‘পথের পাঁচালি’র দুর্গা আর নেই
বাংলা সিনেপ্রেমীদের জন্য অত্যন্ত দুঃখের খবর! অস্কারজয়ী একমাত্র বাঙালী নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী সিনেমা ‘পথের পাঁচালি’ দেখেননি বা এই সিনেমার কথা শোনেননি এমন দর্শক খুব কম আছে।
এই ছবি যারা দেখেছেন তারা নস্টালজিয়ায় ভোগেন ক্ল্যাসিক ‘দূর্গা’ চরিত্রটি নিয়ে। হাত ধরে ক্ষেত দিয়ে ছুটে যাচ্ছে দুই ভাই-বোন। অথবা সেই বৃষ্টিতে ভেজার দৃশ্য, গ্রামের বৃষ্টিতে মন জুড়নো সেই ছবি। অথবা সেই মায়ের কাছে মার খাওয়ার দৃশ্য। প্রত্যেকটা দৃশ্যকেই জীবন্ত করে তুলেছিলেন ‘দুর্গা’ চরিত্রের শিশুশিল্পী উমা দাশগুপ্ত। সেই ছোট্ট দূর্গা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বড় হয়েছেন, বার্ধক্য তাকে ঘিরে ধরেছিলো।
কিন্তু আজ একেবারেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন প্রয়াত হয়েছেন পথের পাঁচালির ‘দুর্গা’, উমা দাশগুপ্ত। আজ (১৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে আটটার পর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
সপ্তাহখানের ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই থিয়েটার করতেন উমা দাশগুপ্ত। স্কুলে পড়ার সময় তার অভিনয় দেখেই সত্যজিৎ রায় তাকে। বেছে নিয়েছিলেন পথের পাঁচালির দুর্গার চরিত্রটির জন্য। প্রথম ছবিতে অভিনয় করেই বাংলা সিনেমার ইতিহাসে জায়গা করে নেন তিনি। তবে সিনে-দুনিয়ার লাইম লাইট থেকে দূরে থাকতেই পছন্দ করতেন উমা দাশগুপ্ত।
কয়েক বছর আগে ক্যানসার হয়েছিল উমা দাশগুপ্তের। চিকিৎসা চলছিল। প্রাথমিকভাবে তিনি সাড়াও দিয়েছিলেন চিকিৎসায়। সুস্থ হয়ে ফের শুরু করে স্বাভাবিক জীবন যাপন। তবে কয়েক বছর আগেই আবার ফিরে আসে মারণ-রোগ। আর লড়াইয়ে পেরে ওঠেননি উমা। ক্যান্সারের কাছে হার মানলেন তিনি। প্রথম ছবির পরে আর রুপোলি পর্দায় দেখা যায়নি তাকে। রূপোলি পর্দা থেকে দূরে থাকতেই পছন্দ করতেন অভিনেত্রী। নিজের মতো করে জীবন সাজিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। সংসার করতেন। কন্যসন্তান ছিল তার।
এর আগে একাধিকবার উমা দাশগুপ্তের মৃত্যুর ভুয়া খবর ছড়িয়েছে। শোনা গিয়েছিল তিনি নাকি বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন। তবে সেই সমস্ত খবর বানোয়াট। কিন্তু এবার সত্যি হল তার মৃত্যুর খবর। যে অভিনেত্রী মাত্র ১৪ বছর বয়সে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়ার জন্য কেবল একটি সিনেমাই যথেষ্ট, আজ প্রয়াত হলেন সেই কিংবদন্তি।