আসছে নতুন রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব নিয়ে কৌতূহল
ছাত্র নেতৃত্বের রাজনৈতিক দল ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে চলছে। দলের গঠনতন্ত্রে কি কি থাকবে তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। জানা গেছে, সংসদীয় আসন, উপজেলা ও ইউনিয়নে বিএনপির দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের দলে টানার চেষ্টা করবে তারা। তবে আওয়ামী লীগের নেতাদের জন্য দুয়ার থাকবে বন্ধ।
ছাত্র নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে রোববার (২৬ জানুয়ারি) একাধিক জাতীয় দৈনিকে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ওই সব প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন এই রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের শীর্ষে আসতে পারে জুলাই গণ অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া পরিচিত ১১ মুখ। তিন ছাত্র উপদেষ্টার মধ্যে অন্তত একজন হবেন দলের কাণ্ডারী।
সূত্রে জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের এক দফা ‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণরা। চাঁদাবাজি, দখলবাজি, সিন্ডিকেট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে তাদের দল।
সূত্রে আরও জানা গেছে, ফেব্রুয়ারির ১০ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে যে কোনো দিন ঘোষণা করা হবে নতুন এই দলটির নাম এবং আহ্বায়ক কমিটি। কমিটির শর্টলিস্টে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা তিন ছাত্র উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম। আরও রয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সদস্যসচিব আরিফ সোহেল ও মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।
জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ জানান, এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা তিন ছাত্র উপদেষ্টাকে নিয়ে। তাঁদের নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। দল ঘোষণার আগ পর্যন্ত তাঁদের নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলবে। দল এবং অন্তর্বর্তী সরকার উভয় পক্ষের সুবিধা বিবেচনা করে যে কোনো একজন কিংবা দুজন সরকার থেকে পদত্যাগ করে রাজনৈতিক দলে এসে যোগ দেবেন।
প্ল্যাটফরম দুটির নেতারা জানান, দলে যোগদান এবং নেতৃত্ব গ্রহণের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নাম। রাজনৈতিক দলের নাম কী হবে এ বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায় থেকে এ পর্যন্ত শতাধিক নামের প্রস্তাবনা এসেছে বলে জানিয়েছেন অনিচ্ছুক একাধিক নেতা।
তারা বলেন, নামগুলো থেকে এরই মধ্যে কিছু নাম শর্টলিস্টে তোলা হয়েছে। আত্মপ্রকাশের দিন চূড়ান্ত নামটি ঘোষণা করা হবে।
গঠনতন্ত্রের বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য এবং সহ-মুখপাত্র মুশফিক উস সালেহীন বলেন, তৃণমূল থেকেও যোগ্যতার বলে একজন ব্যক্তি যাতে শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসতে পারেন, এমন একটি সাংগঠনিক কাঠামো নির্মাণ করতে চাই আমরা। জুলাই গণ অভ্যুত্থানের দিনগুলোর মতোই দেশের মানুষ যেন নতুন দলের গঠনতন্ত্রকেও নিজেদের বলে গ্রহণ ও ধারণ করতে পারে- এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি।
নাগরিক কমিটির এক সূত্র জানায়, দল ঘোষণা নিয়ে একটা সাড়া ফেলানোর চিন্তা ভাবনা রয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ ও একাত্তরের চেয়ে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে গৌরবান্বিত দেখানোর অভিযোগ করা হচ্ছে। তা মোচনে প্রাথমিকভাবে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে দলের আত্মপ্রকাশের চিন্তা ছিল। কিন্তু রমজান এবং ওই দিন থেকে ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরু হওয়ায় আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বড় জমায়েত সম্ভব হবে না– চিন্তা থেকে ফেব্রুয়ারি বেছে নেওয়া হয়েছে।