দুর্গম এলাকায় যাচ্ছে না ত্রাণ, হাহাকার পানিবন্দিদের
বন্যা পরিস্থিতিভয়াবহ বন্যাকবলিত লক্ষ্মীপুরের দুর্গম এলাকাগুলোর পানিবন্দিদের জন্য ত্রাণ সহায়তা যাচ্ছে না। ফলে খাবার পানি ও খাদ্যসংকটে হাহাকার করছেন এসব এলাকার মানুষ। ত্রাণ সহায়তার আবেদন করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা জায়গায়। এদিকে পর্যাপ্ত নৌকা না থাকায় উদ্ধারকারী ও ত্রাণ সহায়তাকারীরা দুর্গম এলাকাগুলোতে যেতে পারছেন না বলে জানা গেছে।
লক্ষ্মীপুরের সবচেয়ে বেশী বন্যা কবলিত ও দুর্গম এলাকাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ, দিঘলী, চরশাহী, উত্তর জয়পুর, মান্দারী, দত্তপাড়া, বাঙ্গাখাঁ, লাহারকান্দি, তেওয়ারীগঞ্জ, ভবানীগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের রহমতখালী খাল সংলগ্ন লামচরী, সমসেরাবাদ, বাঞ্চানগর, মধ্য বাঞ্চানগর, মজুপুর এলাকা, চররুহিতা, পার্বতীনগর, কমলনগরের তোরাবগঞ্জ, চরকাদিরা, রামগতির চরপোড়াগাছা, চরবাদাম, রামগঞ্জের লামচর, কাঞ্চনপুর, চন্ডিপুর, ভাটরা, ভোলাকোট, রামগঞ্জ পৌরসভা, ভাদুর, করপাড়া, দরবেশপুর, রায়পুরের সোনাপুর, কেরোয়া, চরপাতা, বামনি, চরমোহনা, রায়পুর, দক্ষিণ চর-আবাবিল ইউনিয়ন ও রায়পুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা। এরমধ্যে দিঘলী, চরশাহীসহ দুর্গম এলাকাগুলোতে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না।
সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া এবং মোহাম্মদ নগর গ্রাম দুটি ঘুরে চরম মানবিক বিপর্যয় লক্ষ্য করা গেছে। গ্রামগুলো এখনও পানির নিতে ডুবে আছে, কোথাও মাটির চিহ্নও দেখা যায় না। যাদৈয়া গ্রামের পশ্চিমাংশের চিত্র একেবারে ভয়াবহ। সড়কের উপর কোমর পানি, কোন কোন বাড়ির ভেতরে বুক পরিমাণ পানি ছিল। এমন কোন ঘর নেই, যেটাতে পানি ঢুকেনি। গুটিকয়েক পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। এছাড়া বেশিরভাগ পানিবন্দি হয়ে আছেন।
গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না। রাস্তা দিয়ে ভেলা বা নৌকা চালাতে হয়। পানির উচ্চতা বেশি হওয়ায় চাইলেই বের হওয়া যায় না৷ এলাকার দোকানগুলোতেও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়া যায় না। প্রয়োজন পড়লেও কিছু ক্রয় করতে পারি না। কেউ কেন সহায়তা নিয়ে আসেনি। মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে আছি।
স্থানীয় বাসিন্দা নুর হোসেন বলেন, এ এলাকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষক, দিনমজুর, অটোরিকশা চালক। সকলে কর্মহীন এখন। খাদ্যের জোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। গবাদি পশুগুলোকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রের নিচে গাদাগাদি করে পশুগুলোকে রাখা হয়েছে। সেগুলোও খাদ্য সংকটে ভুগছে।
খাদ্য সহায়তা প্রদানকারী স্বেচ্ছাসেবীদের অনেকেই জানান,দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছাতে পর্যাপ্ত নৌকারও প্রয়োজন। সাহায্যকারীরা সেকারণেও ওইসব এলাকায় খাদ্য সহায়তা পৌঁছাতা পারছেন না।
এদিকে বন্যা কবলতিদের যেকোনো সহায়তায় জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক। এ লক্ষ্যে মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সকালে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে লক্ষ্মীপুরের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বন্যা ব্যবস্থাপনা ও বন্যার্তদের সর্বাত্মক সহায়তায় সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান। তিনি জানান, লক্ষ্মীপুরে ৭ লাখ ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এ পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ৩০ হাজার মানুষ। বন্যা দুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য ৭০০ মেট্রিকটন চাল এবং নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০৯ মেট্রিকটন চাল ও ১৬ লাখ টাকা ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া শিশু খাদ্যের জন্য ৫ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বন্যা কবলিত এলাকায় এই বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আরও ৩০ লাখ টাকার চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল মাজিদুল হক রেজা, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী রেজাই রাফিন সরকার, সিভিল সার্জন ডা: আহমেদ কবীর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবি সিদ্দিকী প্রমুখ।