মক্কার মসজিদে হারাম ও মদিনার মসজিদে নববি ইসলামের পবিত্রতম স্থান। এই দুই স্থানের মর্যাদা, পবিত্রতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেগুলোর ওপর কঠোরভাবে ‘নো-ফ্লাই জোন’ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। নো ফ্লাই জোন ঘোষণার অর্থ হলো- সেখানে সব ধরনের উড়োজাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ।
মসজিদে হারাম ইসলামের পবিত্রতম মসজিদ, যেখানে রয়েছে পবিত্র কাবা। এটি মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক। প্রতিবছর লাখ-লাখ মুসলিম এখানে হজ-ওমরা পালন করতে আসেন।
বিজ্ঞাপন
মসজিদে নববি মদিনায় অবস্থিত। এটি ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্র মসজিদ। এখানে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা শরিফ অবস্থিত, যা মুসলমানদের জন্য গভীর আধ্যাত্মিকতার স্থান৷
মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববির ওপর দিয়ে উড়োজাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
প্রথম বিষয় হলো- নিরাপত্তা, শান্তি ও স্থিতি বজায় রাখা। উড়োজাহাজের শব্দ দূষণ বা কম্পন যেন ইবাদত-বন্দেগিরত মুসল্লিদের মনোযোগ নষ্ট না করে। আর এ পবিত্রতম স্থানের পবিত্রতা বজায় থাকে।
তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও বড় কারণ। সম্ভাব্য দুর্ঘটনা বা ঝুঁকি এড়ানোর জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সেই সঙ্গে পবিত্রতা রক্ষা করা। আকাশে যেকোনো ধরনের দূষণ বা বিঘ্ন যেন পবিত্র স্থানগুলোর পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে এটাও লক্ষ্য রাখা হয় শতভাগ।
উড়োজাহাজ নিয়ন্ত্রণের জন্য আধুনিক রাডার ও নজরদারি ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়। পাইলট, উড়োজাহাজ সংস্থা ও এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় করে এসব বিধিনিষেধ মানা হয়। কোনো উড়োজাহাজ এই এলাকায় ঢুকলে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববির পবিত্রতা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য আকাশপথে কঠোর নিয়ম-কানুন মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিধিনিষেধ শুধু নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং এটি এসব স্থানের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্বের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক। -ইসলামিক ইনফরমেশন অবলম্বনে
পবিত্র হজ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ব্যাংকগুলোর সব শাখাসমূহে আগামী ১৫ ডিসেম্বর অফিস সময়ের পরেও খোলা রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ২০২৫ সনের হজের নিবন্ধন কার্যক্রম ১৫ ডিসেম্বর শেষ হবে। হজযাত্রীগণের নিবন্ধনের অর্থ জমাদানের স্বার্থে ওইদিন সারা দেশে হজের অর্থ গ্রহণকারী সকল ব্যাংকের শাখাসমূহ অফিস সময়ের পরেও খোলা রাখা প্রয়োজন।
বর্ণিতাবস্থায়, ১৫ ডিসেম্বর সারা দেশে হজের অর্থ গ্রহণকারী ব্যাংকের শাখাসমূহ অফিস সময়ের পরেও যতক্ষণ অর্থ জমাদানকারী থাকেন ততক্ষণ পর্যন্ত হজের নিবন্ধনের অর্থ গ্রহণের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের হজের জন্য গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় প্রাথমিক নিবন্ধন। নিবন্ধনের শেষ সময় ছিল ৩০ নভেম্বর। কিন্তু কাঙ্খিত সাড়া না মেলায় এক দফা সময় বাড়ানো হলো।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে হজ ব্যবস্থাপনা পোর্টালে দেওয়া তথ্যমতে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত মাত্র ৪০ হাজারের মতো হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এবার বাংলাদেশ থেকে একলাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে ১০ হাজার ১৯৮ জন সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং বাকি একলাখ ১৭ হাজার হজযাত্রী যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে।
২০২৪ সালের হজে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের বিপরীতে হজে গিয়েছিলেন ৮৫ হাজার ২৫৭ জন। ৪১ হাজার ৯৪১ জনের কোটা ফাঁকা ছিল।
হজ নিবন্ধনে সাড়া না মেলার কারণ সম্পর্কে বেশ কয়েকজন হজ এজেন্সির মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হজের প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য যে টাকাটা এবার ধরা হয়েছে, সেটা অনেক বেশি। অন্য বছর শুরুতে শুরু ফ্লাইটের ভাড়ার টাকাটা দিয়েই প্রাথমিক নিবন্ধন করা যেত। এবার এটা তিন লাখ টাকা ধার্য করার জন্য একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে।
হজ এজেন্সি মালিকদের আশঙ্কা, হজের চূড়ান্ত নিবন্ধনের জন্য নতুন কৌশল বের না করলে; এবার হজযাত্রী ৫০ হাজারের বেশি হবে না। তার বলছেন, মানুষ মনে করে নিয়েছে যে- হজ অসাধ্য বিষয়, এটা সামর্থ্যের বাইরে চলে গেছে। তবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা প্রয়োজন। মানুষ এখন উমরা করে চলে আসে। উমরা করলে যে তার ফরজ আদায় হচ্ছে না, সেটা প্রচার-প্রচারণার বিষয় আছে।
হজযাত্রী নিবন্ধনের প্রচার-প্রসারে এবার তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। কারণ বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এ বর্তমানে কোনো কমিটি নেই। সেখানে প্রশাসক বসানো হয়েছে। এজেন্সি মালিকরা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে চলছেন। নিজেদের মতো করে প্যানেল গুছানোর লক্ষে কাজ করছেন, ফলে প্রচার-প্রচারণার কাজে কেউ দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসছেন না। এমনকি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে নানা বিষয়ে দেন-দরবার ও সমন্বয়ের ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে ঘাটতি।
৬৪২ মিটার উঁচু জাবালে নুর বা নুর পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত হেরা গুহা। ইসলামের ইতিহাসে নুর পর্বতের ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে।
এটি পবিত্র কাবাঘর থেকে ৪ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। এখানেই নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে হজরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে প্রথম অহি এসেছিল। অহি আসা শুরুর আগে দীর্ঘ সময় তিনি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে এই গুহায় এসে ইবাদতে মগ্ন থাকতেন।
গুহাটি খুবই ছোট, এর দৈর্ঘ্য হচ্ছে চার গজ এবং প্রস্থ পৌনে দুই গজ। এর নীচ দিকটা তেমন গভীর নয়। এখানে একসঙ্গে ৪-৫ জন মানুষ বসতে পারে।
জায়গাটি ইতিহাসে হেরা পর্বত নামে পরিচিত হলেও পরবর্তী সময়ে এর নাম জাবালে নুর বা আলোর পর্বত করা হয়। কারণ এখানেই পবিত্র কোরআনের প্রথম আয়াত নাজিল হয়েছিল, যার মাধ্যমে পুরো পৃথিবী আলোকিত হয়েছিল।
হেরা গুহা দেখতে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। কিন্তু সেখানে ওঠা খুব সহজ নয়। পাহাড়টি দেখতে উটের কুঁজের মতো। পাহাড়টিতে অনেকগুলো খাড়া ঢাল রয়েছে। যেখানে ওঠতে শক্তিশালী ও সামর্থবান মানুষের প্রায় ১ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। প্রায় ১০০০ ফুট উচ্চতার ভয়ংকর পথ পাড়ি দিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় ওঠতে বেশ কয়েকবার বিশ্রাম নিতে হয়।
সমতল ভূমি থেকে পাহাড়ের ওপরের দিকে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ ফুট পথ গাড়িতে যাওয়া যায়। সেখান থেকে ৮৯০ ফুট উচ্চতায় হেরা গুহা অবস্থিত। হেরা গুহায় যেতে আরও প্রায় ১০০ ফুট রাস্তা পাড়ি দিতে হয়।
কেননা পাহাড়ের চূড়া থেকে বিপরীত দিকে একটু নিচে অবস্থিত হেরা গুহায় যাওয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। হেরা গুহাটি পাহাড়ের সর্বোচ্চ চুড়ায় না হলেও সেখানে যেতে হলে পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় ওঠতে হয়। সেখানে ওঠা ছাড়া হেরা গুহায় যাওয়ার কোনো বিকল্প পথ নেই।
পবিত্র হজ ও উমার পালনকারীরা নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্মৃতিবিজড়িত এ পাহাড় ও গুহা দেখতে যায়। এবার সেখানে যাওয়া সহজ করতে ক্যাবল কার সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে সৌদি আরব। যেন মানুষ আরও সহজে সেখানে যেতে পারে। সৌদি আরবের আশা ২০২৫ সাল নাগাদ এই সেবা চালু হবে।
হেরা গুহা যেখানে অবস্থিত সেটিকে সাংস্কৃতিক বিভাগ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে সৌদি সরকার। ক্যাবল কার সিস্টেম তৈরির বিষয়টি এই পরিকল্পনারই অংশ।
হালাল পণ্যের বাজার প্রসারে ও হালাল ইকোসিস্টেম উন্নয়নে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া একসঙ্গে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন দুই দেশের কর্মকর্তারা। হালাল সনদ প্রদানে ইসলামিক ফান্ডেশনের দক্ষতা বৃদ্ধিতে এ প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করে দুই দেশ। রিভার্স লিংকেজ প্রজেক্টটি দেশকে আন্তঃসংযোগের মাধ্যমে হালাল ইকোসিস্টেম উন্নয়নের ক্ষেত্রকে ত্বরান্বিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সমর্থ হবে বলে মতবিনিময় সভায় বক্তারা অভিমত দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হালাল সনদ বিভাগের সঙ্গে সিরুনাই মালয়েশিয়া এবং ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের প্রতিনিধিদলের মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
ডায়াগনস্টিক মিশন হালাল ইকোসিস্টেম উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার মধ্যে রিভার্স লিংকেজ প্রজেক্টের বিভিন্ন দিক নিয়ে সভায় আলোচনা হয়।
বক্তারা বলেন, প্রকল্পটি বাংলাদেশের বর্তমান হালাল ইকোসিস্টেমকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ থেকে প্রাসঙ্গিক জ্ঞান, প্রযুক্তি এবং দক্ষতা বিনিময়সহ দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অন্বেষণের মাধ্যমে সহযোগিতার সুযোগ চিহ্নিত করে হালাল বাজারকে প্রসারিত করবে।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন হালাল সনদ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মো. আবু ছালেহ পাটোয়ারী।
সভায় উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব এবং গ্লোবাল ইভেন্টের প্রকল্প পরিচালক ইন্তান সুরিয়া রামলি, সেরুনাই হালাল সেন্টার অফ এক্সিলেন্সের প্রধান উস্তাজ মোহাম্মদ জাবাল, সেরুনাই হালাল সেন্টার অফ এক্সিলেন্সের ম্যানেজার এ এন নাবিল জারিনি প্রমুখ।
এ ছাড়া সভায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, মৎস ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশসহ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের আল জাজিরা অঞ্চলে অবস্থিত আর রাজি মসজিদ। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ মসজিদটি দেখতে ছুটে আসেন। আর রাজি মসজিদ শায়খ সোলায়মান বিন আবদুল আজিজ আল রাজি নির্মাণ করেন, এটা ২০০৪ সালে উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন রিয়াদ প্রদেশের তৎকালীন গভর্নর বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আলে সৌদ।
বুলেটপ্রুফ মসজিদ কেন? আর রাজি মসজিদটি সুরক্ষার চাদরে ঘেরা। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণেই তাকে ‘বুলেটপ্রুফ মসজিদ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বিশেষভাবে সুরক্ষিত ও ব্যতিক্রমী স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত এ মসজিদ। নামাজের সময়গুলোতে মুসল্লিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ প্রযুক্তিতে গড়ে তোলা হয়েছে এটি। অত্যাধুনিক সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এ মসজিদে।
মসজিদটি ১৩,২৬০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে নির্মিত। যার মোট বিল্ডিং এরিয়া ৪৩,৫৬৮ বর্গমিটার। মসজিদের নকশায় আছে আন্দালুসীয় স্থাপত্যের ছোঁয়া। মসজিদের দুটি মিনার। প্রতিটির উচ্চতা ৫৫ মিটার। প্রধান গম্বুজটির ব্যাস ২৮.৮ মিটার। এটি ভূমি থেকে ৩৭ মিটার ওপরে অবস্থিত। মসজিদের কেন্দ্রীয় অভ্যন্তরীণ হলটির উচ্চতা ২৫ মিটার, যা কাচের ছাদ দ্বারা আচ্ছাদিত, ফলে প্রাকৃতিক আলো ভেতরে প্রবেশ করে। এ ছাদটিও কিন্তু বুলেটপ্রুফ।
মসজিদের বৈশিষ্ট্য মসজিদটির বিস্তৃত এলাকা নানা ধরনের ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত হয়। ধর্মীয় এই প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক সেবা প্রদান করা হয়। নামাজের মূল স্থানটি ৩৬০০ বর্গমিটারজুড়ে বিস্তৃত। পুরুষদের জন্য নামাজের স্থান তিন তলা। যেখানে প্রায় ১৮ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। নারীদের জন্য দুই তলাবিশিষ্ট আলাদা নামাজের জায়গা আছে। যেখানে প্রায় আড়াই হাজার জন নামাজ আদায় করতে পারেন।
আর রাজি মসজিদের গ্রন্থাগারটি একটি গবেষণাগার হিসেবে পরিচিত। এখানে গবেষকরা ও শিক্ষার্থীরা গবেষণার কাজ করেন। এখানে বিভিন্ন ভাষার প্রায় ৬৭ হাজার বই আছে। ইসলামি ফিকাহ, সাহিত্য, প্রয়োগিক বিজ্ঞান, সংস্কৃতি বিষয়ক বই আছে এখানে। গ্রন্থাগারটি ইন্টারনেট ব্রাউজিং ও ই-বুকসমৃদ্ধ। গ্রন্থ পাঠের আধুনিক ডিভাইসও রয়েছে এখানে। ছোট শিশুদের জন্যও একটি পৃথক সেকশন রয়েছে। যেখানে ছোটরা খেলাধুলা করে জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। আনন্দ বিনোদন নিতে পারেন।
মসজিদের অন্যান্য সুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে- গণমাধ্যম অফিস, সেবা প্রতিষ্ঠান, জরুরি সেবা প্রদানসহ আরও অনেক কিছু। এছাড়া মসজিদে একটি হল, বিশিষ্ট অতিথিদের জন্য একটি অভ্যর্থনা কক্ষ। মৃতদের পরিবারের জন্য আলাদা একটি অভ্যর্থনা কক্ষ রয়েছে। মৃতদের জানাজা পড়ার আলাদা ব্যবস্থা। মৃতদের রাখার আলাদা ফ্রিজিং সেকশন।
মৃতদেহ গোসলের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত আধুনিক গোসলখানা। এখানে একসঙ্গে ১১টি মৃতদেহের কাফন পরানোর ব্যবস্থা রয়েছে। পুরুষ নারীদের আলাদা ব্যবস্থা। ছয়টি পুরুষের জন্য, পাঁচটি নারীদের জন্য। এছাড়াও দুর্ঘটনা বা পচনশীল দেহের জন্য একটি পৃথক গোসলখানারও ব্যবস্থা রয়েছে। আধুনিক সব ব্যবস্থাপনায় সুসজ্জিদ এ মসজিদ।
মসজিদে বড় ধরনের অনুষ্ঠান কার্যক্রম ও বিপুল পরিমাণে আগত মেহমানের সেবা প্রদানের জন্য বহুতল বিশিষ্ট পার্কিং ব্যবস্থা নির্মাণ করা হয়েছে। এ পার্কিং এলাকা প্রায় ২১০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এতে প্রায় ৩৫০টি গাড়ি পার্ক করার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া মসজিদের চারপাশে আরও ৩৫০টি গাড়ির পার্কিং এরিয়া রয়েছে।
মসজিদের কার্যক্রম মসজিদে কোরআন মুখস্থ, তেলাওয়াত ও তাজবিদ শিক্ষার জন্য প্রায় ৪০টি ক্লাস পরিচালিত হয়। যেখানে প্রতিবছর প্রায় ৩৭৮ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। প্রতিবছর ৫৬ জনের বেশি শিক্ষার্থী কোরআন মুখস্থ সম্পন্ন করেন। প্রায় ১১৭ জন শিক্ষার্থী সার্টিফিকেট অর্জন করেন।
এ ছাড়া মসজিদে দারুল বায়ান নামে নারীদের জন্য একটি ইনস্টিটিউট রয়েছে। সব বয়সের নারীদের কোরআন তেলাওয়াত, তাজবিদ ও মুখস্থের শিক্ষা দেওয়া হয়। ইনস্টিটিউটটি প্রতি বছর প্রায় ২৩টি ক্লাস পরিচালনা করে। প্রায় ৩৯৮ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। প্রতিবছর প্রায় ৬৩ জন নারী শিক্ষার্থী কোরআন মুখস্থ সম্পন্ন করেন। প্রায় ১৪ জন নারী শিক্ষার্থী সার্টিফিকেট অর্জন করে।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দাওয়াহ ও ইসলামিক শিক্ষার প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, মসজিদে একটি বৈশ্বিক অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন কেরাতসহ কোরআন মাজিদ শিক্ষা প্রদান করে। প্রতিবছর প্রায় ১০২২ জন শিক্ষার্থী এতে অংশগ্রহণ করেন।
মসজিদ পরিচালনা কর্তৃপক্ষের অধীনে একটি সমন্বিত ইলেকট্রনিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদের সব কেন্দ্রীয় ও পরিচালনা ইউনিট পর্যবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের বাইরে কাজ করে। মসজিদের সাউন্ড সিস্টেম উন্নত এক্সোস্টিক ইঞ্জিনিয়ারিং স্ট্যান্ডার্ডে পরিচালিত হয়। এতে একটি সমন্বিত পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা রয়েছে।
নির্মাণ খরচ এ ব্যতিক্রমী মসজিদটি মধ্যপ্রাচ্যের এক বিস্ময় স্থাপনা হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মুসলিম পর্যটকদের ব্যাপক আগমন ঘটে এখানে। প্রায় ৫ মিলিয়ন ডলার খরচে নির্মিত হয় এ মসজিদ। কাঁচ, লোহার সংমিশ্রণ ও নিরাপত্তার বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যার মাধ্যমে একে বুলেটপ্রুফ করে তুলেছে। মসজিদটির নির্মাণে ব্যয়বহুল উপাদান ব্যবহার ও জটিল স্থাপত্য পরিকল্পনা থাকায় এতে প্রচুর সময় ও শ্রম ব্যয় হয়েছে। মুসল্লিদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মসজিদটি বুলেটপ্রুফ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
মসজিদের ইমাম-খতিব মসজিদে একসঙ্গে প্রায় ৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায়ে সক্ষম। শুক্রবার ও ঈদের সময়ে এখানে বিপুল সংখ্যক মানুষ একত্রিত হয়। মসজিদের ইমাম হিসেবে রয়েছেন শায়খ আহমাদ আল কাহতানি। স্থানীয়দের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় শায়খ কাহতানি ধর্মীয় ও সামাজিক বিষয়ে প্রভাবশালী বক্তা। তার খুতবা শোনার জন্য মুসল্লিরা অনেক দূর থেকে এখানে আসেন।
মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শায়খ আবদুল করিম আল হাশেমি। তার খুতবায় সমাজের নৈতিকতা, আদর্শ, পারিবারিক বন্ধনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়। মুসল্লিরা তার বয়ান শোনার জন্য আগ্রহী থাকেন। খতিব হিসেবে প্রায় ৮ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন।
স্থাপত্য ও প্রকৌশলী মসজিদের স্থপতি ছিলেন খ্যাতিমান প্রকৌশলী মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের আধুনিক স্থাপত্যের একজন সেরা প্রতিভা। নিরাপত্তার দিকটি প্রাধান্য দিয়ে এমন একটি নকশা তৈরি করেছেন, যা সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি সুরক্ষিত। মসজিদের দেয়ালে ব্যবহৃত হয়েছে উচ্চমানের বুলেটপ্রুফ গ্লাস ও স্থাপত্যে মার্জিত ইসলামিক শিল্পশৈলীর নিদর্শন রয়েছে।
এই বুলেটপ্রুফ মসজিদ শুধু নিরাপত্তার চিহ্ন নয়, এটি স্থানীয় মুসলিম সমাজের প্রাণের একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। মসজিদটি শুধু স্থাপত্যের দিক থেকে অনন্য- তা নয়, বরং এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি প্রশান্তিময় স্থান, যেখানে তারা নির্ভয়ে ইবাদত করতে পারেন।