ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য ও পাসপোর্টধারীদের যাতায়াত স্বাভাবিক
ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেফতার নিয়ে দেশ বিরোধী নানান ষড়যন্ত্রের মধ্যেও ভারত-বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতায় স্বাভাবিক রয়েছে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে উভয় দেশের বাণিজ্য ও পাসপোর্টধারী যাতায়াত ব্যবস্থা।
বাণিজ্যিক নেতারা বলছেন, বাণিজ্য সেবা বা ভিসা বন্ধ হলে দুই দেশেরই ক্ষতি হবে। তাই উসকানিদাতাদের বিচ্ছিন্ন ঘটনা যাতে দুই দেশের বাণিজ্যিক ও সৌহার্দ্য সম্প্রীতির সম্পর্কে বিবেধ সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য সরকারকে সজাগ থাকতে হবে। এদিকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করতে দেখা গেছে।
জানা যায়, দেশের স্থলপথে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যে বাণিজ্য বা পাসপোর্টধারী যাতায়াত করে তার ৮০ শতাংশ হয়ে থাকে বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর ব্যবহার করে। বছরে প্রায় ২৩ লাখ পাসপোর্টধারীদের কাছ থেকে ভিসা ফি বাবদ ভারত সরকারের আয় হয় ১৫০ কোটি টাকার মত। আর ১৪ লাখ মার্কিন বিলিয়ন ডলারের পণ্য এদেশে রফতানি করে ভারত। হাজার হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থীরা কম খরচে লেখাপড়া করছে এদেশে।
জুলাই-আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র, জনতার আন্দোলনে এপথে দুই মাস স্বাভাবিক আমদানি-রফতানি বানিজ্য ও পাসপোর্টধারীদের যাতায়াত বিঘ্ন ঘটে। পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর যখন ধীরে ধীরে যখন দেশে ফিরতে শুরু করে ঠিক তখনি দেশ বিরোধীরা এ সম্পর্ক নষ্ট করতে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে নানান ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সম্প্রতি দেশদ্রোহীতার অপরাধে গ্রেফতার করা হয় ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস। এরপর থেকে তার মুক্তির দাবির অজুহাতে আবারও দেশ বিরোধীরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। তাদের উসকানিতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উগ্রবাদী সংগঠনগুলো বাংলাদেশিদের ভিসা, চিকিৎসা সেবা ও দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ করতে ভারত সরকারকে চাপ প্রয়োগ করছে। তবে এখনও পর্যন্ত ভারত-বাংলা রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক অটুট থাকায় স্বাভাবিক রয়েছে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও যাতায়াত ব্যবস্থা।
বেনাপোল বন্দরে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা ভারতীয় ট্রাক চালক অনিমেস সোমবার সকালে জানান, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে মুক্তির দাবিতে পেট্রাপোল সীমান্তে সভা, সমাবেশ করছে কিছু সংগঠন। অনেকে বাণিজ্য ও পাসপোর্টধারীদের যাতায়াত বন্ধ করতে বক্তব্য রাখছেন। তবে বাণিজ্য বা যাতায়াত বন্ধের কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি ভারত সরকারের পক্ষ থেকে। ফলে তাদের পণ্য পরিবহনে কোন বাধা সৃষ্টি হয়নি।
বাংলাদেশি রফতানি পণ্য পেট্রাপোল বন্দরে খালি করে ফেরত আসার পথে ট্রাক চালক মুসলিম জানান, রফতানি বাণিজ্য পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষের কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তিনি স্বাভাবিক সময়ের মত পণ্য খালি করে ফিরে এসেছেন।
ভারত ফেরত পাসপোর্টধারী আব্দুল মুজিত সোমবার সকালে জানান, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কিছু উগ্রবাদী সংগঠন আছে তারা উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। কিন্তু ভারত সরকারের পক্ষে কেউ ভ্রমণে বাধা সৃষ্টি করছেনা। তবে আতঙ্কের কারণে অনেক বাংলাদেশি আছেন যারা চেকপোষ্ট বন্ধের খবর শুনে দেশে ফিরছে। অপ্রতিকর ঘটনা এড়াতে সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সেক্রেটারি আজিম উদ্দীন গাজী জানান, বাণিজ্য বা ভিসা বন্ধ হলে দুই দেশেরই ক্ষতি হবে। কারণ বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে পণ্য ভারতে রফতানি হয়। এছাড়া হাজার হাজার ভারতীয় রয়েছেন যারা কম খরচে লেখাপড়া করতে বাংলাদেশে রয়েছেন।
বেনাপোল স্থলবন্দরের সহকারি পরিচারক কাজী রতন সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ভারত থেতে ১২০ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি ও ৭৬ ট্রাক পণ্য রফতানি হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাতায়াত করেছে ৪ হাজারের ঊর্ধ্বে। বাণিজ্য ও যাতায়াত এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে জানান তিনি।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রন কর্তৃপক্ষ এমন কোন নির্দেশনা দেয়নি যে পাসপোঁর্টধারী যাতায়াত বন্ধ রাখবে। ফলে দুই দেশের মধ্যে যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
উল্লেখ্য, দেশে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় গ্রেফতার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে মুক্তি না দিলে আজ সকাল থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে আমদানি-রফতানি, বাংলাদেশিদের ভিসা ও চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দিবে বলে গত বুধবার হুমকি দিয়েছিলেন বিজেপি নেতা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভার বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী।