রাজশাহীর গাছে এসেছে আমের মুকুল
রাজশাহীর গাছে গাছে আগাম জাতের আমের মুকুল ফুটতে শুরু করেছে। মাঘের শুরুতেই এই মুকুল জানান দিচ্ছে মৌসুমের শুরু। নতুন আমের সম্ভাবনার কথা।
আমচাষিরা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার আগাম আমের ফলন ভালো হতে পারে। রাজশাহীর বাঘা, চারঘাট ও পুঠিয়া উপজেলাগুলোতে এই আগাম মুকুলের আধিক্য দেখা যাচ্ছে। চাষিরা এখন আশায় বুক বাঁধছেন ভালো ফলনের জন্য।
আগাম মুকুল আসায় চাষিদের মাঝে যেমন আনন্দ বইছে, তেমনি ঘনকুয়াশায় মুকুল নষ্টের আশঙ্কাও রয়েছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, আমের মুকুল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কম। কুয়াশার পরে রৌদ্র উঠায় আমের মুকুল নষ্টের পরিবর্তে মুকুল আরো সতেজ হবে। তবে এ জন্য কিছু ছত্রাক জাতীয় কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর এই চার জেলায় ৯৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আনুমানিক প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টন। এরমধ্যে জেলায় ১৭ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। গত বছর এ অঞ্চলে মোট ১২ লাখ ৭ হাজার ২৬৩ টন আম উৎপাদন হয়েছিল।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘা উপজেলার আগাম আমের মুকুল এসেছে। চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া, ভায়ালক্ষিপুর, চারঘাট সদর, সারদা ও শলুয়া এবং বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম, বাউসা, গড়গড়িয়া ইউনিয়নের অনেক বাগানেই আগাম মুকুল এসেছে।
আমচাষিরা জানান, গাছে আসতে শুরু করেছে আগাম মুকুল। আগাম মুকুলে কৃষকরা বেশ খুশি। মাঘ মাস শীতল পরশ দিয়ে ফাগুনকে ডেকে নেয়ার মতো সবুজ পাতার ফাঁকে দুলছে মুকুল। এবার মধ্য জানুয়ারিতেই কিছু কিছু গাছে আমের মুকুল এসেছে। এ পরিস্থিতিতে কৃষক ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া চান না। তাতে করে মুকুলের বেশ ক্ষতি হয় বলে তারা জানান। মুকুল আসার আগে থেকেই তারা গাছের প্রাথমিক পরিচর্যা করেছেন। মুকুল রোগবালাইয়ের আক্রমন থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ স্প্রে করা হয়েছে বলে কৃষকরা জানান।
চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের কালুহাটি গ্রামের আম চাষি বাহাদুর রহমান বলেন, গত দুই বছর বাগানে মুকুল আসেনি। এবার বাগানে আগে ভাগেই এবার মুকুল এসেছে। তবে কুয়াশায় মুকুল নষ্ট না হলে এবার ব্যাপক আমে ফলন হবে।
আম চাষি ও ব্যবসায়ী শামসুল হক বলেন, কিছু কিছু আম গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। আর ১০ দিন গেলে পুরো বাগানের গাছেই মুকুল ফুটে উঠবে। তাই ছোট-বড় আম বাগান পরিচর্যায় সময় ব্যয় করতে হয়। এছাড়াও বাগানের আগাছা পরিষ্কারসহ পোকা দমনে স্প্রে করা হচ্ছে কীটনাশক। এতে পোকা যেমন দূর হবে, তেমনি গাছে দেখা দেবে স্বাস্থ্যকর মুকুল।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, এবার বেশ আগাম মুকুল এসেছে। কিছু কিছু গাছে এখনই মুকুল আসতে শুরু করেছে। তবে কী পরিমান মুকুল আসবে সেটা বুঝে উঠতে আরো সময় লাগবে। আশা করছি গতবছর যেহেতু কম মুকুল এসেছে এবার বেশি মুকুল হবে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে সালমা বলেন, রাজশাহী কিছু কিছু গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। তবে মুকুল আসতে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সময় লেগে যাবে। যে সব মুকুল আসছে এগুলো আগাম জাতের।
তিনি আরো বলেন, চাষিদের বাগান পরিচর্যা ওষুধ স্প্রে করার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। আর চাষিরাও অধিক ফলনের আশায় সে অনুযায়ী কাজ করছেন। গতবছরের তুলনায় এবার মুকুল দেখে বেশি আসবে বলে মনে হচ্ছে। ফলনও বেশি হবে। কুয়াশায়ও তেমন ক্ষতি হবে না। ফলে এবার যে লক্ষমাত্র আমার নির্ধারণ করেছি সেটি পুরণ হবে।
কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মোতালেব হোসেন বলেছেন, গত বছর ২০২৪ ছিল আমের অফ ইয়ার। গত বছর যেসব আম গাছে প্রচুর ফল ছিল, সেসব গাছে এ বছর কম ফল ধরতে পারে। এই পরিস্থিতি আবহাওয়া, পরাগায়নের সমস্যা ও রোগবালাই বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত ২০ শতাংশ গাছে এক বছর পর পর ফল আসে। তবে এ কারণে ফলনের তারতম্য কমই ঘটে থাকে।
তিনি আরও জানান, রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলায় আম বাগান বিগত পাঁচ বছরে অনেক বেশি সম্প্রসারিত হয়েছে যা চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রায় সমান। তবে উৎপাদনের মাত্রায় নওগাঁর উৎপাদন হার বেশি হওয়ার কারণ হলো, বাগানগুলো নতুন। রাজশাহী জেলার কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, রাজশাহীর দুর্গাপুর, বাঘা-চারঘাটসহ বিভিন্ন উপজেলার আবাদি জমি পুকুরে রূপান্তর করাতে ফসলি জমির সংকট হয়। এ কারণে অনেক কৃষক তাদের আম বাগান কেটে ফসলি জমি করেছে। এটি ভবিষ্যৎ খাদ্য শৃঙ্খলের জন্য হুমকি হিসেবে তিনি দেখছেন।