যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে দুর্বৃত্তদের বন্দুক হামলা, নিহত ৩
আন্তর্জাতিক
যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের একটি স্কুলে বন্দুকধারীর গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ছয়জন। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে রাজ্যেটির পুলিশ।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
বিজ্ঞাপন
পুলিশ জানায়, রাজ্যেটির রাজধানী ম্যাডিসনের অ্যাবন্ড্যান্ট লাইফ ক্রিশ্চিয়ান স্কুলে গুলি চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে তিনজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৬ জন। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ম্যাডিসন পুলিশ বিভাগ সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে জানায়, একাধিক হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাটির তদন্ত চলছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। এর মধ্যে ওই এলাকা এড়িয়ে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্কুলের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
শহরের পুলিশ প্রধান শন বার্নস বলেছেন, নিহতদের মধ্যে বন্দুকধারীও রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। হামলার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারা স্কুলের আশপাশের রাস্তা বন্ধ করে দেয়।
সুদানের দারফুরের পশ্চিমাঞ্চলে আধাসামরিক বাহিনীর এক ড্রোন হামলায় নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ৩৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা স্থানীয় কর্মীদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সুদান জুড়ে সহায়তা সমন্বয়কারী শত শত স্বেচ্ছাসেবক গোষ্ঠীর অন্যতম উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল-ফাশারের স্থানীয় প্রতিরোধ কমিটি বলেছে, নগরীর কেন্দ্রস্থল লক্ষ্য করে আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) চারটি উচ্চ-বিস্ফোরক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
আরএসএফ ২০২৩ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে নিয়মিত সেনাবাহিনীর সাথে লড়াই করে আসছে। মে মাস থেকে আধাসামরিক বাহিনীটি এল-ফাশার নগরী অবরুদ্ধ করে রেখেছে।
বিস্তীর্ণ দারফুর অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে উভয় পক্ষের লড়াইয়ে নগরীটিতে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে।
প্রায় সমস্ত দারফুর এখন আরএসএফ-এর নিয়ন্ত্রণে। এটি দক্ষিণ কোর্দোফান অঞ্চল ও সুদানের মধ্যাঞ্চলের কিছু অংশও দখলে নিয়েছে। এদিকে উত্তর ও পূর্বাঞ্চল সেনাবাহিনী দখল করেছে।
আরএসএফ ও সেনাবাহিনী উভয়ই এখন এল-ফাশার থেকে ১,০০০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত যুদ্ধ-বিধ্বস্ত রাজধানী খার্তুমের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করছে।
সেনাবাহিনী-সংযুক্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার আরেকটি ড্রোন হামলায় এল-ফাশারের প্রধান হাসপাতালে নয়জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আরএসএফ যোদ্ধারা সৌদি হাসপাতাল লক্ষ্য করে একটি ড্রোনের মাধ্যমে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যা ওই স্থাপনার মূল অবস্থানে আঘাত করেছে।
শনিবার একটি অনলাইন পোস্টে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানোম ঘেব্রেইসাস সুদান জুড়ে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোয় অবিরাম হামলাকে দুঃখজনক হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি এক্স-এ বলেন, ‘আমরা সমস্ত রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা এবং হাসপাতালগুলো ও সেগুলোর আশেপাশের সমস্ত হামলা বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি।’
সুদানের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে এ পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, ১ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে। জাতিসংঘ এই সংঘর্ষকে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়লোর অন্যতম বলে অভিহিত করেছে।
সেনাবাহিনী ও আরএসএফ উভয়ের বিরুদ্ধেই নির্বিচারে বেসামরিক নাগরিক এবং চিকিৎসা স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করার পাশাপাশি ইচ্ছাকৃতভাবে আবাসিক এলাকায় বোমা হামলার অভিযোগ রয়েছে।
সুদানের সেনাবাহিনী গত সপ্তাহে দারফুরের উত্তরের একটি বাজারে সবচেয়ে মারাত্মক এক বিমান হামলা চালায়। গণতন্ত্রপন্থী আইনজীবীদের একটি দল জানায়, ওই হামলায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে।
সীমানা প্রসারিত করার লক্ষ্যে অধিকৃত ও সংযুক্ত গোলান মালভূমিতে বসবাসকারী জনসংখ্যা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল বলে জানিয়েছে তুরস্ক। ইসরায়েলের এমন পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে আঙ্কারা।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয় বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এএফপি জানায়।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়, সিদ্ধান্তটি দখলদারিত্বের মাধ্যমে সীমানা সম্প্রসারণের ইসরাইলি লক্ষ্যের একটি নতুন ধাপ। এতে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, পরিকল্পনাটি বাশার আল-আসাদের ক্ষমতাচ্যুতির পর প্রতিবেশী সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা আনার প্রচেষ্টা ‘গুরুতর ব্যাহত’ করবে।
ইসরায়েলের এই পদক্ষেপটি একটি গুরুতর উদ্বেগের সৃষ্টি করবে। যা ১৯৭৪ সালের বিচ্ছিন্নকরণ চুক্তি লঙ্ঘন করে বিচ্ছিন্নতার এলাকায় ইসরায়েলের প্রবেশ, সংলগ্ন এলাকায় তার অগ্রগতি এবং সিরিয়ায় বিমান হামলার সাথে সম্পর্কিত- বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।
গত বছরের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা ৪৫ হাজার ছাড়িয়েছে।
হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে জানায়, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনির মধ্যে ১৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধে কমপক্ষে ৪৫,০২৮ জন নিহত হয়েছে। খবর আল জাজিরা।
মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে আল জাজিরা জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২ জন নিহতের অন্তর্ভুক্ত করে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, ২০২৩-এর অক্টোবরে গাজায় ইসরাইলের হামলা শুরুর পর থেকে গাজায় এক লাখ ৬ হাজার ৯৬২ জন আহত হয়েছে।
মন্ত্রণালয়টি আরও জানিয়েছে, অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এদিকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।
পাশাপাশি ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ গ্যালান্ত ও হামাসের সামরিক কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধেও পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপাঞ্চল ফ্রান্স শাসিত মায়োত দ্বীপপুঞ্জে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ‘চিড়ো’ আঘাত হেনেছে। ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগের এ ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপপুঞ্জটিতে প্রায় এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করছেন দ্বীপটির শীর্ষ কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৯০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় এটি। এতে তছনছ হয়েছে আফ্রিকা মহাদেশসংলগ্ন ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপাঞ্চল। সেখানকার টিনের ছাউনির ঘরগুলো বলতে গেলে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
গত শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) ঘূর্ণিঝড় ‘চিড়ো’ আঘাত হানে। কোমোরোস এবং মাদাগাস্কারের নিকটবর্তী দ্বীপগুলিতেও এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েছে।ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে মোজাম্বিকে আঘাত হেনেছে।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) স্কাই নিউজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
মায়োতের প্রিফেন্স (প্রধান কর্মকর্তা) ফ্রাঙ্কোয়িস জেভিয়ার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, আমি মনে করি প্রায় কয়েকশত মানুষ মারা গেছে। নিহতের সংখ্যা হয়তো হাজারের কাছাকাছি চলে যেতে পারে।
তিনি বলেন, মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা পাওয়া বর্তমানে "অত্যন্ত কঠিন"। চিড়ো ১৯৩৪ সালের পর থেকে সবচেয়ে সহিংস এবং ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণিঝড়।
মায়োতের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই দ্বীপপুঞ্জে বিপুলসংখ্যক অনিবন্ধিত অভিবাসী রয়েছেন। দ্বীপপুঞ্জের ৩ লাখ ২০ হাজার জনসংখ্যার মধ্যে ১ লাখের বেশি এমন অভিবাসী। তাদের কারণে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা বের করতে ঝামেলা হচ্ছে।
প্রায় এক শতাব্দীর মধ্যে দ্বীপে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর ফ্রান্স থেকে পাঠানো জরুরি কর্মী পাঠানো হয়েছে। তারা জীবিতদের খুঁজে বের করতে এবং পরিষেবা পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
ফ্রান্সের বেসামরিক নিরাপত্তার মুখপাত্র আলেকজান্দ্রে জুসার্ড ফ্রান্স ২ নিউজ চ্যানেলকে বলেন, পরবর্তী মিনিট এবং ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই পরিস্থিতিতে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছি। উদ্ধার কাজে জাহাজ এবং সামরিক বিমান ব্যবহার করা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দ্বীপপুঞ্জের অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ পরিবহনের লাইনগুলো পানিতে ডুবে গেছে, সড়ক দিয়ে চলাচলের অবস্থা নেই। ফলে জরুরি উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। উপদ্রুত মানুষের জন্য জরুরি আশ্রয় তৈরি করতে ত্রিপলসহ নানা সামগ্রী নিয়ে এসেছে একটি উড়োজাহাজ। তবে কিছু এলাকায় খাবার, পানি ও আশ্রয়ের তীব্র সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
মায়োতের রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রন বলেছেন, আমার চিন্তা মায়োতে আমাদের স্বদেশীদের সাথে, যারা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কয়েক ঘণ্টার মধ্য দিয়ে গেছে। অনেক মানুষ তাদের সবকিছু হারিয়েছে, অনেকে মানুষ জীবন হারিয়েছে।
ফরাসী গণমাধ্যমের এক ভিডিওতে দেখা যায়, পাহাড় জুড়ে কয়েকশ অস্থায়ী ঘরের ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে।
মায়োতের রাজধানী মামুদজুতে বসবাসকারী মোহাম্মদ ইসমায়েল বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, সত্যি বলতে আমরা যা অনুভব করছি তা একটি ট্র্যাজেডি। আপনার মনে হচ্ছে আপনি পারমাণবিক যুদ্ধের পরের মধ্যে আছেন... আমি দেখেছি একটি পুরো প্রতিবেশী অদৃশ্য হয়ে গেছে।
মায়োটের একটি হাসপাতাল জানিয়েছে, নয় জনের অবস্থা গুরুতর এবং আরও ২৪৬ জন আহত হয়েছে।
তবে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, হতাহতের সঠিক হিসাব পাওয়া কঠিন।