মায়োত দ্বীপপুঞ্জে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত, হাজারো মানুষের মৃত্যুর শঙ্কা
ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপাঞ্চল ফ্রান্স শাসিত মায়োত দ্বীপপুঞ্জে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ‘চিড়ো’ আঘাত হেনেছে। ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগের এ ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপপুঞ্জটিতে প্রায় এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করছেন দ্বীপটির শীর্ষ কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৯০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় এটি। এতে তছনছ হয়েছে আফ্রিকা মহাদেশসংলগ্ন ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপাঞ্চল। সেখানকার টিনের ছাউনির ঘরগুলো বলতে গেলে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
গত শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) ঘূর্ণিঝড় ‘চিড়ো’ আঘাত হানে। কোমোরোস এবং মাদাগাস্কারের নিকটবর্তী দ্বীপগুলিতেও এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েছে।ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে মোজাম্বিকে আঘাত হেনেছে।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) স্কাই নিউজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
মায়োতের প্রিফেন্স (প্রধান কর্মকর্তা) ফ্রাঙ্কোয়িস জেভিয়ার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, আমি মনে করি প্রায় কয়েকশত মানুষ মারা গেছে। নিহতের সংখ্যা হয়তো হাজারের কাছাকাছি চলে যেতে পারে।
তিনি বলেন, মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা পাওয়া বর্তমানে "অত্যন্ত কঠিন"। চিড়ো ১৯৩৪ সালের পর থেকে সবচেয়ে সহিংস এবং ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণিঝড়।
মায়োতের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই দ্বীপপুঞ্জে বিপুলসংখ্যক অনিবন্ধিত অভিবাসী রয়েছেন। দ্বীপপুঞ্জের ৩ লাখ ২০ হাজার জনসংখ্যার মধ্যে ১ লাখের বেশি এমন অভিবাসী। তাদের কারণে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা বের করতে ঝামেলা হচ্ছে।
প্রায় এক শতাব্দীর মধ্যে দ্বীপে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর ফ্রান্স থেকে পাঠানো জরুরি কর্মী পাঠানো হয়েছে। তারা জীবিতদের খুঁজে বের করতে এবং পরিষেবা পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
ফ্রান্সের বেসামরিক নিরাপত্তার মুখপাত্র আলেকজান্দ্রে জুসার্ড ফ্রান্স ২ নিউজ চ্যানেলকে বলেন, পরবর্তী মিনিট এবং ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা এই পরিস্থিতিতে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছি। উদ্ধার কাজে জাহাজ এবং সামরিক বিমান ব্যবহার করা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দ্বীপপুঞ্জের অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ পরিবহনের লাইনগুলো পানিতে ডুবে গেছে, সড়ক দিয়ে চলাচলের অবস্থা নেই। ফলে জরুরি উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। উপদ্রুত মানুষের জন্য জরুরি আশ্রয় তৈরি করতে ত্রিপলসহ নানা সামগ্রী নিয়ে এসেছে একটি উড়োজাহাজ। তবে কিছু এলাকায় খাবার, পানি ও আশ্রয়ের তীব্র সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
মায়োতের রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রন বলেছেন, আমার চিন্তা মায়োতে আমাদের স্বদেশীদের সাথে, যারা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কয়েক ঘণ্টার মধ্য দিয়ে গেছে। অনেক মানুষ তাদের সবকিছু হারিয়েছে, অনেকে মানুষ জীবন হারিয়েছে।
ফরাসী গণমাধ্যমের এক ভিডিওতে দেখা যায়, পাহাড় জুড়ে কয়েকশ অস্থায়ী ঘরের ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে।
মায়োতের রাজধানী মামুদজুতে বসবাসকারী মোহাম্মদ ইসমায়েল বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, সত্যি বলতে আমরা যা অনুভব করছি তা একটি ট্র্যাজেডি। আপনার মনে হচ্ছে আপনি পারমাণবিক যুদ্ধের পরের মধ্যে আছেন... আমি দেখেছি একটি পুরো প্রতিবেশী অদৃশ্য হয়ে গেছে।
মায়োটের একটি হাসপাতাল জানিয়েছে, নয় জনের অবস্থা গুরুতর এবং আরও ২৪৬ জন আহত হয়েছে।
তবে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, হতাহতের সঠিক হিসাব পাওয়া কঠিন।