জনপ্রিয় ফ্যাশন ডিজাইনার সাজু আর নেই

  • মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের হাত থেকে গত বছরের নভেম্বরে পুরস্কার গ্রহণ করেন মেসবাহ আলম সাজু

জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের হাত থেকে গত বছরের নভেম্বরে পুরস্কার গ্রহণ করেন মেসবাহ আলম সাজু

ফ্যাশন অঙ্গনে সুপরিচিত নাম মেসবাহ উল আলম সাজু। আর ক্রেতাদের মাঝে জনপ্রিয় তার দেশি পোশাকের ব্র্যান্ড ‘ম্যাকয়্’। ব্র্যান্ডটি মানসম্মত পোশাকের জন্য দ্রুত পরিচিতি পায়। সাজুও এক এক করে বাঁড়াতে থাকেন তার শো রুমের সংখ্যা।

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন সাজু। দেশিয় পোশাকের সেরা ডিজাইনারের পুরস্কার মানেই যেন সাজু, বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। শুধু পুরস্কার পেয়েই সন্তুষ্ট ছিলেন না এই মেধাবী মানুষটি।

বিজ্ঞাপন

প্রতিনিয়ত নিজের ব্র্যান্ডের পরিসর বড় করার কথা ভাবতেন। এ নিয়ে তার ছিলো হাজারও পরিকল্পনা। কোনটি বাস্তবায়ন হয়েছে, কোনটি বাস্তবায়ন হতে পারতো তিনি বেঁচে থাকলে!

চ্যানেল আইয়ের জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের অতিথি সাজু

হ্যাঁ, ফ্যাশন অঙ্গনের সবার প্রিয় ‘সাজু ভাই’ আর নেই। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১০টার দিকে বুকে ব্যাথা উঠে অকালেই না ফেরার দেশে চলে গেছেন এই সাদা মনের মানুষটি। 

বিজ্ঞাপন

তার মৃত্যুর বিষয়টি বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন জনপ্রিয় র‌্যাম্প মডেল ও কোরিওগ্রাফার বুলবুল টুম্পা। তিনি বলেন, ‘সাজু ভাই নেই ভাবতেই পারছি না। আমার বড় ভাইয়ের মতো ছিলেন তিনি। কিন্তু আমাকে ভীষণ সম্মান করতেন। একসঙ্গে কতো কাজ করেছি। অঞ্জনা আপার পর সাজু ভাই, একে একে কাছের শিল্পীদের মৃত্যু মানতে সত্যি কষ্ট হয়। কান্না আটকে রাখতে পারছি না। উনাদের চলে যাওয়া শুধু পরিবার বা আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়। পুরো দেশের ক্ষতি। কারণ তারা দেশের শিল্প, সংস্কৃতি ধরে রাখতে আজীবন কাজ করেছেন।’

সাজু ও বুলবুল টুম্পা

কিভাবে মারা গেলেন জানতে চাইলে টুম্পা বলেন, ‘সাজু ভাইয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট জুয়েল আমাকে ফোন করে খবরটা দেয়। আমি শুনে বিশ^াসই করতে পারছিলাম না। কারণ, একেবারেই সুস্থ সবল একটা মানুষ। কতোই বা বয়স হয়েছিল তার? কদিন আগেও দেখা হয়েছে। ফোনে প্রায়ই নানা কাজ নিয়ে আলোচনা হতো। সেই মানুষটি নাকি আর নাই! জুয়েল আমাকে বলল, হঠাৎ বুকে ব্যাথা উঠেছিলো। বেশি সময় না দিয়েই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন সাজু ভাই।’

ওপার বাংলার বিখ্যাত নায়িকা ঋতুপর্ণার সঙ্গে সাজু

টুম্পা আরও বলেন, ‘যে মানুষটি সপ্তাহে একবার কল দিতো সে অনেকদিন কল দিচ্ছিলো না। তাই আমি গত কয়েকদিন ধরে উনাকে বেশ কয়েকবার কল দিয়েছি। কিন্তু উনি ফোন ধরছিলেন না। আমি ভাবলাম হয়তো কোন ঝামেলায় আছেন। পরে আরেক দিন কল দিলাম, সেদিন ফোন ধরলেন। তখন জানতে পারি তিনি টানা ২০ দিনের মতো হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। জ¦র হয়েছিল, এতো ধরনের টেস্ট করিয়েছেন কিন্তু কিছুই নাকি ডক্তর আইডেন্টিফাই করতে পারেননি যে কেন জ¦র যাচ্ছে না। এজন্য তিনি কারও ফোন ধরছিলেন না। পরে একটু সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে আমার ফোন ধরেছেন। বেশ স্বাভাবিকভাবেই কথা বললেন, হাসাহাসিও করলাম আমরা। তার এক সপ্তাহের মাথায় শুনি তিনি একেবারেই বিদায় নিলেন আমাদের ছেড়ে। সত্যি খুব কষ্ট হচ্ছে সাজুর ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে।’

গত বছর ‘ম্যাকয়্’-এর শো রুম ভিজিটে গিয়ে সাজু, তার স্ত্রী ও দুই ছেলের সঙ্গে অভিনেত্রী রুনা খান

মেসবাহ উল আলম সাজু তার স্ত্রী, স্কুল পড়ুয়া দুটি ছেলে ও ভাই বোন রেখে মারা গেছেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগে পড়াশুনা শেষ করে ঢাকায় আসেন। এরপর নিজের ডিজাইন করা পোশাকের ব্র্যান্ড ‘ম্যাকয়্’ প্রতিষ্ঠা করে সফল হন। তার ঝুলিতে বাইফা, বাংলাদেশ অ্যাচিভার্স অ্যাওয়ার্ড, বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডসহ বহু পুরস্কার রয়েছে। তার পোশাকের মডেল হয়ে কাজ করেননি দেশে এমন জনপ্রিয় নায়িকা খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

‘মিস এভারগ্রীণ বাংলাদেশ সিজন ১’-এর অডিশন রাউন্ডের বিচারক কর্ণিয়া, মৌটুসী বিশ্বাস, জ্যোতিকা জ্যোতি, অন্তু, মাহিয়া মাহি ও সোহাগের সঙ্গে আয়োজক সাজু

২০২৩-এ তিনি নিজ উদ্যোগে শুরু করেন বিউটি কনটেস্ট ‘মিস এভারগ্রীণ বাংলাদেশ সিজন ১’। দারুণ প্রশংসা কুড়ায় সেই শোটি। এ ধরনের আরও নানা পরিকল্পনা সামনে বাস্তবায়ন করার আগেই তাকে চলে যেতে হলো প্রিয় ফ্যাশন আঙ্গিনা ছেলে! সাজুর মৃত্যুতে ফ্যাশন অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।