সদস্য নবায়ন করে ৫০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য বিএনপির
সারা দেশে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতাকর্মীদের তথ্য হালনাগাদে সদস্য নবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। গত ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ জন্য দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীকে আহ্বায়ক এবং কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জান মিল্লাতকে সদস্য সচিব করে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদ নবায়ন কার্যক্রম কমিটি গঠন করা হয়েছে। দলটির প্রাথমিক সদস্য পদ নবায়ন ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বার্তা২৪.কম-এর সঙ্গে কথা বলেছেন এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন স্টাফ রিপোর্টার মো. নজরুল ইসলাম।
বার্তা২৪.কম: সদস্য নবায়নে বিএনপির লক্ষ্য কী?
এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত: প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও সদস্য সংগ্রহ একটা দলের জন্য চলমান প্রক্রিয়া। আমরা ২০১৭ সালে সবশেষ সদস্য পদ সংগ্রহ করেছিলাম। আপনারা জানেন, পতিত সরকার আমাদের কোনো কার্যক্রমই চলমান রাখতে দেয়নি। কাজ চলমান রাখার ক্ষেত্রে বারবার বাধার সম্মুখীন হয়েছি। এমনকি আমরা কোনো মিটিং মিছিলও করতে পারিনি। বিগত সময়ে বিশেষ করে ২০১৮ ইলেকশনের পর থেকে আমাদের ৬০ লক্ষ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে এবং গুম খুন কতো হয়েছে আপনারা তা জানেন। এরমধ্যে আমাদের কার্যক্রমটা করতে পারিনি। সদস্য নবায়নটা আমরা এখন করছি এই জন্য- যারা ২০১৭ সালে আমাদের প্রাথমিক সদস্য হিসেবে পরিগণিত হয়েছিলো তাদের মধ্যে অনেককে আমরা বাদ দিয়েছি, বহিষ্কার করেছি, অনেকে মারা গেছেন। সে কারণে বর্তমানে সদস্য নবায়ন ফরম আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটির অনুমোদনক্রমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন সদস্য নবায়নের জন্য। মূলত বিএনপির কতোগুলো সদস্য সারা বাংলাদেশে রয়েছে এই নবায়নের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারব। এই নবায়ন প্রক্রিয়ায় সদস্যদের জন্য ২০ টাকা করে চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাঁদার অংশটি আমাদের দলীয় কাজেই ব্যয় হবে।
বার্তা২৪.কম: নতুন সদস্য কেন গ্রহণ করছেন না?
এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত: আমরা নবায়নটা করছি শুধুমাত্র প্রাথমিক সদস্য পদে আগে যারা ছিল তাদের। ২০১৭ সালে যারা সদস্য হয়েছিলো শুধুমাত্র তারাই নবায়ন করতে পারবে। এখন কোনো নতুন সদস্য আমরা নেব না। নতুন সদস্য সংগ্রহ করতে গেলে দেখা যাবে ফ্যাসিবাদের যে পতন হয়েছে তাদের অনেকে রুপও বদলেছে। প্রান্তিক থেকে শুরু করে সব জায়গাতে সবাই এখন বিএনপি নেতা, বিএনপির সমর্থক, সদস্য বলে নিজেদেরকে পরিচয় দিচ্ছে। কোথাও কোথাও দেখা যাচ্ছে কিছু অঘটন, কিছু চাঁদাবাজি, কিছু দখলবাজি সোঁজাসুজি বিএনপির নামে করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি তারা বিএনপির সদস্যই নন। যারা যারা বিএনপির সদস্য তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নানান কারণে দল থেকে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার লোককে বহিষ্কার, সতর্কীকরণ, সাময়িকভাবে সদস্যপদ স্থগিত করেছেন। এ জন্যই আমরা সদস্য নবায়ন করব, সংগ্রহ করব না। যাতে নতুন করে কেউ দলে ভিড়তে না পারে।
বার্তা২৪.কম: তৃণমূল পর্যায়ে সদস্য নবায়ন ফরম বিতরণ করবেন কিভাবে?
এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত: সদস্য নবায়ন ফরম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এ জন্য একটা কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটির আহ্বায়ক আমাদের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং আমি সদস্য সচিব। প্রত্যেকটি জেলা থেকে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পুরো জেলার জন্য ফরম সংগ্রহ করে নিয়ে যাবেন। নবায়ন ফরমের তিনটি অংশ থাকবে, যার একটা কপি সদস্যের কাছে থাকবে, আরেকটা কপি জেলায় থাকবে, আরেকটা কপি আমাদের কাছে জমা দেবেন।
বার্তা২৪.কম: সদস্য নবায়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত: আমাদের প্রথম সদস্য নবায়ন করেছেন দলের ভাপ্রাপ্ত চেয়াম্যান তারেক রহমান। তারপর স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা। এতে সারা দেশের নেতাকর্মীরা উৎসাহিত হয়েছেন। তারা সবাই নবায়ন করতে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা, উৎসাহ বেড়ে গেছে। আমরা মনে করি সকলেই স্ব-ইচ্ছায় এটা নবায়ন করবেন। অনেকই দাবি তুলবেন আমাদেরকে সদস্য করা হোক। যেমন তরুণ ভোটার রয়েছে ১ কোটি ১৭ লক্ষ। তারা হয়তো অনেকই আমাদের সদস্য নন। এ প্রক্রিয়ায় তারাও উৎসাহিত হবে পরে তারাও আবেদন করবে। সেটা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ আমরা স্ট্যান্ডিং কমিটিতে তুলে ধরব, তারা অনুমোদন দিলে সে প্রক্রিয়াতেও আমরা যাব।
বার্তা২৪.কম: সারা দেশে বিএনপির কতজন সদস্য রয়েছে?
এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত: আশা করি একদম তৃণমূল থেকে আরম্ভ করে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, মহানগর, বিভাগ মিলিয়ে অঙ্গ সংগঠনসহ আড়াই থেকে তিন কোটি সদস্য নবায়ন করবেন। এতে আমাদের দলীয় ফান্ডে ৫০ কোটি টাকা জমা হবে। যেহেতু সামনে নির্বাচন এই টাকা দলীয় কাজেই ব্যবহার করা হবে। সে কারণেই এ পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি।
বার্তা২৪.কম: সদস্যদের চাঁদার টাকায় জামায়াতে ইসলামি পরিচালিত হয় বলে আমরা জেনেছি। বিএনপিও কি একই পথে হাটছে?
এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত: জামায়াতে ইসলামকে অনুসরণ করার আমাদের কোনো প্রয়োজন নাই। বরং তারা আমাদের অনুসরণ করতে পারে। বিএনপি একটা বৃহৎ দল। এই দলের কার্যক্রম শহীদ রাষ্ট্রপতি যেভাবে শুরু করেছিলেন সেই আদর্শ নিয়েই আমরা চলছি। জামায়াতে ইসলাম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দলের ওপর ভর করেছে। আমি মনে করি তাদের সদস্য সংগ্রহের যে প্রক্রিয়া সেটা আমাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। বিগত সময়ে জামায়াতে ইসলামির ভোট ছিল ৩ পার্সেন্ট, সেটা হয়তো বেড়ে ৪/৫ পার্সেন্টে পৌঁছেছে।
বার্তা২৪.কম: বিএনপির টাকার উৎস কী?
এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত: বিএনপি জনগণের দল। এই যে সদস্য নবায়ন হচ্ছে এসব টাকা দলীয় ফান্ডে যাবে। এছাড়া অনেকে ডোনেট করে থাকেন যা সব লিপিবদ্ধ করা আছে। এসব টাকা নির্দিষ্ট ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমেই আসে। ব্যাংকে থেকে জমা এবং উত্তোলন চেকের মাধ্যমে হয়। বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক প্রোগ্রাম যখন হয় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং আমি কোষাধ্যক্ষ হিসেবে সাইন করে টাকা উত্তোলন করে থাকি। একটা স্পষ্ট হিসেবের মাধ্যমেই কাজটি করে থাকি। এ জন্য আমাদের একটা সিএ ফার্ম আছে। যাদের দ্বারা আমরা হিসেব নিরীক্ষা করাই। এছাড়া আমাদের নিজস্ব একাউন্টস ডিপার্টম্যান্ট আছে। প্রতি বছরই আমাদের আয় ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে দাখিল করতে হয়। সেটাও আমরা স্বচ্ছভাবে দিয়ে থাকি।