আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া বঞ্চিত ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদমর্যাদা ও আর্থিক সুবিধা দেওয়া হবে। উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে এসব কর্মকর্তাকে ‘ভূতাপেক্ষ’ পদোন্নতির সুপারিশ করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত এ–সংক্রান্ত একটি কমিটি।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে মহার্ঘ ভাতা ও বঞ্চনা নিরসন কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান একথা জানান।
বঞ্চনা নিরসন কমিটির সুপারিশ ও সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে মোখলেস উর রহমান বলেন, চাকরি যারা করেন, তারা জানেন, ন্যূনতম একটি প্রক্রিয়ার ব্যাপার আছে। এ বিষয়ে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের একটি নির্দেশনা লাগবে। তবে, ইতিবাচক। চাকরির কিছু বিধিবিধান আছে। এটি মানতে হবে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে এ প্রক্রিয়া শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে জনপ্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, এটি ঠিক পদোন্নতি না। এটি হলো সামাজিক মান–মর্যাদা। আর্থিক সুবিধা ও পদ-পদবি দিয়ে একটি সরকারি আদেশ জারি হবে। এর ভিত্তিতে অর্থনৈতিক আদেশে তারা এই টাকা পাবেন। সরকার নীতিগতভাবে একমত। একটু সময়ের ব্যাপার।
ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, পদে বসানো এক বিষয় আর পদমর্যাদা এক বিষয়। এটি হলো ওই পদে মর্যাদা দিয়ে সরকারি আদেশ দেওয়া হবে। হিসাবটি করবে এজি অফিস। তাদের বিজ্ঞানসম্মত নিয়ম আছে। পেনশনের ক্ষেত্রেও এই সুবিধা প্রযোজ্য হবে।
এর আগে, গত ১০ ডিসেম্বর জনপ্রশাসনে পদোন্নতিবঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা কমিটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ১৬ সেপ্টেম্বর সাবেক অর্থসচিব এবং বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক জাকির আহমেদ খানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল। আওয়ামী লীগের আমলে ২০০৯ সাল থেকে গত ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সরকারি চাকরিতে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার এবং এ সময়ের মধ্যে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য এ কমিটি গঠন করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্য মোতাবেক, নির্ধারিত সময়ে মারা যাওয়া কর্মকর্তাদের পক্ষে তাদের পরিবারের সদস্যদের করা ১৯টি আবেদনসহ মোট ১ হাজার ৫৪০টি আবেদন জমা পড়েছিল। এর মধ্যে ১৩টি আবেদন বিভিন্ন কারণে কমিটির আওতার বাইরে ছিল। ফলে কমিটি বাকি ১ হাজার ৫২৭টি আবেদন যাচাই-বাছাই করে সুপারিশ তৈরি করেছে। আবেদনগুলো যাচাই-বাছাইয়ে কমিটি ২৮টি সভা করে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সুপারিশ প্রণয়ন করেছে, যা প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সচিব পদে ১১৯ জন, গ্রেড-১ (সচিবের সমান বেতন গ্রেড) এ ৪১ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ৫২৮ জন, যুগ্ম সচিব পদে ৭২ জন ও উপসচিব পদে চারজনকে পদোন্নতির সুপারিশ করেছে কমিটি। যেহেতু তারা অবসরে গেছেন, সে জন্য তাদের ‘ভূতাপেক্ষ’ পদোন্নতি দেওয়া যেতে পারে বলে সুপারিশ করা হয়েছে। এই ৭৬৪ কর্মকর্তার মধ্যে ৯ জনকে চার ধাপ, ৩৪ জনকে তিন ধাপ, ১২৬ জনকে দুই ধাপ ও ৫৯৫ জনকে এক ধাপ পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি। নতুন পদমর্যাদা নির্ধারণের পর বঞ্চিত এ কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধা প্রদানে মোট খরচ হবে আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা।