বছর পর আরবে বাদশাহ হুসেন ইবনে আলী নিজেকে খলিফা বলে ঘোষণা করেন। কিন্তু ইবনে সৌদ তাকে তা ত্যাগ করতে বাধ্য করেন। এভাবে মুসলিম বিশ্বে খেলাফতের অবসান ঘটে।