‘খাবার নাই, দুই বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টে আছি’
বন্যা পরিস্থিতি‘প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ঘরে পানি। খাবার নাই, দুই বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টে আছি। আশ্রয় কেন্দ্রে জায়গা পাইনি, অন্যের ঘরে থাকি। আবার সে ঘরের সামনেও পানি। বাইরে থেকে আসা কোনো ত্রাণ আমরা পাইন।৷ বাচ্চাদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি।’ বন্যা পরিস্থিতির কারণে দুর্দশাগ্রস্ত এক গৃহবধূ সাবিনার আর্তনাদ ছিল এমনই।
সাবিনা লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের ১ নম্বর যাদৈয়া গ্রামের কাদির হাজী বাড়ির বাসিন্দা।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, তার ঘরে চাল নেই। ছোট্ট শিশু কন্যার জন্য পর্যাপ্ত খাবারও নেই। সাবিনাদের বাড়ির আশেপাশে স্বেচ্ছোসেবীরা ত্রাণ নিয়ে আসলেও তারা ঘরে বসবাস না করার ফলে কখনো ত্রাণের দেখা পান না।
উপয়ান্তর না দেখে বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে সাবিনা কোমর পানি মাড়িয়ে শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছেন ত্রাণবাহী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দেখা পেতে। স্থানীয় একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই এলাকায় ত্রাণ নিয়ে ঢুকলে তাদের কাছ থেকে ত্রাণ সহযোগিতা চান সাবিনা। কিন্তু নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য হিসেব করে নিয়ে আসা ত্রাণ ভাগ্যে জোটেনি সাবিনার। এতে মনে ক্ষোভ, হাতাশা আর অসন্তোষ নিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়েছে এ নারীকে।
গৃহবধূ সাবিনা ইয়াছমিনের ঘরে হাঁটু পানি। ঘরের উঠোনে এবং বাড়ির রাস্তায় কোমরের ওপরে পানি। গত এক সপ্তাহ আগে টিনসেট ঘরটি বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। দীর্ঘদিন পানির নিচে তলিয়ে থাকায় ঘরটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই ঘরে থাকার মতো পরিবেশ নেই, আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশী একজনের ভবনে। ওই ভবনের চারপাশেও এখন পানি।
সাবিনার দুই কন্যা সন্তান। বড় মেয়ের বয়স ৭ বছর, আর ছোট মেয়ের বয়স এক বছর। সাবিনার স্বামী কামাল হোসেন নির্মাণ শ্রমিক। বন্যার কারণে আপাতত আয়-উপার্জনহীন তার স্বামী। ফলে চরম অর্থকষ্টে এ নারীর পরিবার।
সাবিনার স্বামী কামাল হোসেন বলেন, বাচ্চাদের খাবার দিতে পারি না। চাল নেই ঘরে। টাকা নাই৷ থাকার জায়গা নাই। কত যে সমস্যা হচ্ছে আমাদের। সব ত্রাণ আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে যায়। আমরা পাইনা।
সাবিনাদের মতো তাদের বাড়ি এবং আশপাশে এরকম অনেকেই ত্রাণ সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দাবি করেন। তারা প্রত্যেকের ঘর পানির নিচে তলিয়ে আছে। ঘরে হাঁটু পানির মধ্যে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছে তারা। খেয়ে না খেয়ে দিন পার হচ্ছে তাদের।
সাবিনার সঙ্গে ত্রাণের সন্ধানে রাস্তায় নেমে আসা আরেক নারী নাসরিন বলেন, রাস্তার পাশে ঘর। ঘরে হাঁটু পানি। থাকতে পারি না, খাইতে পারি না। আমাদের এদিকে ত্রাণ আসে, কিন্তু আমাদের দেয়না। মুখ দেখে লিস্ট করে নামে নামে ত্রাণ দেয়। আমাদের নাম কেউ দেয় না।
তিনি বলেন, কারো কাছে চাইতে পারি না, কইতে পারি না, ত্রাণের জন্য যাইতেও পারিনা। তাই উপোস থাকি। স্বামী দিনমজুর। এখন তো কাজ নাই, ইনকাম নাই।
ত্রাণ বঞ্চিত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সাবিনাদের বাড়ির বৃদ্ধা নারী ঝুনি বেগম বলেন, পানিতে ভাসি। আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁয় হয়নি। ত্রাণও পাইনা। এখান দিয়ে ত্রাণ নিয়ে যায়। জিজ্ঞেস করলে বলে- নাম লিস্ট করে আনছি, আপনার নাম নাই। কিভাবে নামের লিস্ট হয়, আমার অবস্থা কি এরা দেখে না।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে বন্যাদুর্গত মান্দারীর যাদৈয়া এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ত্রাণের জন্য হাহাকার দেখা গেছে। যদিও ত্রাণ নিয়ে স্বেচ্ছাসেবীদের দল দুর্গম ওই এলাকায় যাচ্ছেন। কিন্তু সমন্বয়হীনতা এবং স্বজনপ্রীতির কারণে কেউ বার বার ত্রাণ পেলেও আবার কেউ না পেয়ে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন।