ফসল রক্ষায় কারেন্ট জাল ব্যবহার, মারা যাচ্ছে পাখি

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ফসল রক্ষায় কারেন্ট জাল ব্যবহার

ফসল রক্ষায় কারেন্ট জাল ব্যবহার

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সবজি ক্ষেতে পাখির উপদ্রব ঠেকাতে কৃষক ববহার করছে কারেন্ট জাল। আর এ সব কারেন্ট জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোয়ালন্দ উপজেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় বিপুল পরিমাণ জমিতে নানান ধরনের সবজির আবাদ হয়ে থাকে। এরমধ্যে বেগুন ও টমেটোর ক্ষেতে নানা প্রজাতির পাখির উপদ্রব থাকায় কৃষকরা ফসল রক্ষা করতে অনেক পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ক্ষেতের মধ্যে বিভিন্ন রংয়ের ফিতা টানানো, টিনের ঢনঢনি বাজানো, কাকতাড়ুয়া স্থাপনের মতো পরিবেশবান্ধব অনেকে পদ্ধতিই।

বিজ্ঞাপন

আবার অনেক এলাকায় কারেন্ট জাল দিয়ে ফসলের ক্ষেতকে পুরোপুরি ঢেকে দিতেও দেখা গেছে। এতে করে ওই ক্ষেতে পোকা কিংবা সবজি খেতে আসা বক, শালিক, ঘুঘু, বাঁদুর, চড়ুইসহ বিভিন্ন দেশীয় পাখি জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে।

উজানচর ইউনিয়নের চরকর্ণেশন এলাকার কৃষকেরা জানান হাসেম খান জানান, এবার তাদের ফলন ভালো হয়েছে। বেগুনের ওজন হয়েছে ২০০ থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত। কিন্তু ক্ষেতে পাখি বসে ঠোকা দিয়ে অনেক বেগুন নষ্ট করে ফেলছে। ঠোকানো বেগুন বিক্রি করা যাচ্ছে না। বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও পাখি ঠেকানো যায়নি। তাই বাধ্য হয়েই তারা কারেন্ট জাল ব্যবহার করছে। তবে জালে আটকা পড়া পাখি তারা ছেড়ে দেন বলে দাবি করেন।

বিজ্ঞাপন

আরও জানা যায়, গোয়ালন্দ নদী এলাকা হওয়ায় কৃষকরা জেলেদের কাছ থেকে সহজেই কম দামে পুরনো কারেন্ট জাল সংগ্রহ করতে পারেন। এতে কৃষকরা এই পদ্ধতিতে সবজি রক্ষায় আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এছাড়াও অনেক পাখিই আছে যেগুলোর বেগুন বা অন্যান্য সবজি খাওয়ার অভ্যাস নেই। অথচ কারেন্ট জালের ফাঁদে পড়ে নিষ্ঠুরতার শিকার হচ্ছে পরিবেশবান্ধব দোয়েল, শালিক, বুলবুলি, পেঁচা, চড়ুই ও কবুতরসহ নানা প্রজাতির পাখি।

পাখিপ্রেমীরা মনে করছেন, স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগের নীরবতায় বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা অবাধে কারেন্ট জালের মতো পাখির জন্য বিপদজনক পদ্ধতি ব্যবহার করে ফসল রক্ষার নামে পাখি নিধন করছেন। তবে প্রশাসন বলছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ খোকন উজ্জামান জানান, ‘খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ফসল উৎপাদনের যেমন বিকল্প নেই ঠিক তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে পরিবেশে থাকা পশু পাখিরও বিকল্প নেই। পাখি যতটুকু না ফসলের ক্ষতি করে, সবজির ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে তার চেয়ে অনেক বেশি উপকার করে। তাই পাখি তাড়াতে কারেন্ট জালের মতো মৃত্যু ফাঁদ পাতা উচিৎ নয়।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ফসল রক্ষা করতে গিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী পশু-পাখি নিধন করা যাবে না। প্রকৃতি রক্ষার্থে পশু-পাখিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কেউ যেন ফসল রক্ষা করতে গিয়ে পাখিদের নিধন না করে। পাখি নিধনের তথ্য পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।