'আদিবাসী' শব্দ বাতিলের প্রতিবাদে গ্রাফিতি অংকন
'এনসিটিবি' কর্তৃক ৯ম-১০ম শ্রেণীর বাংলা দ্বিতীয় পত্র কর্তৃক পাঠ্যপুস্তক থেকে আদিবাসী শব্দ বাতিল করার প্রতিবাদে সংক্ষুব্ধ ছাত্র জনতার উদ্যোগে গ্ৰাফিতি অংকন করা হয়।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) মধ্যরাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জগন্নাথ হল ও রোকেয়া হল সংলগ্ন বিভিন্ন দেওয়াল ও রাস্তায় গ্ৰাফিতি অংকন করে সংক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, সারা বাংলাদেশে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি যেভাবে দখলদারিত্বের কবলে চলে যাচ্ছে তা সম্পর্কে সাধারণ জনগণের যাতে সচেতনতা সৃষ্টি না হয় বরং আদিবাসী জনগোষ্ঠী সম্পর্কে যাতে সাধারণ জনগণ ভুল এবং বিকৃত তথ্য জানতে পারে, এই ধরণের মিথ্যা প্রচার প্রচারণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠি স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি।
মূলত আদিবাসী শব্দের মূল অর্থ এবং আদিবাসী শব্দের সঠিক ইতিহাস না জেনে, আদিবাসী শব্দটিকে এই উগ্র জনগোষ্ঠী অন্য খাতে প্রবাহিত করে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে আদিবাসী শব্দটি নিয়ে একটি বিভ্রান্তি এবং ধোঁয়াশা সৃষ্টি করছে।
তিনি আরও জানান, পাঠ্যপুস্তকের পিছনে জুলাই গণ অভ্যুত্থানের একটি গ্রাফিতির ছবি যেখানে আদিবাসী শব্দটি আছে সেটি বাদ দেয়ার জন্যে এই উগ্র গোষ্ঠী যে উগ্রতা দেখাল তার বিরুদ্ধে আসলে তীব্র নিন্দা জানিয়ে আমরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছি।
বাংলাদেশ কোনো একক জনগোষ্ঠীর, একক ধর্মের এবং একক জাতির দেশ না। আদিবাসী শব্দটি বাতিলের মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষের অস্তিত্ব কে অস্বীকার করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেই উগ্র সাম্প্রদায়িক জনগোষ্ঠী। কিন্তু আমরা আমাদের জাতিগত অস্তিত্বের বিষয়ে কোনো ভাবে আপোষ করব না।
শান্তিময় চাকমা বলেন, কিছুদিন আগে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি নামে যে উগ্ৰ সাম্প্রদায়িক সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে NCTB তার পাঠ্যবই থেকে আদিবাসী শব্দটি বাদ দিয়েছে, তারই প্রতিবাদে আমাদের এই গ্ৰাফিতি অংকন।
ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের ক্ষেত্রে জন্য যে আন্দোলন সেখানে এই আদিবাসী গ্রাফিতি ব্যবহার করা হয়েছে এবং একই সাথে অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে আদিবাসী বলে সম্বোধন করেছেন।
কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের এই পাঁচ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর স্টুডেন্ট ফর সোবারেন্টি নামক উগ্ৰ সংগঠনের যে দাবি তা কি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে উদ্দেশ্যে তার সাথে সাংঘর্ষিক না? তাদের এই ভিত্তিহীন দাবিটি কি প্রধান উপদেষ্টা যে আদিবাসী বলে সম্বোধন তাকে অপমানিত করছে না?
আমরা চাই পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে আমাদের আদিবাসীর ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হোক। আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে ১৫ জানুয়ারি NCTB ভবন ঘেরাও করা হবে। এবং সেখানে আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।
লিটন ত্রিপুরা বলেন, সম্প্রতি ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর বাংলা দ্বিতীয় প্রত্রের বইয়ে আদিবাসী শব্দ নতুন সংস্করণ বইয়ে সংযোজন করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু উগ্রবাদী শিক্ষার্থী স্টুডেন্টস ফর সবেরেন্টি নামক ব্যানারে NCTB অফিস ঘেরাও করে আদিবাসী শব্দ একটি রাষ্ট্রদ্রোহী বলে আখ্যা দিয়ে আদিবাসী শব্দটি জোর পূর্বকভাবে সরাতে বাধ্য করে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে।
আজকে এই রাতের গ্রাফিতির মাধ্যমে আমরা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে বারবার সংঘটিত হওয়া রাষ্টীয় ষড়যন্ত্রের নকশাকে ভেঙে দিয়ে ইনক্লুসিভ জনকল্যাণমুখী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্য বর্তমান সরকারের কাছে জোর দাবি করছি। অধিকন্তু বিয়োজন করা আদিবাসী শব্দটি পুনরায় সংযোজন করে দেশটি সকল মানুষের, সকল জনগোষ্ঠীর ,সকল ধর্ম -বর্ণের জন্য বলে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে প্রমাণ করাটা আসলেই আমাদের একমাত্র দাবি।