‘প্রতিদিনই প্রচুর ত্রাণ আসছে, কিন্তু আমরা পাই না’
বন্যা পরিস্থিতি‘লিস্টে নাম নাই, অথচ প্রতিদিনই প্রচুর ত্রাণ আসছে, কিন্তু আমরা পাই না।’ ক্ষুব্ধ হয়ে এমন প্রতিক্রিয়া জানালেন পানিবন্দী ফয়েজ আহমদ। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড যাদৈয়া গ্রামে।
একইভাবে অনুযোগ জানালেন একই গ্রামের হাজী বাড়ির বিলকিস বেগম।
তিনি বলেন, আমরা চাইলে বলে নাম নাই। কিন্তু নৌকা আর ভেলায় করে এখানে বাড়ির সামনে প্রতিদিনই কয়েকবার ত্রাণ আসে। পাশের বাড়ির আমেনা খাতুনও বলেন একই কথা বলেন।
তিনি বলেন, যারাই ত্রাণ নিয়ে আসেন তাদের ত্রাণগুলো এলাকার দুই তিনটা ছেলে তাদের নিজেদের কয়েকজনকে বারবার দিয়ে দেয়।
জানা গেছে, এই এলাকার ৫০ টি পরিবারের প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ গত ১৫ দিন থেকে পানিবন্দী। প্রত্যেকের ঘরে পানি। বাড়ির উঠোন আর সড়কে কোমর সমান পানি। বাড়ি থেকে বাজার প্রায় ৩ কিলোমিটার। একারণে নিত্য প্রয়োজনে বাজারেও যাওয়া অনেকটা দুঃসাধ্য।
জানা যায়, এ কয়েকদিনে ঠিকমত পেটে আহার জোটেনি তাদের। তাই ত্রাণ পেতে হাহাকার এসব মানুষের। ত্রাণের নৌকা দেখলেই হুড়মুড় করে এরা নৌকার কাছে চলে আসে। আসলেও ত্রাণ পায় না। খালি হাতে ফিরে যায় তারা। হতাশ হয়ে তারা তাকিয়ে থাকে। যদি ফের কোনো ত্রাণের নৌকা আসে।
জেলার সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া এবং মোহাম্মদ নগর গ্রাম দুটি ঘুরে চরম মানবিক বিপর্যয় লক্ষ্য করা গেছে। গ্রামের কোথাও পানি ব্যতীত মাটির চিহ্ন লক্ষ্য করা যায়নি। যাদৈয়া গ্রামের পশ্চিম অংশ চিত্র ছিল একেবারে ভয়াবহ। সড়কের ওপর কোমর পানি, কোনো কোনো বাড়ির ভেতরে বুক সমান পানি ছিল। এমন কোনো ঘর দেখা যায়নি, যেটাতে পানি ঢুকেনি। প্রতিটি ঘরে কম-বেশি পানি ঢুকে পড়েছে। গুটিকয়েক পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। বেশিরভাগ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে আছেন।
এসব গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, সড়ক যোগাযোগ ভালো না। রাস্তা দিয়ে ভেলা বা নৌকা চালাতে হয়। পানির উচ্চতা বেশি হওয়ায় চাইলেই বের হওয়া যায় না৷ এলাকার দোকানগুলোতেও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়া যায় না। প্রয়োজন পড়লেও কিছু ক্রয় করতে পারি না।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুরে ৭ লাখ ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। এ পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ৩০ হাজার মানুষ। বন্যা দূর্গত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য ৭০০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০৯ মেট্রিক টন চাল ও ১৬ লাখ টাকা ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া শিশু খাদ্যের জন্য ৫ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়।
জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, বন্যা কবলিত এলাকায় এই বরাদ্ধ পর্যাপ্ত নয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আরও ৩০ লাখ টাকার চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে। তবে সমন্বয়হীনতার অভাবে অনেক জায়গায় সুষ্ঠভাবে ত্রাণ বিতরণ সম্ভব হচ্ছেনা। তাই স্বেচ্ছাসেবী গ্রুপগুলোকে সমন্বয় করার জন্য আহবান জানানো হয়েছে।
তবে চট্টগ্রাম থেকে আসা এমইএস কলেজের একটি স্বেচ্ছা ত্রাণ টিমেয় সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, আসলে এখন শুকনা খাবারে হয়না মানুষের। তাদের দরকার রান্না করা খাবার। আমরা চেষ্টা করছি দুইরকম খাবারই সরবরাহ দিতে।