শাপলা বিক্রি করে চলে মুন্সীগঞ্জের শতাধিক পরিবার
বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। অপরূপ সৌন্দর্যের এই ফুল দেখলে যে কারোই মন জুড়ায়। ইচ্ছে করে কাছে গিয়ে ছুঁয়ে দেখার। এই ফুল খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড়, পুকুর-জলাশয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে চাষবাস ছাড়াই জন্ম নেয়।
অপরূপ সৌন্দর্যের পাশাপাশি শাপলা এখন বেশ জনপ্রিয় সবজি তরকারি। মজাদার খাবারের তালিকায় এর চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলছে। ফলে বর্ষার শেষ মৌসুমে বাজারগুলোতে শাপলার যেমন হাট বসে, তেমনি বাড়ি বাড়ি ফেরি করে বিক্রি হয় প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন স্থানেও। আর এই শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান লৌহজং ও শ্রীনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কয়েক শতাধিক পরিবার।
চার থেকে পাঁচ মাস কৃষি জমি পানির নিচে থাকায় এ মৌসুমে কৃষকের তেমন কোনো কাজ নেই। তাই এলাকার অনেক কৃষক এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। কোনো পুঁজির প্রয়োজন না হওয়ায় বিভিন্ন বয়সের লোক এ পেশায় অংশ নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
লতব্দী ইউনিয়নের চর নিমতলার বিল থেকে শাপলা সংগ্রহকারী কানন মিয়া জানান, এসময় একেক জন কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ গুচ্ছ সংগ্রহ করতে পারে। পাইকাররা আবার সংগ্রহকারীর কাছ থেকে এসব শাপলা সংগ্রহ করে একত্রে করে। সিরাজদীখানের রসুনিয়া, ইমামগঞ্জ তালতলায়, হাসাড়া, ছন বাড়ির মোড় ও আড়িয়াল বিলের পাশে শাপলার পাইকারি ক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। পাইকাররা এখান থেকে শাপলা ক্রয় করে ঢাকার যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে বিক্রি করে থাকে।
ঢাকার পাইকার কান্চন মিঞা বার্তা২৪.কমের এই প্রতিবেদককে জানান, শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে এক গুচ্ছ শাপলা ২০ টাকা দরে ক্রয় করা হয়। তারপর গাড়ি ভাড়া গড়ে ৩ টাকা, লেবার ১ টাকা, আড়ত খরচ ২ টাকাসহ মোট ২৭ থেকে ২৮ টাকা খরচ পড়ে । যাত্রাবাড়ী আড়তে শাপলার গুচ্ছ বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
কোনো রকম পুঁজি ছাড়াই শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন সিরাজদিখানসহ জেলার কয়েকশ’ পরিবার। বর্ষার এই মৌসুমে কৃষক ও অভাবী লোকজন বেকার হয়ে শাপলা কুড়িয়ে তা বিক্রির পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন।
সূত্র মতে, বর্ষায় ডুবে যাওয়া ধান, পাট ও ধঞ্চে ক্ষেতে শাপলা বেশি জন্মায়। এছাড়া জেলার খাল-বিলগুলোতেও শাপলা ফুল জন্মে থাকে। আষাঢ় থেকে শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত পাওয়া যায় শাপলা। শাপলা সংগ্রহকারীরা ভোরে নৌকা নিয়ে ডুবে যাওয়া জমিতে ও বিলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে শাপলা তুলতে থাকেন।
কয়েকজন শাপলা সংগ্রহকারী জানান, এ সময়ে একেকজন কমপক্ষে ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ গুচ্ছ (৭০-৮০ পিস শাপলায় ১ গুচ্ছ ধরা হয়) সংগ্রহ করতে পারে। পাইকাররা আবার এসব শাপলা সংগ্রহকারীর কাছ থেকে সংগ্রহ করে একত্রে করেন। দিন শেষে ৪০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা আয় করে থাকেন। বছরের ৪ মাস এ কাজ করেন। সিরাজদিখানের রসুনিয়া, ইমামগঞ্জ, লতিব্দী ও তালতলায় আর শ্রীনর উপজেলার হাসাড়াও আড়িওল বিলের পাইকারি ক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। পাইকাররা পরে ঢাকার যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন।
শ্রীনগর উপজেলার হাফিজ মিয়া জানান, শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার গুচ্ছ শাপলা ক্রয় করে থাকেন। সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে এক গুচ্ছ শাপলা ২০-৩০ টাকা দরে ক্রয় করেন তিনি। তারপর ট্রাক ভাড়া গড়ে ৩ টাকা, লেবার ১ টাকা, আড়ত খরচ ২ টাকাসহ পায় ৩০ টাকার মতো খরচ পড়ে।
এই বিষয়ে জেলার কৃষি কর্মকর্তা জানান, শাপলা আসলে কোনো কৃষি পণ্যের আওতাভুক্ত নয়। এটি প্রাকৃতিকভাবে কৃষি জমি ও পুকুর কিংবা ডোবাতে জন্ম নেয়, এই বিষয়ে আমাদের কোনো পরামর্শ দেয়ার সুযোগ হয়ে উঠে না। তবে আমরা চেষ্টা করি, কৃষকদের সহায়তা করার। এছাড়াও আমরা কৃষকদের শাপলা বেশি দিন সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকি। বেশির ভাগ শাপলা ঢাকাতে বিক্রি হয়ে থাকে।