শব্দদূষণ বর্তমানে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি কেবল শারীরিক ক্ষতি নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও গভীর প্রভাব ফেলছে। শব্দদূষণ রোধে সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন, এটি মরণঘাতী সাইলেন্ট কিলার।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদফতর কার্যালয়ে ‘শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প’ এর আওতায় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম গবেষণাগারের পরিচালক (উপসচিব) নাসিম ফারহানা শিরীনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ইএনটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মিটন চাকমা। অনুষ্ঠানে শব্দদূষণের ওপর বিস্তারিত তুলেন ধরেন ডা. মিটন চাকমা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, শব্দ আমাদের যোগাযোগের মাধ্যম হলেও অতিরিক্ত শব্দ আমাদের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। ঢাকা শব্দদূষণের দিক থেকে বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে, যা মোটেই কাম্য নয়। কিন্তু অতিরিক্ত শব্দ আমাদের জন্য ক্ষতি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশ দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু কিছু সেক্টরে আমরা স্থির দাঁড়িয়ে আছি। কিংবা মাইনাজ হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর মধ্যে কতগুলো জায়গায় আমার যা আমরা প্রথম। যেমন শব্দ দূষণের ঢাকা প্রথম। এটি কোনোভাবে কাম্য না।
‘এখান থেকে জেনেছি প্রজেক্ট শুরু হয়েছে ২০১৪ সালে। কিন্তু আমিও ২০১৭-তে পরিবেশ নিয়ে কাজ করেছি। ঠিক তখন থেকে আমরা কাজ করছি। ২০০৬ সালে শব্দদূষণ নিয়ে বিধিমালা হয়েছে। কিন্তু আমরা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। আমরা কতদিন এরকম সেমিনার মিটিং সচেতনতামূলক কার্যক্রম করব? বিভিন্ন মরণব্যাধি রোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দেশে নাড়াচাড়া হচ্ছে কিন্তু এই শব্দ দূষণ নিয়ে কেন হচ্ছে না। কারণ এটি গুটিকয়েক দেশের মধ্যে রয়েছে। আমাদের এই সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের একটি টাইম সেট করতে হবে। প্রশিক্ষণ আমরা আর কতদিন নেব।’
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসক বলেছেন- এই শব্দ দূষণের শারীরিক ক্ষতির চেয়ে মানসিকভাবে বেশি ক্ষতি করবে। বিভিন্ন দেশের মত আমাদের কেউ সচেতন হতে হবে আগাতে হবে। এই শব্দ দূষণ আমাদের অনেক ক্ষতি করে। যেমন- যে গাড়ি চালকরা হরণ দেয় তাদেরকেও কিন্তু এটি বিরক্ত করে। শব্দ দূষণ আমাদের শিশু এবং জেন-জিদের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। ভবিষ্যতে আমাদের এসব বিষয়ে কাজ করা উচিত।
চসিকে প্রধান নির্বাহী বলেন, শব্দ দূষণ রোধে আমরা কি করেছি? এটার কিন্তু দায়ভার সিটি কর্পোরেশনসহ আমাদের সবার নিতে হবে। স্মার্ট ট্রাফিক সিগন্যাল সিস্টেম এটি সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব কর্তব্যে পড়ে। যেমন হর্ণ দেয় গাড়ির চালকরা, তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে বিআরটিএ। রাস্তা বানায় হচ্ছে সিটি করপোরেশন। আর সবগুলোকে সমন্বয়ের দায়িত্ব হচ্ছে পরিবেশ অধিদফতর, তারাও এ জায়গায় ফেল করছে। আমি জানি না কত বছর তারা এ প্রজেক্ট চালাবে, কতদিন লাগবে আমাদের সচেতন করতে।
শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, শব্দ দূষণ এটি হচ্ছে মরণঘাতী সাইলেন্ট কিলার, এটি আমাদের পুরো প্রজন্মকে নষ্ট করে ফেলতেছে। গণমাধ্যম কর্মীদের লেখালেখি করা দরকার এবং আগামী নতুন প্রজন্মের নিশ্চিত করার জন্য দায়িত্ব তা আমাদের নিতে হবে।
চমেকের সহকারী অধ্যাপক ডা. মিটন চাকমা শব্দদূষণের ভয়াবহ প্রভাব নিয়ে বলেন, শব্দদূষণ দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যা যেমন শ্রবণশক্তি হ্রাস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের কারণ হতে পারে। এর চেয়ে বড় বিপদ হলো মানসিক স্বাস্থ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব।
পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম গবেষণাগারের পরিচালক (উপসচিব) নাসিম ফারহানা শিরীন বলেন, মানুষ মিডিয়ায় যা দেখে বা পড়ে, তাই বিশ্বাস করে। সাংবাদিকদের দায়িত্ব শব্দদূষণ নিয়ে লেখালেখি ও প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করা। নতুন প্রজন্ম শব্দদূষণ সম্পর্কে জানে, কিন্তু তাদের আরও কার্যকরভাবে এই সমস্যার সমাধানে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, শব্দদূষণ রোধে সবারই ভূমিকা রাখতে হবে। এটি রোধে সিটি কর্পোরেশন, বিআরটিএ এবং পরিবেশ অধিদফতরের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। স্মার্ট ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা এবং কঠোর আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
সাংবাদিকসহ পরিবেশ এবং শব্দদূষণ নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা এ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।