সাঁওতালদের জমি দখল ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগে জড়িতদের শাস্তির দাবি
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের জমি দখল ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদ এবং জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে- এএলআরডি, ব্লাস্ট, বাংলাদেশে আদিবাসী ফোরাম, কাপেং ফাউন্ডেশন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, নিজেরা করি, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, আদিবাসী-বাঙালি ঐক্য পরিষদ, পিইউপি, রোপ, স্বপ্ন, পেইস্ট, ছিন্নমূল, পল্লী উন্নয়ন অগ্রগতি, নিত্যবিকাশ কেন্দ্র ও তরনী।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এন্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) প্রোগ্রাম ম্যানেজার রফিক আহমেদ সিরাজী একটি প্রতিবেদন পাঠ করেছেন।
তিনি বলেন, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের রাজাবিরাট এলাকায় চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে আদিবাসীদের ভোগদখলীয় জমিতে রাজাহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও তার লোকেরা মাটি ভরাট করতে শুরু করলে কয়েকজন যুবক তাতে বাধা দেন। তখন চেয়ারম্যান ও তার লোকজন সাঁওতাল সম্প্রদায়ের নেকোলাস মুর্মুর নামের এক যুবককে মারধর করে। খবর পেয়ে ব্রিটিশ সরেন নামের এক যুবক প্রতিবাদ করতে গেলে চেয়ারম্যান তাকেও লাঠি দিয়ে মারধর করার হুমকি দেয়। এ সময় ব্রিটিশ সরেনের মা ফিলোমিনা হাঁসদা চেয়ারম্যানের লাঠি ফেরাতে গেলে চেয়ারম্যান তার মাকে মারধর করে মাটিতে ফেলে দেয়। এতে তিনি মারাত্মক আহত হন। বর্তমানে তিনি বগুড়ার জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার জের ধরে ওইদিনই রাত ১১টার দিকে ব্রিটিশ সরেনের বাড়িতে চেয়ারম্যানের লোকজন আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এতে মাটির ঘরের ভেতরের আসবাব, কাপড় ও টিনের চাল পুড়ে গেছে। এই ঘটনাকে সামনে রেখে ঢাকা, বগুড়া ও গাইবান্ধার ১৭ টি ভূমি অধিকার ও মানবাধিকার সংগঠন সরেজমিনে তথ্য অনুসন্ধান করেছে। প্রতিনিধিদল ভুক্তভোগী, স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করছেন।
রফিক আহমেদ সিরাজী বলেন, প্রতিনিধিদল যখন ভুক্তভোগী বৃটিশ সরেনের সাথে কথা বলেছেন। তিনি ভারাক্রান্ত মনে জানান, এই এলাকায় তাদের ৩ একর ৭২ শতক জমি রয়েছে। সি এস খতিয়ানে এ জমির মালিক লক্ষন হেমব্রম। যিনি এ জমি পেয়েছিলেন রাজা শৈলাস চন্দ্র রায়ের কাছ থেকে। জমিদারি প্রথা বিলোপ হবার পর লক্ষন হেমব্রম তার দাদী মাইকা হেমব্রমের নামে এ জমি রেকর্ড করে দিয়েছে, সেই থেকেই তারা এ জমি ভোগ দখল করে আসছে। কিন্তু হঠাৎ করে কেরু মন্ডল নামে এক বাঙালী দাবি করেন তিনি চেক দাখিলা মূলে এ জমির মালিক হয়েছেন। এ নিয়ে বৃটিশ সরেনদের পূর্ব পুরুষদের সাথে একটি মামলা হয় তাতে ১৯৮০ সালে সাঁওতালরা তাদের পক্ষে রায়ও পেয়েছেন। কিন্তু তারপরও তারা তাদের জমি ভোগ দখল করতে পারেনি। কেরু মন্ডলের নামে এস এ খতিয়ান হলেও আদালতের রায়ে তার মালিক বৃটিশ সরেনরা। কিন্তু বি আর এস খতিয়ান হবার সময় কেরু মন্ডল আদালতের রায় গোপন করে তার নামে তা করে নেয়। কিন্তু পরবর্তীতে যখন কেরু মন্ডল বুঝতে পারে কোন অবস্থায়ই সে এ জমি পাবে না তখন সে বৃটিশ সরেনদের নামে রেজিস্ট্রি করে তা ফেরত দিয়েছে। এখানেও মূলত: চালাকি করা হয়েছে। সে মূলত: প্রমান করতে চেয়েছে এ জমির মালিক কেরু মন্ডল। এরপর ঐ জমিই কেরু মন্ডলের ছেলে হবিবুর মন্ডল রাজাহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের কাছে বিক্রি করে দেন। এবং সেই অবৈধ কাগজের বলে চেয়ারম্যান এ জমির মালিক দাবি করে আসছে। যার আদতে কোনও ভিত্তি নেই।
তিনি আরও বলেন, চেয়ারম্যান স্থানীয় বিএনপির প্রভাশালী নেতা ছিলেন। পরবর্তীতে, ৫ জানুয়ারি তাকে দল থেকে বহিস্কার করে বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এড. সুব্রত চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার এখন সুইজারল্যান্ডে আছেন। ৬ মাস হয়ে গেছে কিন্তু তারা আঙুল শুষছেন। কিন্তু, দেশে বিভিন্ন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের কোনো খবর নেই। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, এএলআরডি'র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ, ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস, বারসিক'র পরিচালক পাবেল পার্থ, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক হিরণ মিত্র চাকমা প্রমুখ।