‘ত্রাণ নয়, বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থাই বড় সংকট’
বন্যা পরিস্থিতিবন্যা মোকাবেলায় দূর্গতদের উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় যোগাযোগ ব্যবস্থার সংকটকেই বড় অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণেই পর্যাপ্ত ত্রাণ থাকা সত্ত্বেও যথাস্থানে দূর্গতদের সহযোগিতা করা কঠিন হয়ে পড়ছে, জানিয়েছেন তারা। বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সবশেষ আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ভারী থেকে ভারী বর্ষণের তথ্য নতুন করে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে।
বন্যা পরিস্থিতি ও ত্রাণ কার্যক্রমের সবশেষ অগ্রগতি জানতে বার্তা২৪.কম রোববার দুপুরে কথা বলেছে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম এর সঙ্গে।
ত্রাণ বিতরণ নিয়ে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) পর্যন্ত বন্যা কবলিত এলাকায় নগদ অর্থ বিতরণ হয়েছে ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। চাল বিতরণ করা হয়েছে ২০ হাজার ১শ’ ৫০ মেট্রিক টন, শুকনা খাবার ১৫ হাজার বস্তা (প্রতিটিতে ৮টি আইটেম থাকে), শিশুখাদ্য ৩৫ লাখ টাকা ও গোখাদ্য ৩৫ লাখ টাকা।’
তিনি বলেন, ‘এসব ত্রাণ অফিসিয়াললি বিতরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক, উপজেলা প্রশাসন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে।’
সরকারের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তন (টিএসসি)’তে যারা ত্রাণ সংগ্রহ করছেন তাদের সঙ্গেও আমাদের সার্বিক সমন্বয় আছে। ইতিমধ্যে টিএসসি থেকে ৯টি ট্রাক বোঝাই ত্রাণ গতকাল রাতে বন্যা কবলিত ৬টি জেলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। ছাত্র সমন্বয়কদের সঙ্গে আমাদের কর্মকর্তারাও সেখানে উপস্থিত থাকছেন।’
অনেক দূর্গতদের কাছে সহযোগিতা পৌছানো কঠিন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক ভেতরে বন্যা দুর্গত যারা আছেন তাদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীসহ অন্যান্য বিশেষায়িত সংস্থাগুলো কাজ করছে।’
বন্যা দূর্গতদের পুনর্বাসন প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, ‘প্রথমে আমরা উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছি। পানি নেমে যাওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা আমাদের পাঠাবে। তখনই পুনর্বাসনের পদক্ষেপ শুরু করব।’
সবচেয়ে বেশি বন্যা কবলিত হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলো। চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বন্যা পরিস্থিতির সবশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে এ দিন দুপুরে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘পানি বিভিন্ন জায়গায় কমছে। আবার ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের একটা ফোরকাস্টও আছে। চেষ্টা করা হচ্ছে দূর্গতদের আশ্রয় কেন্দ্রে আনা এবং ত্রাণ পৌছে দেওয়ার। বিভিন্ন জায়গায় ডিপিএইচই ও সেনাবাহিনী সদস্যরা মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসাচ্ছেন। বিশুদ্ধ খাবার পানি পৌছে দেওয়া হচ্ছে। মেডিকেল টিম বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছে।’
বিভিন্ন অর্গানাইজেশন, স্বেচ্ছাসেবক, সমাজসেবীরা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে মিলে কাজ করছে জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘বন্যা কবলিত অনেক জায়গাতেই মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। ফেনীতে আমারা কোন যোগাযোগ করতে পারছি না। রাস্তাতেও পানি আছে। মিরেরসরাই থেকে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক রক্ষার জন্যও আমরা চেষ্টা করছি, যাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’
কাপ্তাই লেকের পানি ছাড়াতে তেমন কোন ক্ষতির আশঙ্কা নেই জানিয়ে তোফায়েল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জেনেছি, এই পানি অতীতেও ছাড়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, নৌবাহিনীসহ যারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাদেরকে বিষয়গুলো অবগত করা হয়েছে। সকাল ৮টার সময় যখন পানি ছাড়া হয়েছে, তখন ভাটা থাকে। ভাটার কারণে পানিটা নেমে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সার্বিক বন্যা পরিস্থিতিকে উন্নতিও বলা যাবে না আবার অবনতিও বলা যায় না। এখন যোগাযোগের সংকটই বড় হয়ে ধরা দিয়েছে। সরকারি ত্রাণ পর্যান্ত, সাধারণ মানুষও প্রচুর ত্রাণ নিয়ে আসছেন। কিন্তু এগুলো জায়গামতো পৌছে দেওয়া বা দূর্গতদের উদ্ধার করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ আগে কখনও এই ধরণের বিপর্যয় ঘটেনি।’
‘দূর্গম জায়গাগুলো যাওয়ার জন্য যে নৌকার প্রয়োজন। অনেকে হয়ত নৌকা নিয়ে আসছেন, তেল নিয়ে আসেন নাই। আবার যে প্রবলস্রোত, তার বিপরীতে ওই নৌকাগুলো সক্ষম নয় উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চালানোর জন্য। বিশেষ করে ফেনীতে এই ধরণের সমস্যা বেশি ফেস করতে হচ্ছে’-বলেন বিভাগীয় কমিশনার।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশের ১১টি জেলার ৭৭টি উপজেলা বন্যা কবলিত। জেলাগুলো হচ্ছে- ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার। সরকারি তথ্যমতে, গতকাল পর্যন্ত এ বন্যায় ১৮ জনের মৃত্যুর তথ্য জানা গেছে।