খেজুর রসের স্বাদ নিতে ছুটে যাচ্ছেন রসপ্রেমীরা

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা) | 2024-12-15 14:50:13

গ্রাম বাংলার শীতের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে খেজুর রসের মাদকতা। শীতের কুয়াশামাখা সকালে গাছ থেকে নামানো টাটকা এক গ্লাস খেজুর রসের স্বাদ যিনি নিয়েছেন, তিনিই জানেন এর তুলনা অন্য কোনো পানীয়ের সঙ্গেই চলে না। দিন দিন খেজুর গাছের সংখ্যা কমে আসছে, সেই সঙ্গে কমছে ‘গাছি’ বা খেজুরের রস সংগ্রহ করার মানুষের সংখ্যা।

তবে রাজধানী ঢাকার অদূরে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়াতে কিন্তু খেজুর রস এখনও পাওয়া যায়। তাই অনেকে টাটকা রসের স্বাদ পেতে প্রচণ্ড শীত আর কুয়াশা উপেক্ষা করে ভোরবেলা খেজুর রস খাওয়ার জন্য আশুলিয়াতে প্রতিদিনই ভিড় করছে মানুষ।

শীতের শুরুতে চাষিরা খেজুর গাছ থেকে রস আহরণ করে থাকেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আশুলিয়ায় গাছিরা এসে শীতের শুরুতেই এই রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ এবং মাঘ এই চার মাস গাছিরা চরম ব্যস্ত সময় পার করেন।

খেজুরের রস খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এই রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া যেন একটি চমৎকার শিল্পকর্ম। রস খেতে এসে গাছিদের রস সংগ্রহ মনোযোগ দিয়েই উপভোগ করেন রস প্রেমীরা।

সরেজমিনে রোববার সকালে আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের দিয়াখালী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, খেজুর রস প্রেমীদের ভিড়। গাছি আসার আগে খেজুরের রস প্রেমীরা অপেক্ষা করতে থাকেন। গাছিরা রস প্রেমীদের সামনে রস সংগ্রহ করে তাদের পান করতে দেন। পোকামাকড় এবং পাখ পাখালির সংস্পর্শে যাতে এই রস না আসে সে কারণে চাষিরা রসের সংগ্রহস্থলে বাঁশের চাটাই ব্যবহার করেন।

খেজুরের রস পান করতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, আমি অনেক দূর থেকে রস খেতে আসছি এখানে। রসের মান অনেক ভালো। কোন ভেজাল মেশানো হয় না।

আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর থেকে রস পান করতে আসা আরেক ব্যক্তি বলেন, এই রস খুব ভালো। আমি নিশ্চিন্তপুর থেকে আসছি রস খাওয়ার জন্য। রস খেলাম খুব ভালো।

আগের দিন বিকালে ‘গাছি’ খেজুর গাছে উঠে কলসি বেঁধে আসে রস সংগ্রহের জন্য। সারারাত সেই কলসিতে রস জমা হয় এবং ভোরবেলা তা নামানো হয়। সাধারণত অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত খেজুর রস সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এই রস কাঁচা বা গরম করে খাওয়া হয়। খেজুরের রসকে ফুটিয়েই খেজুরের গুড় বা পাটালি তৈরি করা হয়, যা খাদ্যরসিক বাঙালির পিঠে-পুলি-পায়েসের অন্যতম একটি উপাদান।

কাঁচা খেজুরের রস খেতে সাবধান

বাদুড়ের মুখের নিঃসৃত লালা এমনকি তাদের মলমূত্র খেজুরের রসের সঙ্গে মিশে যায়। এ রস কাঁচা খেয়ে নিপাহ ভাইরাস সরাসরি মানুষের মধ্যে সংক্রমিত করে। এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই এখনই সংক্রমণ ঠেকানো না গেলে এ রোগ মহামারি রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। তাই খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া থেকে সাবধান করেছে সংস্থাটি।

Related News