রাজ রিপা ও ইফতেখার চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রযোজককে হত্যাচেষ্টার মামলা
ঢাকাই সিনেমার উঠতি নায়িকা রাজ রিপার আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আবুল বাশার নামে এক সিনেমা প্রযোজক। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর গুলশান থানাধীন ‘রাতের কাবাব’ নামে এক রেস্টুরেন্টে।
এ ঘটনায় আহত আবুল বাশারের মাথায় ছয়টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে বর্তমানে তিনি রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় বাশারের ভাই মো. আব্বাস বাদী হয়ে ১৮ জানুয়ারি গুলশান একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। মামলার নাম্বার ২২। মামলাটি ৩২৩/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩৭৯/৫০৬ ধারায় (পেনাল কোড ১৮৬০) লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বলে থানা থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে। মামলায় এক নাম্বার আসামী চিত্রনায়িকা শারমিন আফরোজ রিপা ওরফে রাজ রিপা, দুই নাম্বার আসামী চিত্রপরিচালক ইফতেখার চৌধুরী ও তিন নাম্বার আসামী রাজ রিপার স্বামী শামীম আহমেদ শিশির ওরফে চিত্রনায়ক শিশির সরদার।
মামলার অভিযোগে বাদী বলেছেন, ১৪ জানুয়ারি প্রযোজক আবুল বাশার ও তার ভাগ্নে আবু রায়হান রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে গুলশানের রাতের কাবাব রেস্টুরেন্টে ডিনার করতে যান। তখন চিত্রনায়িকা রাজ রিপা ও তার স্বামী শিশির সরদার এবং চিত্রপরিচালক ইফতেখার চৌধুরীরও সেখানে যান। ডিনার শেষে রাজ রিপা প্রযোজক আবুল বাশারের কাছে চাষী নামে তার সাবেক ড্রাইভারের বিষয়ে তথ্য জানতে চায়। আবুল বাশার এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানেন না বললে রাজ রিপা ক্ষিপ্ত হয়ে তার ব্যবহৃত স্যামসাং এস-২৪ আলট্রা ব্রান্ডের মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেয়।
আবুল বাশার তাতে বাধা দিলে রাজ রিপা মোবাইল দিয়ে একাধিকবার পূর্ব পরিকল্পিত হত্যার উদ্দেশ্যে অতর্কিত হামলা করে। একই সময় চিত্রপরিচালক ইফতেখার চৌধুরীও আবুল বাশারকে খাবার টেবিলে থাকা কোল্ড ড্রিংকসের কাঁচের বোতল দিয়ে মাথায় আঘাত করে। অতর্কিত আক্রমনে মাথায় আঘাত পেয়ে আবুল বাশার ফ্লোরে পড়ে গেলে শিশির সরদার তাকে কিল ঘুষি লাথি মারতে থাকে। এ সময় আসামীরা আবুল বাশারের গলার পরা ২ ভরি স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।’
ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাই সিনেমার আরেক নায়িকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, আক্রমন করে রাজ রিপা, ইফতেখার চৌধুরী ও শিশির সরদার চলে যাওয়ার পর আহত আবুল বাশারকে রেস্টুরেন্টের উপস্থিত লোকজন গুলশানের সিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে নেওয়া হয় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্স হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনা নিয়ে চিত্রনায়িকা রাজ রিপার কাছে জানতে চেয়ে ফোন করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া গেছে। চিত্রপরিচালক ইফতেখার চৌধুরীও তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার বন্ধ রেখেছেন।
অন্যদিকে মামলার বাদী মো. আব্বাস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আসামীরা আমার ভাইয়ের পূর্ব পরিচিত। তাই একসঙ্গে বসেই কথা বলছিলেন। কথা বলার একপর্যায়ে আমাদেরই এক পুরনো ড্রাইভারের বিষয়ে জানতে চান তারা। ওই ড্রাইভারের সঙ্গে হয়তো আসামীদের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে। কিন্তু আমার ভাই পুরনো ড্রাইভারের খোঁজ দিতে পারেনি। তিনি সেই ড্রাইভারের বর্তমান অবস্থানও জানেন না। তাই আসামীরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করেছেন। তার মাথার আঘাত এতটাই গুরুতর ছিল যে, তাকে সিসিইউ (করোনারি কেয়ার ইউনিটচ)-তেও রাখতে হয়েছিল। মাথায় ছয়টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি কিছুটা শংকামুক্ত। সেলাই কাটা হয়েছে। যেহেতু মাথায় আঘাত, তাই চিকিৎসকরা তাকে অবজার্ভেশনে রেখেছেন। আসামিরা আমাই ভাইয়ের কাছ থেকে ৩ লক্ষ ৬৯ হাজার টাকার মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে গেছে, যা আমি মামলায় উল্লেখ করেছি।’
এদিকে মামলার অগ্রগতি নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার সাব ইন্সপেক্টর হারুনুর রশীদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা ঘটনার তদন্ত করছি। প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামীদের গ্রেফতারের বিষয়েও কাজ চলছে।’
বর্তমান প্রজন্মের নায়িকা রাজ রিপা জাতীয় ব্যাডমিন্টন দলের সদস্য ছিলেন। খুলনা বিভাগে চ্যাম্পিয়নও হয়েছিলেন। তবে ব্যাডমিন্টনকে বিদায় জানিয়ে ২০২০ সালে সিনেমায় নাম লেখান। রায়হান রাফি পরিজালিত ‘দহন’ নামে সিনেমায় একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এছাড়া ইফতেখার চৌধুরীই ‘মুক্তি’ সিনেমাতে কাজ করেছেন। এরপর অভিনয় করেছেন ‘ময়না’ ও ‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ’ সিনেমায় কাজ করেন।
অন্যদিকে চিত্রপরিচালক ইফতেখার চৌধুরী অনন্ত জলিলের প্রথম সিনেমা ‘খোঁজ: দ্য সার্চ’ পরিচালনার মাধ্যমে ঢাকাই সিনেমায় পা রাখেন। এরপর তিনি একাধিক সিনেমা নির্মাণ করেন। রাজ রিপাকে নিয়েও তিনি ‘মুক্তি’ নামে একটি সিনেমা নির্মাণ করেছেন। গতবছর সোশ্যাল মিডিয়ায় ইফতেখার চৌধুরীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন রিপা।