শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে প্রশিক্ষণরত আরও ৩ এসআই বরখাস্ত
জাতীয়
রাজশাহীর সারদা বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে প্রশিক্ষণরত আরও তিনজন শিক্ষানবিশ উপ-পরিদর্শককে (এসআই) চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) পুলিশ একাডেমি কর্তৃপক্ষ এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করে।
বিজ্ঞাপন
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরের মুখপাত্র এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর।
তিনি জানান, প্রশিক্ষণ মাঠে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগের যথাযথ জবাব দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এর আগে, গত ২১ অক্টোবর ৪০তম ক্যাডেট এসআই ব্যাচের ২৫২ জন এবং ৪ নভেম্বর আরও ৫৮ জনকে বরখাস্ত করা হয়। তাদের বিরুদ্ধেও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ ছিল। সব মিলিয়ে এ ব্যাচ থেকে ৩১৩ জন প্রশিক্ষণার্থীকে বরখাস্ত করা হলো।
সোমবার বরখাস্ত হওয়া তিনজনকে গত ১৩ নভেম্বর শোকজ করা হয়েছিল। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ১২ নভেম্বর রাতে জিমনেসিয়ামে ক্যাডেট এসআইদের কমবাইন্ড ক্লাস ছিল। ক্লাসে যাওয়ার সময় কোম্পানির সিএইচএম যথাসময়ে ফলইন করান। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পর তারা মূল দল থেকে আলাদা হয়ে যান। বারবার সঠিকভাবে মার্চিং করতে বলা হলেও তারা কমান্ড অমান্য করে উচ্চস্বরে হইচই করেন। এমন আচরণ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির নিয়ম-শৃঙ্খলার পরিপন্থী বলে সিএইচএম লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এরপর, কেন তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে না, তা জানতে তিন দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। তবে তাদের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় বরখাস্ত করা হয় বলে জানা গেছে।
দেশের সামাজিক নিরাপত্তা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক, মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ।
মঙ্গলবার ( ১৯ নভেম্বর) ময়মনসিংহ রেঞ্জের বিভিন্ন ইউনিট পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বাহিনীর কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সদস্যদের উদ্দেশ্যে এ নির্দেশনা দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাহিনীটির গণসংযোগ কর্মকর্তা ও উপ পরিচালক মোঃ আশিকউজ্জামান।
তিনি বলেন, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক প্রথমে আনসার-ভিডিপির ময়মনসিংহ রেঞ্জ কার্যালয়, জেলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন এবং বৃক্ষরোপণ করেন। মধ্যাহ্ন বিরতির পর তিনি রেঞ্জের বিভিন্ন ইউনিট প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং উন্নয়ন কার্যক্রমে বাহিনীর ভূমিকা জোরদার করার আহ্বান জানান।
এরপর মহাপরিচালক জেলার বাঁশবাড়ী এলাকায় আনসার-ভিডিপি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, জেলা কমান্ড্যান্ট কার্যালয় এবং ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কালাদহ আনসার-ভিডিপি ক্লাব পরিদর্শন করেন।
বুধবার (২০ নভেম্বর), শেরপুরের নালিতাবাড়ীর ৩২ আনসার ব্যাটালিয়ন পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে ময়মনসিংহ ত্যাগ করবেন। এ সফরে তার সঙ্গী হিসেবে আছেন উপপরিচালক (সমন্বয়) নাজমুছ সালেহীন নূর ।
চলতি বছরের দশ মাসে (জানুয়ারি -অক্টোবর) শারিরীক নির্যাতন, সহিংসতা, ধর্ষণ, অপহরণ ও নিখোঁজের পর হত্যাসহ বিভিন্ন কারণে নিহত হয় মোট ৪৮২ জন শিশু। তবে ২০২৩ সালের প্রথম দশ মাসে নিহত শিশুর সংখ্যা ছিল ৪২১ জন। গতবছরের তুলনায় চলতি বছরে শিশু হত্যা বেড়েছে ৬১ জন।
এছাড়াও চলতি বছরের প্রথম দশ মাসে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয় ৫৮০ জন শিশু। তবে ২০২৩ সালের প্রথম দশ মাসে এর সংখ্যা ছিল ৯২০ জন। এর ফলে দেখা যায়, চলতি বছরে শিশু নির্যাতন অনেক কমেছে।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক সংলাপে এ তথ্য উঠে আসে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা টেরি ডেস হোমসের কান্ট্রি ডিরেক্টর এম কবিরের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রজেক্ট অফিসার শান্তা ইসলাম।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ (সিআরএসি,বি) যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে। সিআরএসি,বি দেশের প্রথম সারির ১৪টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, শিশু অধিকার প্লাটফর্ম, সংগঠন এবং ফোরামের সমন্বয়ে গঠিত।
সংলাপে উপস্থাপন করা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, আসকের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১২১ জন শিশু মারা যায়।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রজেক্ট অফিসার শান্তা ইসলাম বলেন, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ শিশু অধিকার রক্ষায় বেশকিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও শিশুদের পরিস্থিতি আশানুরুপ অগ্রগতি অর্জন করেনি কেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব পদক্ষেপের বাস্তবায়ন ঘটেনি। এসব পদক্ষেপের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জন্য কার্যকর পর্যবেক্ষণ ও জবাবদিহিতা অনুপস্থিত। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে পরিবর্তিত পিরিস্থিতিতে নানামুখী সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিগত দিনের সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে উঠা সম্ভব বলে আশাবাদ জাগ্রত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কোয়ালিশন মনে করে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করতে হলে শিশুদের জন্যও একটি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যহীন সমাজ নিশ্চিত করার উদ্যোগসমূহ জোরদার করতে হবে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা টেরি ডেস হোমসের কান্ট্রি ডিরেক্টর এম কবির বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য এখন পর্যন্ত আমরা শিশুদের নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব বেশি পরিকল্পনা কিংবা পদক্ষেপ লক্ষ্য করছি না।
কোয়ালিশন মনে করে, জরুরি ভিত্তিতে অংশীজনদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে শিশুদের অধিকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণে বিদ্যমান ব্যবস্থাগুলো আরো কার্যকর করা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং আরো নতুন নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যকীয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, আজকের শিশুরাই আগামীর তরুণ। তারাই দেশ ও জাতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাই তাদের জন্য সুন্দর বর্তমান ও ভবিষ্যত নির্মাণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় মনোযোগ প্রদানের সময় এখনই।
সংলাপে আসকের পরিসংখ্যান ও পর্যালোচনার প্রেক্ষিতে কোয়ালিশন নিম্নোক্ত সুপারশিসমূহ সরকারের কাছে প্রস্তাব করছে। প্রস্তাবগুলো হলো- যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় আহত ও নিহত শিশুদের পূর্ণাঙ্গ ও গ্রহণযোগ্য তালিকা প্রকাশ করা; নিহতের পরিবারের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও আহত শিশুদের জন্য সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা করা; শিশুদের জন্য পৃথক অধিদফতর প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা এবং দ্রুততার সঙ্গে পৃথক শিশু অধিফতর প্রতিষ্ঠা করা; শিশুদের সাথে প্রাক-বাজেট এবং বাজেট-পরবর্তী পরামর্শ সভার আয়োজন করা। আগামী অর্থবছর থেকে, পর্যায়ক্রমে শিশু-কেন্দ্রিক বাজেট ও প্রতিবেদন তৈরি এবং প্রকাশ করা; শিশু আইন বাস্তবায়নের জন্য একটি শক্তিশালী পরীবিক্ষণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। বিশেষ করে, শিশু সহায়তা ডেস্ক গঠন করা, প্রতিটি থানায় শিশুদের সহায়তার জন্য পৃথক পুলিশ অফিসার নিয়োগ করা; সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্টভাবে বাড়িতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র, আবাসিক প্রতিষ্ঠানসহ যে কোনো কাঠামোতে শিশুদের ওপর শারীরিক এবং অপমানজনক শাস্তি প্রদান নিষিদ্ধ করে শিশু আইন ২০১৩-এ একটি বিধান অন্তর্ভুক্ত করা; শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনাগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা;
ধর্ষণের সংজ্ঞা পুনঃনির্ধারণ করা, এবং ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনের যথাযথ সংশোধনের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া; অনলাইনে শিশু যৌন শোষণ রোধ করতে বিদ্যমান আইনগুলিতে; যেমন, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২, শিশু আইন ২০১৩ এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ এ সাইবার অপরাধের নতুন রূপগুলিকে সংজ্ঞায়িত এবং অন্তর্ভুক্ত করা; শিশু পাচার সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে বিচার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের, বিশেষ করে সাতটি মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের কর্মীদের সক্ষমতা বাড়ানো; শিশুদের মনস্তাত্তিক সমস্যা, আঘাত বা ব্যাধি কাটিয়ে উঠতে মনোসামাজিক সহায়তা (যেমন, কার্যকর কাউন্সেলিং, সাইকোথেরাপি) নিশ্চিত করা;
বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে বাল্যবিয়েকে শুরুতেই বাতিল (Void ab Initio) ঘোষণা করে একটি বিধান অন্তর্ভুক্ত করা, কেননা আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও এই বিয়েগুলি অবৈধ হয় না। বাল্যবিয়ে নিরোধে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটিগুলোর কার্যক্রম জোরদার করা;
বাল্যবিয়ে নিরোধে রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি কে ডিজিটালাইজেশন করা; মানবাধিকারের মূলনীতিসমূহের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ একটি অভিন্ন এবং বৈষম্যহীন পাঠ্যক্রম ও পাঠদান পদ্ধতি উদ্ভাবন ও বাস্তবায়ন করা; জবাবদিহিতা এবং সকল শিশুর জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষক ও স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ আইন প্রণয়ন করা, এবং আইএলও কনভেনশন ১৮৯ অনুস্বাক্ষর করা; আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদের ঐচ্ছিক প্রোটোকল ৩ (যোগাযোগ প্রক্রিয়া-সংক্রান্ত জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের তৃতীয় প্রটোকল) অনুস্বাক্ষর করা এবং অনুসমর্থন করা; চতুর্থ পর্বের ইউপিআরে প্রাপ্ত শিশু অধিকার বিষয়ক সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের জন্য অংশীজনদের সাথে আলোচনা সাপক্ষে একটি সুনির্দষ্ট কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন করা; জাতিসংঘের শিশু অধিকার কমিটি প্রদত্ত সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যলোচনা করে দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় থাকা জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের আওতায় পিরিওডিক প্রতিবেদন প্রদান।
খাগড়াছড়ির রামগড়ে অস্ত্র ও গুলিসহ ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপের এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) ভোরের দিকে রামগড়ের পাতাছড়া ইউনিয়নের জরিচন্দ্র পাড়া থেকে সুবেল ত্রিপুরা ওরফে সজলকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার হওয়া সুবেল ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপের সদস্য এবং রামগড়ের জরিচন্দ্র পাড়ার মৃত ছবি কুমার ত্রিপুরা ছেলে। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে ১ টি দেশীয় পিস্তল, ১ টি দেশীয় এলজি, ২ রাউন্ড কার্তুজ ও ২ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, একাধিক মামলার সাজা পরোয়ানাভুক্ত সুবেল ত্রিপুরাকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ২ টি অস্ত্র, কার্তুজ ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ মঈন উদ্দীন জানান, সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে অংশ হিসেবে অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেফতারকৃত আসামী ও জব্দকৃত মালামাল আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘আগে ভুয়া মামলা করতো পুলিশ। তারা ১০টা নাম আর ৫০টা বেনামি আসামি দিতো। এখন জনগণ দিচ্ছে ১০টা নাম ৫০টা বেনামি।’
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রামে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবস্থা এটা আমি মোটামুটি বলব। তবে এখনো সন্তোষজনক নয়। আমরা সন্তোষজনকে আনার চেষ্টা করতেছি। আপনারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না। কিন্ত কোন সময় ভালো ছিল সেটি আপনারা বলেন না। এবার অন্য বারের চেয়ে ভালোভাবে পূজা হয়ে গেল, এটাও কিন্তু আপনারা একটু কম বলেছেন। আমরা যতটুকু আশা করেছি ততোটুক বলা হয়নি। কিন্তু আরও একটু বেশি করে বলা দরকার ছিল আপনাদের।
তিনি বলেন, ‘সভায় বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিল, তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কীভাবে আরও উন্নতি করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, এ ব্যাপারে আমি সাংবাদিকদেরও সহযোগিতা চাই। সাংবাদিকদের সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। বারবার আমি এ কথাটা বলি। সাংবাদিকরা একটু সাহায্য সহযোগিতা করেন পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে।’
আন্দোলন পরবর্তী পুলিশের মনোবল প্রসঙ্গে বলেন, পুলিশের যে মনোবল হারিয়েছে সেটি আগের চেয়ে কি আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেয়েছে না! এটি আস্তে আস্তে বাড়ছে। যেমন ধরেন, আমার মনোবল। কোনো আত্মীয়-স্বজন হারালে সে সময় যে মনোবল সেটি কি দুইদিনে চেঞ্জ হয়? হয় না। একটু সময় লাগে, একটা সময় এসে আমরা ঐসব ভুলে যাই। ঠিক একইভাবে পুলিশের মনোবলের জন্য একটু সময় দিতে হবে। আর আমার কাছে এমন কিছু নেই যে আমি বললে হয়ে যাবে। এটাতো জাদুর মতো না, আমি চাইলাম হাতে চলে আসলো। এটার জন্য তাদের সবাইকে সময় দিতে হবে।
আন্দোলন পরবর্তী নির্ধারিত সময়ে যে পুলিশ সদস্যরা যোগদান করিনি তাদের শাস্তি দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা জয়েন করেনি তারা আমাদের চোখে ক্রিমিনাল। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। যাদের পাওয়া যাচ্ছে দেখেন না তাদের মাঝে মাঝে ধরা হচ্ছে। যারা আসছে না তাদের ধরা হচ্ছে। আপনারও একটু তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন, আমরা ধরে ফেলব।
সরকার পতন পরবর্তী হওয়া বিভিন্ন মামলা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আগে ভুয়া মামলা করতো পুলিশ। তারা ১০টা নাম আর ৫০টা বেনামি আসামি দিতো। এখন জনগণ দিচ্ছে ১০টা নাম ৫০টা বেনামি। এটির জন্য আমরা টাকা খরচ করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছি, যেন জনগণ জানতে পারে। যদি একচুয়াল মামলা হলে আপনাকে ধরার কথা। এরকম যাদের আছে কাউকে কি ধরা হয়েছে? এটি হয় তো আপনাদের ভেতর থেকে কেউ বা শত্রুতামি করে দিয়েছে। মামলাটাতো আমার পুলিশ, র্যাব, আর্মি, আনসার দেয়নি। পাবলিক দিয়েছে। এজন্য আপনি যে কোনো হেনস্তার শিকার হননি এজন্য আমাদের আরও ধন্যবাদ দেওয়ার কথা।
পার্শ্ববর্তী দেশ অর্থাৎ ভারতের মিডিয়া মিথ্যা প্রচার করে উল্লেখ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ রেখে বলেছেন, আপনাদের কি আরও একটা কথা বলি আমাদের যে ভুল হয় না, তা না, আমাদেরও ভুল হয়। আমরা যদি এখানে কোনো কিছু করি সেটি ধরিয়ে দেন। আমরা যদি কোনো জায়গায় পয়সা খাই সেটিও বলে দেন। কিন্তু আমার একটা অনুরোধ- মিথ্যা সংবাদ প্রচার করবেন না। যেটা ঘটে নাই ওটা বলবেন না। এটাতে কিন্তু পাশের দেশ সুবিধা পেয়ে যাই। আমাদের দেশের মিডিয়ার যে একটা সুনাম আছে, পাশের দেশের মিডিয়ার তেমন সুনাম নেই। তারা সবচেয়ে বেশি মিথ্যায় প্রচার করে। আর ওই মিথ্যাটাকে কাউন্টার করতে পারবেন আপনারা (সাংবাদিক)। আমি বললে যতটা বিশ্বাস করবে না, আপনারা যেটা বলেন মানুষ সেটি বেশি বিশ্বাস করবে। আপনাদের কাছে আমি অনুরোধ করবো, আপনারা এটার কাউন্টার করেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ওপরে অন্য কোনো রাষ্ট্রের উসকানি আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অন্য দেশের উসকানি তো আপনারাই দেখতেছেন। প্রথমেই তো বলেছি, কী হারে পাশের দেশের মিডিয়া মিথ্যাচার করছে।
সম্প্রতি পাকিস্তান থেকে আসা জাহাজ নিয়ে বিভিন্ন গুজব ছড়ানো হচ্ছে, বিষয়টিকে কীভাবে দেখা হচ্ছে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘এই জাহাজটা মিডল ইস্ট থেকে আসছে। সেখান থেকে এসে একটা দেশে গেছে সেখান থেকে আমাদের দেশে আসছে। আমাদের দেশে কোনো দেশের জাহাজ আসা নিষিদ্ধ আছে? আমরা কি কারো কাছে বন্দি যে শুধু তাকেই সেবা করবো? আমার দেশ সবার ওপরে। খেজুর, পেঁয়াজ, আলু-এগুলো সামনের রোজার সময় দরকার। এগুলো কি আমরা আসতে দিবো না? যারা এগুলো রটাচ্ছে তারা আমাদের শত্রু।
জুলাই হত্যাকাণ্ডে চট্টগ্রামে অন্তত ৫০ জন অস্ত্রধারীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে সিএমপি শুধু একজন এবং র্যাব চারজনকে গ্রেফতার করেছে। বাকিদের গ্রেফতার করতে পারেনি। এমনকি অস্ত্রও উদ্ধার করা যায়নি-এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি উপস্থিত পুলিশ কমিশনারকে অস্ত্রধারীদের তালিকা করে তাদের গ্রেফতারে ব্যবস্থা গ্রহণের তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন।
এসময় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান, পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম ও চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ উপস্থিত ছিলেন।