ভয়াবহ বন্যায় এ মুহূর্তে যা করণীয়
বন্যা পরিস্থিতিসাম্প্রতিক সময়ে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। গণমাধ্যমের তথ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত ১১টি জেলায় লক্ষ লক্ষ মানুষ পানিবন্দী। বাংলাদেশের সমসাময়িক সময়ে এই বন্যা এক নতুন বার্তা নিয়ে এসেছে আমাদের বন্যার আগাম বার্তা ও প্রস্তুতির ক্ষেত্রে। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলন (পরিজা)’র সভাপতি প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান ও সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল এক বিবৃতিতে, বন্যা পরবর্তী পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের বিষয়টিতে সরকারকে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করার জন্য আহবান জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই আকস্মিক বন্যায় সবচেয়ে বড় হুমকির মুখ পড়তে যাচ্ছে বন্যা কবলিত অঞ্চলের মানুষের জনস্বাস্থ্য। বন্যার পানির স্রোতে হাজার হাজার গবাদি পশু ভেসে যাচ্ছে, সকল সুপেয় পানির উৎসগুলো ধ্বংস হয়েছে আর এরই পরিণতিতে ইতোমধ্যে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। পানি নেমে যাওয়া শুরু হলেই ডায়েরিয়াসহ নানান পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাবই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমাদের সামনে আসবে। এক্ষেত্রে মৃত প্রাণীদের খুব দ্রুত সৎকার করা, পানির উৎসগুলোকে খুব দ্রুত জীবণুমুক্ত করা, প্রচুর নিরাপদ পানি ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রধান কাজ।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৯১ সালে প্রলঙ্করি ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে অধিকাংশ টিউবয়েল জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। পরিবেশ অধিদপ্তরের তৎকালীন চট্টগ্রামের প্রধান ব্যক্তি প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান টিউবয়েলগুলোতে ব্লিচিং পাউডার পদ্ধতিতে বিশুদ্ধ করে তা দ্রুততার সঙ্গে ব্যবহারের উপযোগী করেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা বিভিন্ন সময় কাজে লাগিয়েছিলেন যা পরবর্তীতে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানও স্বীকৃতি দিয়েছিলেন এবং যা অত্যন্ত কার্যকরি ও তড়িৎ। এক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্বেচ্ছাসেবীদের পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে উক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।
টিউবয়েল বিশুদ্ধকরণ পদ্ধতি: ১০ লিটার পানি( হাতের কাছে যা পাওয়া যায়) একটি বালতিতে নিতে হবে এবং তার সঙ্গে তিন আঙুলের এক চিমটি ব্লিচিংপাউডার বালতিতে দিয়ে ৫ মিনিট ধরে মিশাতে হবে। এর পর টিউবয়েলের মুখটি হাত দিয়ে চেপে ধওে রেখে বালতির পানি টিউবয়েলে ঢেলে দিতে হবে। কিছু পানি টিউবয়েলের ভেতরে আর কিছু উপচিয়ে পড়বে। ৫মিনিট রেখে দেয়ার পর, টিউবয়েলের মুখটি চেপে ধরে থেকে ৫ মিনিট পানি চেপে ফেলে দিতে হবে। এতে ব্লিচিং পাউডারের কোন অবশিষ্ট কিছুই থাকবেনা। টিউবয়েলের ভূগর্ভস্থ পানিতে কোন জীবাণু থাকে না বিধায় পানি পানযোগ্য/ নিরাপদ হবে। এভাবে টিউবয়েলটি দূষণমুক্ত হবে এবং পানি পান উপযোগী হবে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, এ ধরণের আকস্মিক বন্যার বিষয়ে আগাম প্রস্তুতি নির্ভর করে নদীর উৎস তথা প্রতিবেশি দেশ ভারতের তথ্য প্রদান ও তাদের কার্যক্রম এবং আমাদের আবহাওয়া অধিদপ্তর ও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যেও ওপর। এক্ষেত্রে কেউই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেননি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারের উচিত এ বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে আন্তঃনদী বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরা এবং আমাদের সংস্থাগুলোর কোন গাফিলতি রয়েছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা।
জনস্বাস্থ্যের দিক বিবেচনা করে আরেকটি বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি সেটা হলো মোমবাতির ব্যবহার। আমাদের মোমবাতি সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে। বাজারে যেসকল মোমবাতি পাওয়া যায় সেটা প্যারাফিনের মোমবাতি যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বিশেষ করে নবজাতক শিশু, গর্ভবতী নারীদের জন্য।
পরিজার পক্ষ থেকে এই সময়ে আশু করণীয় কয়েকটি বিষয় উত্থাপন করা হলো:
* বন্যার এই পরিস্থিতিতে বন্যা কবলিত এলাকার বিদ্যুৎ সংকটের কথা বিবেচনা করে খাবারের পাশাপাশি চার্জার-ব্যাটারি, হারিকেন ও কেরোসিনের ব্যবস্থা করা।
* বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট ভয়াবহ এ মুহুর্তে। এক্ষেত্রে পানি বিশুদ্ধকরণ টেবলেট ও প্রচুর বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে টিউওয়েবগুলোকে দূষণমুক্ত করা ও ব্যবহার উপযোগী করা।
* বন্যায় প্রচুর গবাদিপশুর মৃত্যু হয়েছে এবং এগুলো থেকে ভয়াবহ দূষণ ও রোগ জীবানু ছড়াবে। সেগুলোকে খুব দ্রুততার সঙ্গে মাটিতে পুতে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে।
* বন্যা কবলিত মানুষের টয়লেট ও পয়ঃবর্জ্য একটি মারাত্মক ঝুঁকি। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট তড়িৎ উদ্যোগ নিতে হবে।
* ডায়েরিয়া মোকাবেলায় পর্যাপ্ত খাবার সেলাইন সরবরাহ করা।
* বন্যার পানি নেমে গেলেই খুবই দ্রুততার সঙ্গে সকলের পুন:বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
* জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকল অধিদপ্তরকে তড়িৎ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
* গণমাধ্যমের কর্মকাণ্ডকে আমরা সাধুবাদ জানাই এবং জনস্বাস্থ্যে তাদের আরও উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণের আহবান জানাই।