দেশে খাদ্যের সার্বিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক: অর্থ উপদেষ্টা
অর্থনীতি
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বর্তমানে দেশে খাদ্যের সার্বিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক। বাজারে সেটার প্রতিফলন পড়েছে কি পড়েনি, তা ভিন্ন বিষয়। আমাদের স্টক ভালো।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) খাদ্যপরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য নিয়মিত সরবরাহ নিশ্চিত করা। আরেকটি লক্ষ্য হলো বাফার স্টক করা অর্থাৎ সরকারি গুদামে খাদ্য মজুদ রাখা। এভাবে খাদ্য মজুদ না থাকলে প্রাইভেট সেক্টর সুযোগ পায়, তারা নানাভাবে মেনুপুলেট করতে চেষ্টা করে।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভ্যাট বাড়ানোর সঙ্গে মহার্ঘ ভাতার অর্থ সংস্থান বা আইএমএফের পরামর্শ সম্পর্কিত নয়। বাংলাদেশ সবচেয়ে কম ভ্যাট দেয়া দেশ। এত কম ট্যাক্স দিয়ে ভালো কিছু প্রত্যাশা করা ঠিক নয়।
বিজ্ঞাপন
অত্যাবশ্যকীয় জিনিসের ওপর ভ্যাট বাড়ানো হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১২৫ টাকা দিয়ে পৃথিবীর কোন দেশে চশমা পাওয়া যায়? খাবেন ৬০০/৭০০ টাকা, দিবেন না ভ্যাট। গ্লোরিয়া জিন্স থেকে কফি খাবেন ওখানে ১৫ টাকা দিতে বাধে। এমন প্রবণতা হলে তো কঠিন।
অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্ব নেয় তখন ১৩৫ মিলিয়ন ডলার এলএনজির বিল পাওনা ছিলো। সেটা শোধ করা হয়েছে। রাশিয়া বলতো- গমের টাকা দিচ্ছো না। বিগত সরকারের সময় কী পরিস্থিতি ছিলো সেটা আমরা টের পাই।
রোজাসহ সারা বছরের চাহিদা মেটাতে পাকিস্তান থেকে খেজুর, কমলার পাশাপাশি অন্যান্য ফল ও কৃষিপণ্য আমদানিতে বড় সম্ভাবনা দেখছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকগণ। পাশাপাশি পাকিস্তানে বাংলাদেশি বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি সম্ভাবনাও রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। এ জন্য দু’দেশের মধ্যে শুল্ক-অশুল্ক বাঁধাসমূহ দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন উভয় দেশের ব্যবসায়ীবৃন্দ।
বুধবার (২২ জানুয়ারি, ২০২৫) রাজধানীর গুলশানে এফবিসিসিআই এবং পাকিস্তানের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত সভায় এসব কথা উঠে আসে।
উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআই এর প্রশাসক মোঃ হাফিজুর রহমান। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, রমজান মাসে বাংলাদেশে খেজুরের প্রচুর চাহিদা থাকে। পাশাপাশি অন্যান্য ফলের চাহিদাও এ সময় বেড়ে যায়। এছাড়া বছর জুড়েই স্থানীয় বাজারে দেশি-বিদেশি ফলের বেশ চাহিদা থাকে। বাংলাদেশের জন্য ফল ও কৃষিপণ্যের সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য উৎস হতে পারে পাকিস্তান, জানান এফবিসিসিআই এর প্রশাসক।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়ে মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, বেসরকারি খাতে যৌথ উদ্যোগ এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। সেই সাথে বাংলাদেশ-পাকিস্তান বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের বিষয়েও গুরুত্ব দেন তিনি।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ এবং সম্প্রসারণের জন্য লজিস্টিক্স, সাপ্লাই চেইন, কোল্ড স্টোরেজ, প্যাকেজিং এবং পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে জোর দেন উভয় দেশের ব্যবসায়ীগণ।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তান হাই কমিশনের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এটাচে জনাব জাইন আজিজ, এফবিসিসিআই –এর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান মোঃ জাফর ইকবাল এনডিসি, এফবিসিসিআই –এর নেতৃবৃন্দ, পাকিস্তানের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সদস্যবৃন্দ, বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্যরা।
গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র কিনলেও জমা না দেওয়ার একাধিক কারণ জানিয়েছে বহুজাতিক তেল কোম্পানিগুলো (আইওসি)। দরপত্র ক্রয় করা ৭ বহুজাতিক কোম্পানির মধ্যে একাধিক কোম্পানি মেইল করে তাদের মতামত জানিয়েছে বলে পেট্রোবাংলা সূত্র নিশ্চিত করেছে।
গভীর সমুদ্র থেকে স্থলভাগ পর্যন্ত পাইপলাইনের হুইলিং চার্জ, ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ), ডাটার দাম বেশি ধরা, পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়টি সামনে এসেছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ডব্লিউপিপিএফের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিশাল বিনিয়োগ তার মুনাফাও বিশাল হওয়ার কথা, ওই ফান্ড নিয়ে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কেউ কেউ আপত্তি তুলেছে। বহুজাতিক কোম্পানি শেভরনের সঙ্গে তার কর্মীদের বিবাদ বিদ্যমান।
বিশাল ঢাক-ঢোল পিটিয়ে গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দরপত্র আহ্বান করে বাংলাদেশ। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পূর্বেই ৭টি বহুজাতিক কোম্পানি দরপত্র কিনলেও শেষ পর্যন্ত জমা দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। কেন বিরত থাকল সেই কারণ উদঘাটনে কমিটি গঠন করেছে পেট্রোবাংলা। ওই কমিটি দরপত্র ক্রয় করা ৭ বহুজাতিক কোম্পানিকে মেইল করে মতামতের জন্য। তারা কেউ কেউ মৌখিকভাবে, আবার দু’টি কোম্পানি ইতোমধ্যে মেইল করে মতামত পাঠিয়েছে বলে পেট্রোবাংলা সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চলে ২৪টি ব্লকে (গভীর সমুদ্রে ১৫টি এবং অগভীর সমুদ্রে ৯ টি) তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দরপত্র আহ্বান করা হয় চলতি বছরের ১১ মার্চ। দরপত্র জমার জন্য ৬ মাস (৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) সময় দেওয়া হয়। সময় শেষ হওয়ার আগেই ৩ মাস বাড়িয়ে ৯ ডিসেম্বর করা হয়। মার্কিন কোম্পানি এক্সোন মবিলসহ ৭টি আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা কোম্পানি দরপত্র কিনেছিল, ২টি কোম্পানি পেট্রোবাংলা থেকে ডাটা কিনেছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেউই দরপত্র জমা দেয় নি। যে কারণে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে দরপত্র।
কারণ জানতে পরিচালককে (পিএসসি) প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়। পরিচালক পিএসসি আলতাফ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমরা প্রত্যেকটি কোম্পানিকে মেইল করে তাদের মন্তব্য জানতে চেয়েছি। একাধিক কোম্পানির মেইল পেয়েছি, তাদের কাছে আরও বিস্তারিত জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
যারা মেইল করেছে তারা কি বিষয় তুলে ধরেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিষয়টি এখনই মন্তব্য করার মতো পর্যায়ে আসেনি।
সাগর সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চলের ওপর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের। বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে ১৫টি এবং অগভীর সমুদ্রে ১১টি ব্লক আছে। অগভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকে অনুসন্ধান পরিচালনা করছে ভারতের কোম্পানি ওএনজিসি। এর আগে সর্বশেষ ২০১৬ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এরপর ২০১৯ সালে নতুন পিএসসি আপডেট করা হলেও দরপত্র ডাকা হয়নি।
বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করে তোলার জন্য আকর্ষণীয় করা হয় পিএসসি (উৎপাদন ও বণ্টন চুক্তি)। আগের পিএসসিতে গ্যাসের দর স্থির করে দেওয়া হলেও এবার ব্রেন্ট ক্রুডের দরের সঙ্গে মিল করে দেওয়া হয়। প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ব্রেন্ট ক্রুডের ১০ শতাংশ দরের সমান। যা আগের পিএসসিতে যথাক্রমে অগভীর ও গভীর সমুদ্রে ৫.৬ ডলার ও ৭.২৫ ডলার স্থির দর ছিল।
দামের পাশাপাশি বাংলাদেশের শেয়ারের অনুপাতও নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। মডেল পিএসসি-২০১৯ অনুযায়ী গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে বাংলাদেশের অনুপাত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আর কমতে থাকে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার। গভীর সমুদ্রে ৩৫ থেকে ৬০ শতাংশ এবং অগভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের হিস্যা ৪০ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত ওঠানামা করবে। কিন্তু তারপরও কোন আগ্রহী প্রতিষ্ঠান না পাওয়াটা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মডেল পিএসসি ২০০৮ প্রণয়ন কমিটির প্রধান মকবুল ই-এলাহী চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, অনেকে মনে করেছিলেন গ্যাসের দাম বাড়ালেই কোম্পানিগুলো দৌড়ে আসবে। সেই ভাবনা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কেন জমা হয়নি সেটা তালাশ করার পাশাপাশি কেন মাত্র ৭টি কোম্পানি দরপত্র কিনেছে সেটাও দেখা দরকার। পিএসসিতে কিছু ঘাটতি রয়ে গেছে, এখানে শর্ত দেওয়া হয়েছে দৈনিক ২০ হাজার ব্যারেল (তেলের সমান) গ্যাস উত্তোলন করে এমন কোম্পানি দরপত্র কিনতে পারবে। এখানেইতো অনেক কোম্পানি বাদ পড়ে গেছে। আমি মনে করি গভীর সমুদ্রের ক্ষেত্রে ১০ হাজার এবং অগভীর সমুদ্রের ক্ষেত্রে ৫ হাজার ব্যারেল হওয়া উচিত। তাহলে আরও অনেক বেশি কোম্পানি অংশ নিতে পারবে।
তিনি বলেন, আমরা যখন ২০০৮ সালে পিএসসি প্রণয়ন করি তখন ১৫ হাজার ব্যারেল শর্ত দিতে যাচ্ছিলাম। একটি বিদেশি কোম্পানি এসে আমাদের বললো ২৫ হাজার ব্যারেল শর্ত দেওয়ার জন্য। আমরা রাজি না হলেও মন্ত্রণালয় থেকে ২৫ হাজার করা হয়েছিল। আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে ডাটা প্যাকেজের দাম অনেক বেশি। কোন কোন প্যাকেজের দাম মিলিয়ন ডলারের মতো। অন্য দেশে এসব ডাটা ফ্রি দেয়। ১৯৭৪ সালে আমাদের দেশে এসব ডাটা উন্মুক্ত ছিলো, তখন অনেক বেশি কোম্পানি অংশ নিয়েছিলো।
রাজনৈতিক পরিস্থিতিটা অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে, বড় কোম্পানিরা সার্বিক বিষয়ে বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করার আগে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমজাদ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমরা আসলে ডাটার ব্যবসা করবো, নাকি গ্যাস দরকার। সেটা আগে চিহ্নিত করা দরকার। ডাটার দাম এতো রাখার কোন যৌক্তিকতা দেখি না।
পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, দেশে ৮টি গ্রাহক শ্রেণিতে দৈনিক অনুমোদিত লোড রয়েছে ৫ হাজার ৩৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট, (দৈনিক) এর বিপরীতে চাহিদা ধারণা করা হয় ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার বিপরীতে দৈনিক ২ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে, আর ঘাটতি থেকে যাচ্ছে প্রায় ১ হাজার ২০০ মিলিয়নের মতো।
তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গড়ে ২ হাজার ৪৯৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের তথ্য পাওয়া গেছে বিইআরসিকে দাখিলকৃত তথ্যে। বেশি চিন্তার হচ্ছে প্রতিনিয়ত দেশীয় গ্যাস ফিল্ডের উৎপাদন কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ন্ত রয়েছে চাহিদা। এক সময় ২৮০০ মিলিয়ন উৎপাদন হলেও এখন ১৯৩০ মিলিয়নে নেমে এসেছে। এর অন্যতম কারণ বিবেচনা করা হয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে স্থবিরতাকে। অনুসন্ধানের চেয়ে আমদানিতে মনযোগ বেশি ছিল বিগত সরকারগুলোর।
এক্সিম ব্যাংকের নবনিযুক্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি ৭৭ জন শিক্ষানবিশ কর্মকর্তার অংশগ্রহণে এক্সিম ব্যাংক ট্রেইনিং অ্যান্ড রিসার্চ অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোঃ আখতার হোসেন । এ সময় সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ট্রেইনিং অ্যাকাডেমির প্রিন্সিপাল কানু লাল কর্মকার।
যেকোনো পেশায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য জ্ঞানার্জনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোঃ আখতার হোসেন নবনিযুক্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ব্যাংকিং জীবনের সকল পর্যায়েই প্রশিক্ষণ বা শেখার সুযোগকে আপনারা যথাযথ এবং গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
‘বিদ্যুৎ চুরি ধরে ফেলায় কাল হলো ইউসুফ আলীর’ শিরোনামে বার্তা২৪.কম এ নিউজ প্রকাশের পর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ (নবায়নযোগ্য জ্বালানি-১ শাখা)। তদন্ত কমিটি গঠনে আশাবাদি হয়ে উঠলেও তাদের কর্মকাণ্ডে চরম হতাশা ও শঙ্কা ব্যক্ত করেছেন ইউসুফ আলী।
ইউসুফ আলী বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, তদন্ত কমিটির সদস্যরা আমার কোনো কথাই বিশ্বাস করল না এবং আমার কোন কথা পাত্তাও দেয় নি, বরঞ্চ আমাকে আরো ভয় দেখায় মিটার কোথায় রাখছেন বের করেন তা না হলে আপনার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে, তখন বুঝবেন কেমন লাগে। এই তদন্ত কমিটি হয়েছে জাস্ট একটা বাহানা তা ছাড়া অন্য কিছু নয়। তা না হলে আমাকে ভয় দেখাবে কেন, তাছাড়া আমার কাছে সঠিক প্রমাণ আছে বলা সত্ত্বেও কেন কমিটির সদস্যরা কোন প্রমাণই নিল না কেন!
আমি প্রথমে সালাম দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম, ঢোকার পর আমাকে বসতে বলল, আমি বসলাম, বসার পর আমাকে জিজ্ঞাসা করল আপনি গ্রাহকের স্থাপনায় কিভাবে গেলেন, আপনি আগে গেলেন না কেন, আমি তখন বললাম স্যার আমি ওখানে প্রথমত যাই নাই। ওখানে পাঠাইছি আমার দুজন লোক দিয়ে লোড বৃদ্ধির চিঠি দিতে নাম হচ্ছে নিজামুদ্দিন এবং ফরিদ দফাদার। তারা হচ্ছেন লাইনম্যান ওরা গ্রাহকের মিটার নাম্বার মিল করতে গিয়ে দেখে মিটার দুটি ডাউন এবং সিল নাই। তখন ওরা আমাকে ফোন দেয়, আমি তখন গ্রাহকের স্থাপনায় যাই।
যাওয়ার পর মিটারের বেসপ্লেট, সিল নাই এবং মিটার দুটি ডাউন তখন আমি অফিসে আসি নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারকে জানাই। তখন স্যার বিলের দুটি স্টিমেট দেখে আমাকে লাইন কাটতে বলল। তখন আমি বললাম স্যার আমি একা লাইন কাটতে পারব না। আপনার ডিপিডিসি টিম পাঠান, তখন কন্ট্রোলে ফোন দেয় এবং লোকমানের টিম পাটায়। লোকমানের টিম সহ আমি গ্রাহকের স্থাপনায় যাই। যাওয়ার পর প্রথমে মিটারের সিল লাগায় তারপর পোল থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করি। আমি নিজামুদ্দিন আর গ্রাহক একটা স্বীকারোক্তি লেখি। তারপর গ্রাহকের স্বাক্ষর নেই। মিটার গ্রাহকের হেফাজতে রেখে এসেছি, সিল লাগায়। প্রতি মাসে মিটার রিডার আব্বাসকে ১০ হাজার করে টাকা দেয়, একটা স্বীকারোক্তি নেই। তারপর আমরা সবাই অফিসে চলে আসি।
তখন আমাকে প্রশ্ন করল, আপনি কেন চিঠি দিতে গেলেন আপনার উপর কেন দায়িত্ব দিল। আমি বললাম ওটা নির্বাহী প্রকৌশলী স্যার বলতে পারবেন, আমি জানিনা, আমাকে বলল গ্রাহকের স্থাপনায় সবাই আপনার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়েছে যে, আপনি মিটার খুলে নিয়ে এসেছেন, আমি তখন বললাম কে কে সাক্ষী দিয়েছে, তখন বলল গ্রাহকরা দিছে এবং আপনার লাইনম্যানরাও দিছে,তখন আমি বললাম আমার কোন লাইনম্যান স্বাক্ষর দিয়েছে! টিম লিডার লোকমানকে ফোন দিয়ে দেখতে পারেন। তখন নুরুল আফসার (তদন্ত কমিটির সদস্য, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পরিদপ্তরের পরিচালক) স্যার লোকমানকে ফোন দিলেও। ফোন দেওয়ার পর লোকমান বলল প্রথমে মিটারে সিল করি তারপর পোল থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করি। একটা স্বীকারোক্তি নিয়ে ওখান থেকে চলে আসি।
আমাকে জিজ্ঞেস করল রেজিস্টার খাতায় সিল এন্ট্রি করেছে কে এবং কে সিল বুঝে নিয়েছে। আমি বললাম স্যার মিটার তো রেজিস্টার খাতায় এন্ট্রি হয়েছে, এই তার ডকুমেন্ট, তখন নুরুল আফসার স্যার বলে এটা রেজিস্টার খাতা এন্টি খাতা নয়,আমি আবার বললাম এটাই রেজিস্টারের এন্ট্রি খাতা। তখন আমার কথা বিশ্বাস করলো না বলল এটা খাতা নয়, আমি বললাম স্যার মিটার গ্রাহকের স্থাপনা থেকে মিটার খুলে আনার পর, এখানে এন্ট্রি করা হয় এবং মিটারে কত ইউনিট আছে সেটা এখানে এন্ট্রি করা হয়। তারা কোন কথায় আমার শুনলো না। তারা বলে এটা রেজিস্টার এন্টি খাতা নয় কিন্তু আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম এটা রেজিস্টার এন্ট্রি খাতা। তারপরও তারা বিশ্বাস করল না।
আমি বললাম সার গ্রাহকের সাথে আমি কথা বলেছি আমার কাছে গ্রাহক স্বীকার করেছে সে আমার সম্পর্কে কোন কথাই বলে নাই। মিটার আমি খুলে আনি নাই, বিদ্যুৎ অফিস এর লোক খুলে এনেছে। তাও আমার কথা বিশ্বাস করতেছে না। আমি বললাম যে আমার কাছে কল রেকর্ড আছে। তখন সে বলল যে কল রেকর্ড বাদ দাও। আমি বললাম গ্রাহক নিজে লাইন লাগাইছে, তার ভিডিও আমার কাছে আছে। একই কথা বারবার সিনিয়র সহকারী সচিব স্যার বলে সবাই আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিচ্ছে যে, আপনি মিটার খুলো নিয়ে এসেছেন। আমি বললাম যে, স্যার আমি যদি মিটার খুলে নিয়ে আসি তাহলে কোন ভিডিও প্রমাণ আছে, তখন সিনিয়র সহকারী সচিব (বিদ্যুৎ বিভাগ) মাজহারুল ইসলাম স্যার আমাকে বলল যে, সূর্য পূর্ব দিক থেকে ওঠে , আর পশ্চিম দিকে ডুবে, তার কোন প্রমাণ আছে!
আমি বললাম স্যার আমার কাছে কল রেকর্ড আছে, ভিডিও ফুটেজ আছে, এগুলো আপনি দেখেন সিনিয়র সচিব স্যার বলল এগুলোর কোন ভ্যালু নাই। এগুলো বাদ দাও। এগুলো দেখতে হবে না। কল রেকর্ড, ভিডিও ফুটেজ, মিটার স্টোর জমা পড়ছে তার কাগজ, গ্রাহকের স্বীকারোক্তিসহ সব তথ্য জমা দিতে চাইলাম রাখল না।
চুরির দায়ে অভিযুক্ত গ্রাহকের শাস্তি আর কর্মী হিসেবে ইউসুফ আলীর পুরস্কার পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) করেছে উল্টো। বিদ্যুৎ চুরির সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেট ধরা পড়ার ভয়ে টেকনিক্যাল সুপারভাইজার ইউসুফ আলীকেই চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দিয়েছে। আর এতে সব হাস্যকর অভিযোগ আনার হয়েছে তার বিরুদ্ধে। যেগুলো তার কর্তৃত্ব কিংবা দায়ের মধ্যে পড়ে না। চাকরি চ্যুতির কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রাহকের প্রকৃত বিদ্যুৎ ব্যবহার মিটারের প্রকৃত রিডিং সংগ্রহ না করা, অস্পষ্ট স্ক্রিনশর্ট গ্রহণ করা।
ইউসুফ আলীও দমবার পাত্র নন, তিনিও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। লিখিত আবেদন দিয়ে বলেছেন, মিটার রিডিং নেওয়া এবং স্ন্যানশর্ট গ্রহণ করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। এগুলো কর্মাশিয়াল সুপারভাইজারের কাজ। তিনি এও লিখেছেন আমার দায় থাকলে অবশ্যই শাস্তি মাথা পেতে নেবো। যদি না থাকে তাহলে আমার চাকরি ফেরত চাই।
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত
ইস্কাটন এলাকা প্রবাসী মুসা মজিদ (৪৩/এ) মিটারের রেকর্ড অনুাযায়ি বাড়তি লোড ব্যবহার করছিলেন। অনুমোদনহীন বাড়তি লোড বৃদ্ধির জন্য চিঠি দিতে গেলে দু’টি মিটারেই (বিলের তুলনায় অনেক কম রিডিং) টেম্পারিং ধরা পড়ে। টেম্পারিং ধরা পড়ার পুর্বে (১৯২৬৬২২৬) মে (২০২৪) মাসে ব্যবহার দেখা যাচ্ছে ২৪৬ ইউনিট। তার আগের মাসে ছিল ২৬২ ইউনিট। সর্বোনিম্ন ১৪৪ থেকে সর্বোচ্চ ৪৭৭ ইউনিটের বিল করা হয়েছে। এরমধ্যেই বিল ওঠানামা করেছে। আর টেম্পারিংয় ধরার পড়ার পরে নতুন মিটার বসানোর ফলে অক্টোবর (২০২৪) মাসে ২৯৪০ এবং নভেম্বর ২৫০১ ইউনিট বিদ্যুতের বিপরীতে বিল এসেছে যথাক্রমে ৪২ হাজার ২৩৮ টাকা এবং ৩৬ হাজার ৫৬ টাকা। ওই মিটারে বিপরীতে ৮ বছর আগে (টেম্পারিংয়ের পুর্বে) ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিলের রেকর্ড পেয়েছে ডিপিডিসি। যা আগের মাসগুলোতে ২ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ হাজার টাকায় ওঠানামা করেছে। নতুন মিটার বসানোর পর শীতকালেও বিল এসেছে ৪২ হাজার টাকা অর্থাৎ প্রতিমাসে প্রায় ৪০ হাজার টাকার বেশি বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা ঘটেছে।
অভিযোগ উঠেছে অভিযুক্ত মুসা মজিদকে বাঁচাতে ডিপিডিসির আউটসোর্সিং কোম্পানির (মুন পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং) কোঅর্ডিনেটর মমিনুল হক, ডিপিডিসির কাকরাইল জোনের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হানিফ উদ্দিন ও ডিপিডিসির পরিচালক (এডমিন) সোনামনি চাকমা নানা রকম ষড়যন্ত্রে চালিয়ে যাচ্ছেন। ডিপিডিসির কাকরাইল জোন ও প্রধান কার্যালয়ে অনেকেই জড়িত রয়েছেন।
তদন্ত কমিটির সদস্য নুরুল আফসার (বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পরিদপ্তরের পরিচালক) বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমরা রিপোর্ট জমা দিয়েছি। এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারছি না। আপনার কোন কথা থাকলে তদন্ত কমিটির প্রধানের সঙ্গে কথা বলেন।
ইউসুফ আলীর অভিযোগ প্রসঙ্গে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বলেন, যে কেউ যে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতেই পারে। এর বেশি আমি কোন মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।