অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিমানবন্দরের সামনে হেনস্তার দায়ে চাকরি হারিয়েছেন লেবার কাউন্সেলর মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম।
জেনেভায় আসিফ নজরুলের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। উপদেষ্টার সঙ্গে প্রটোকল থাকার পরও কেন এমন ঘটনা ঘটল এবং এর সঙ্গে কাদের যোগসাজশ রয়েছে তা জানতে চেয়ে সুইজারল্যান্ডের জেনেভার বাংলাদেশ দূতাবাস ও স্থায়ী মিশনের কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা চেয়েছে মন্ত্রণালয়।
সদর দফতরের কূটনৈতিক পত্র পাওয়ার স্বল্প সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তারা। জেনেভার বাংলাদেশ দূতাবাসের তথ্যমতে আওয়ামী লীগ আমলে জেনেভা মিশনে নিয়োগ পাওয়া একজন কর্মকর্তা এবং এক লোকাল স্টাফের যোগসূত্র থাকতে পারে বলে প্রতিবেদন পেয়েছে ঢাকা।
বিজ্ঞাপন
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক সূত্র গণমাধ্যমকে আরও জানিয়েছে, মিশনের প্রতিবেদনের আলোকে লেবার কাউন্সেলর (জেনেভাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস) মুহাম্মদ কামরুল ইসলামকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে ঢাকায় ফিরতে বলা হয়েছে। আর আওয়ামী লীগের আমলে নিয়োগ পাওয়া লোকাল স্টাফ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মচারী মিজানের চাকরি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এছাড়া, হেনস্তার ঘটনার তিন হোতা সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম জমাদার, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল খান এবং ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সুইজারল্যান্ড শাখার আহ্বায়ক খলিলুর রহমানসহ প্রায় সবাইকে শনাক্ত করা হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জেনেভায় আসিফ নজরুলকে হেনস্তার পর সম্প্রতি বিদেশে বাংলাদেশের সব মিশনে জরুরি পরিপত্র পাঠানো হয়েছে। সেই পরিপত্রে দুটি বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের বিদেশ সফরকালে যথাযথ প্রটোকল ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে রাষ্ট্রদূতসহ মিশনের কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।
দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকেই নওগাঁ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের জোরালো দাবি জানিয়ে আসছিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ করলেও নাম পরিবর্তনে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি।
তবে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুর ২টার দিকে শহরের মডেল টাউনে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী প্রশাসনিক ভবনের সামনে ‘নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা নতুন সাইনবোর্ড টানিয়েছে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা।
এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নওগাঁয় নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতা আরমান হোসেন ও সাদনান সাকিবসহ স্থানীয় শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, আওয়ামী সরকারের আমলে ফ্যাসিস্ট হাসিনা শেখ মুজিবের নামে অযৌক্তিকভাবে নওগাঁর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করেছিলো। অথচ অনেক আগে থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয় নওগাঁর নামে নামকরণের জন্য আমরা আন্দোলন করে এসেছি। তাই নিজ অবস্থান থেকে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন এই সাইনবোর্ড টানানো হলো।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নওগাঁয় নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতা আরমান হোসেন বলেন, নওগাঁয় বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়ার পর থেকে অসংখ্যবার রাজপথে নেমে নাম পরিবর্তনের দাবি নিয়ে আমরা কাজ করেছি। তবে ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে সেটি সম্ভব হয়নি। অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি নিজেদের অনুভূতির জায়গা থেকে নিজেরাই নতুন নামকরণ করে সাইনবোর্ড টানালাম। কাজটি করার পর থেকে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে।
আগামীতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ নিয়ে যাতে কেউ অপরাজনীতি না করতে পারে সে বিষয়েও আমরা সজাগ থাকবো, বলেন তিনি।
নওগাঁ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ড. মোহা. হাছানাত আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজে এই মুহূর্তে ঢাকায় অবস্থান করায় অস্থায়ী কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে কথা বলতে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও বন্ধ পাওয়া যায় বলে উপাচার্যের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সরল বিশ্বাসে নিজের হজ লাইসেন্স ব্যবসায়িক চুক্তির আওতায় লুৎফুর রহমান ফারুকী নামের একজনকে দিয়ে নানাবিধ হয়রানি, বদনাম ও মামলার শিকার হয়েছেন গ্র্যান্ড সিকদার এয়ার ট্রাভেলসের মালিক মো. নাসির উদ্দিন সিকদার।
জানা গেছে, নাসির উদ্দিন সিকদারের মালিকাধীন হজ এজেন্সির বিপরীতে হজযাত্রী নিবন্ধনের টাকা দেখিয়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করে তালবাহানা করছেন লুৎফুর রহমান ফারুকী।
এ বিষয়ে প্রতারণার শিকার মো. নাসির উদ্দিন সিকদার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি সরল বিশ্বাস লুৎফুর রহমান ফারুকীকে লাইসেন্স পরিচালনার জন্য দিয়ে বিপদের শিকার, তার কূটচালে সামাজিকভাবে হেয় হচ্ছি; আমার ব্যবসায়িক সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।’
তিনি জানান, ফারুকীর কারণে আমার গ্র্যান্ড সিকদার এয়ার ট্রাভেলসের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় এখনও বৈধ তালিকায় নাম আসেনি। ফলে হজযাত্রী নিবন্ধন করতে পারছি না। এটা নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ঘুরেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। উল্টো ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পাঁচ কোটি টাকা ঋণ আদায়ের জন্য আমার নামে মামলা করেছেন।
গ্র্যান্ড সিকদার এয়ার ট্রাভেলস (হজ লাইসেন্স নং-৯২৯) হজ ও উমরা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা অনুযায়ী ২০২৩ সালের ৭ মার্চ গাজীপুর এয়ার ট্রাভেলস (হজ লাইসেন্স নং-৭৮২)-এর মালিক লুৎফুর রহমান ফারুকীর সঙ্গে হজ এজেন্সি নিবন্ধন সনদ হস্তান্তরের আদলে একটি ব্যবসায়িক চুক্তি করেন। চুক্তির শর্তানুযায়ী গ্র্যান্ড সিকদার এয়ার ট্রাভেলসের নামে প্রিমিয়ার ব্যাংক মহাখালী শাখায় একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। হিসাবটি হজকালীন সময়ে পরিচালনার জন্য লুৎফুর রহমান ফারুকীকে অথরাইজড করা হয়। পরে লুৎফুর রহমান ওই হজ লাইসেন্সের বিপরীতে প্রিমিয়ার ব্যাংক মহাখালী শাখা থেকে পাঁচ কোটি টাকার একটি মূলধন ঋণ নেন। ওই ঋণের টাকায় ৪৪৮ জন হজযাত্রীর মূল রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নিদের্শনানুযায়ী ফ্লাইট ভাড়া বাবদ গ্র্যান্ড সিকদার এয়ার ট্রাভেলসের ব্যাংক হিসাবে লিয়েন করে রাখা হয়।
হজ লাইসেন্সের বিপরীতে ঋণগ্রহণের কথা জেনে নাসির উদ্দিন সিকদার ব্যাংকে চিঠি দিয়ে লুৎফুর রহমান ফারুকীর হিসাব পরিচালনার ক্ষমতা প্রত্যাহার ও ব্যাংক হিসাব স্থগিত করার অনুরোধ করেন। অন্যদিকে হজযাত্রীদের বিপরীতে ব্যাংক ঋণের জটিলতা নিরসন না করে লুৎফুর রহমান ফারুকী রেজিস্ট্রেনকৃত ৪৪৮ জন হজযাত্রীকে আল রিসান ট্রাভেলস (হজ লাইসেন্স নং ৬৭২) স্থানান্তর করা হয়। এই লাইসেন্সটিও লুৎফুর রহমান ফারুকী অন্যের কাছ থেকে ব্যবসায়িকভাবে পরিচালনার জন্য গ্রহণ করেছেন।
এভাবে মূল এজেন্সির মালিকের অনুমতি ছাড়া স্থানান্তরের ফলে ৪৪৮ হজযাত্রীর উড়োজাহাজ ভাড়া পরিশোধের বিষয়টি আরও জটিল হয়। এটা নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হয়। এমনকি লুৎফুর রহমান ফারুকীর হজ রেজিস্ট্রেশন, হজযাত্রী স্থানান্তর, হজযাত্রীর উড়োজাহাজ ভাড়া সংক্রান্ত নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা, হজযাত্রীদের বাংলাদেশে রেখে সৌদি আরবে চলে যাওয়া, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একাধিক চিঠি এবং হজ কার্যক্রমে তাকে নিষিদ্ধ করার কথা গণমাধ্যমে মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়।
এ সময় লুৎফুর রহমান ফারুকী আমাকে ম্যাসেজ দিয়ে বলেন, ‘নাসির ভাই, আমি মহাবিপদে পড়ে গেছি, ভিসা করতে দেরি হওয়ার কারণে নিউজ হয়ে যাওয়ায় হাজিরা ঠিকমত টাকা দিচ্ছে না। তাছাড়া মোয়াল্লেমরা অফারে অগ্রিম টাকা দিতে চেয়েছিল তাও দিচ্ছে না। তাই হাজিগুলো পাঠানোর ব্যাপারে বিরোধিতা না করে সহযোগিতা করেন। লোন পরিশোধের তো এখনো সময় আছে, হজের পরে ব্যবসা চালু থাকলে এগুলো নিয়ে বাঁধবে না। চিন্তা করবেন না, আপনাকে বিপদে ফেলব না- ইনশাআল্লাহ। বিপদের সময় আমাকে সাহায্য করেন, আমি আপনাকে সহযোগিতা করব- ইনশাল্লাহ। ব্যাংকের টাকা মেরে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না, তবে পরিশোধ করতে একটু সময় লাগতে পারে। চিন্তা করবেন না।’
এদিকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হাব (হজ এজেন্সি এসোসিয়েশন বাংলাদেশ) নেতা এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের চাপে প্রকৃত হজযাত্রীর নিকট থেকে উড়োজাহাজ ভাড়া ব্যাংক হিসাবে জমা না করে ব্যাংকের লোনের টাকা হজের টাকা হিসেবে দেখিয়ে লিয়েনকৃত অর্থ লিয়েন সম্বনয় না করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ছাড় করে দেয়। তখন হজ ফ্লাইট শেষের দিকে, আমারও কোনো কিছু করার থাকে না। কিন্তু আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই।
মো. নাসির উদ্দিন সিকদার আরও বলেন, লুৎফুর রহমান ফারুকীর সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তিনুসারে পাঁচ কোটি টাকার চেক শুধুমাত্র জামানত হিসাবে ব্যবহৃত হবে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও তার প্ররোচণায় ব্যাংক চাপের মুখে টাকা ট্রান্সফার করে। ফলে পুরো ঋণের দায়ভায় আমার ওপর এসে বর্তায়। অথচ গ্র্যান্ড সিকদার এয়ার ট্রাভেলসের নামে ৪৪৮ জন রেজিস্ট্রেশন হজযাত্রী নিবন্ধন হলেও আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো হজযাত্রীর টাকা গ্রহণ করি নাই। আমার কাছে মন্ত্রণালয়ের চিঠি থেকে শুরু করে সব কাগজ রয়েছে, কবে কোথায় কীভাবে টাকা ট্রান্সফার হয়েছে, সব ডকুমেন্ট থাকার পরও আমার নামে মামলা করা হয়েছে। আমি এর প্রতিকার চাই।
এ বিষয়ে জানতে লুৎফুর রহমান ফারুকীকে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি। তবে হাবের একাধিক সাবেক নেতা নাম প্রকাশ না করে বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছেন, ‘প্রতিবারই হজ মৌসুমে হাজিদের সঙ্গে নতুন নতুন ঘটনা নিয়ে আলোচনায় আসেন লুৎফুর রহমান ফারুকী। বিভিন্নজনের কাছ থেকে লাইসেন্স ভাড়া নিয়ে একেক বছর একেক লাইসেন্স নিয়ে নানা অপকর্ম করেন। তার পরিবারের সদস্যদের নামে একাধিক হজ লাইসেন্স রয়েছে, তিনি সেগুলো ব্যবহার করেন না। হজ নিয়ে নানা অনিয়মের কারণে লুৎফুর রহমান ফারুকী একাধিকবার গ্রেফতার হন, তারপরও থামেনি তার অপতৎপরতা।’
হজযাত্রীদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ, জালিয়াতি, নানাবিধ গাফিলতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনাসহ নানা কারণে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় মুফতি লুৎফুর রহমান ফারুকীকে হজ কার্যক্রমে নিষিদ্ধ করেছে। প্রতারণার দায়ে হজ-উমরার কার্যক্রমে কাউকে নিষিদ্ধ করার ঘটনা এটাই প্রথম।
চলতি বছরের ৬ জুন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অধিশাখা থেকে যুগ্মসচিব ড. মো: মঞ্জুরুল হক সাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে লুৎফুর রহমান ফারুকীর সঙ্গে হজ ও উমরা বিষয়ে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন না করার জন্যও সর্বসাধারণের প্রতিও অনুরোধ জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লুৎফুর রহমান ফারুকীকে ভবিষ্যতে সব ধরনের হজ ও উমরা কার্যক্রমে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। একই সঙ্গে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধিত কোনো হজ এজেন্সি তার সংঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করলে সেই এজেন্সির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে লুৎফুর রহমান ফারুকী মক্কা হজ মিশনের সামনে হজের পর হাজিদের দিয়ে মিছিল করায়। ওই ঘটনায় সৌদি আরবের কাছে বাংলাদেশকে জবাবদিহি করতে হয়। দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে দেশে ফিরে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে একটি রীট করেন লুৎফুর রহমান ফারুকী। সেটি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত আবদুল্লাহ (২৩) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা গেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে মারা যান তিনি।
নিহত আবদুল্লাহ বেনাপোল পৌরসভার বড়আঁচড়া গ্রামের জব্বার আলীর ছেলে এবং রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন আবদুল্লাহ।
এদিকে আবদুল্লাহ'র মৃত্যুর খবরে বেনাপোল বন্দর পরিদর্শনে আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নৌপরিবহণ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন তার বাড়িতে গিয়ে পরিবারকে সান্ত্বনা দেন। এসময় বেনাপোল পৌরসভার পক্ষ থেকে ২৫ হাজার ও জেলা প্রশাসন থেকে ৫০ হাজার টাকা সহযোগিতা করা হয়। এছাড়া আরও সহযোগিতার আশ্বাস দেন সাখাওয়াত হোসেন।
এসময় উপদেষ্টার সাথে উপস্থিত ছিলেন- যশোর জেলা প্রশাসক, শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বেনাপোল বন্দর পরিচালক, পোর্টথানা ওসিসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর তাঁতীবাজার মোড়ে বংশাল থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন আবদুল্লাহ। তার কপালের ঠিক মাঝ বরাবর গুলি লাগে। এমন অবস্থায় প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা তিনি রাস্তায় পড়ে থাকেন।
কপালের মাঝ বরাবর গুলি লাগলেও সৌভাগ্যক্রমে অল্পের জন্য মস্তিষ্ক রক্ষা পায়। রাত তিনটায় সার্জারি শুরু হয়ে ভোর ছয়টায় শেষ হয়। অপারেশন সফল হলে এক পর্যায়ে বেশ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান আব্দুল্লাহ। কিন্তু কিছুদিন পরেই তার প্রচণ্ড মাথাব্যথা শুরু হয়। এরপর আবার তাকে ঢাকা মেডিক্যালে আনা হয়। চিকিৎসকরা তার মাথায় ইনফেকশন দেখতে পান। তাই আবার সার্জারি করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু তেমন উন্নতি না হওয়ায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সহায়তায় তাকে গত ২২ আগস্ট ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। প্রাথমিকভাবে কিছুটা উন্নতি হলেও কিছুদিন পরেই তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া লাগে।
চক্ষুরোগ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দিতে ১১তম বারের মতো বাংলাদেশে এসেছে উড়োজাহাজে স্থাপিত বিশ্বের একমাত্র স্বীকৃত চক্ষু চিকিৎসাশিক্ষা ও সার্জিক্যাল হাসপাতাল অরবিস উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতাল। এমডি-১০ উড়োজাহাজে স্থাপিত হাসপাতালটি বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মুনির আহমেদ, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আব্দুল্লাহ আলমগীর এবং চিটাগং আই ইনফারমারি অ্যান্ড ট্রেনিং কমপ্লেক্সের (সিইআইটিসি) অধ্যাপক ডা. মুনিরুজ্জামান ওসমানী অরবিসকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানায়।
বাংলাদেশে উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতালের প্রথম প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮৫ সালে এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালে। এবারের প্রশিক্ষণ চলাকালে অরবিসের ক্লিনিকাল স্টাফ এবং স্বেচ্ছাসেবক ফ্যাকাল্টিরা ১৮ থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের চক্ষুচিকিৎসক ও চক্ষুখাতের পেশাজীবীদের সরাসরি অস্ত্রোপচার এবং রোগীদের যত্ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেবেন। ওই সময় সিমুলেশন প্রশিক্ষণ এবং চক্ষু সংক্রান্ত কর্মশালাও অনুষ্ঠিত হবে।
অরবিস ইন্টারন্যাশনাল একটি আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা যেটি বিশ্বের ২ শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে দৃষ্টি-সুরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। বাংলাদেশে অরবিসের এবারের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির লক্ষ্য চোখের যত্নের মান বাড়াতে স্থানীয় চক্ষুসেবা পেশাজীবীদের দক্ষতা গড়ে তোলা এবং চোখের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে, অ্যালকন ফাউন্ডেশন ও ফেডেক্সের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং অ্যালকন কেয়ারস, অফথালমোলজিকাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওএসবি), বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) এবং সরকারের ন্যাশনাল আই কেয়ারের (এনইসি) সহায়তায় এবারের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থানকারী উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতাল এবং অরবিসের পার্টনার হাসপাতাল - চিটাগাং আই ইনফার্মারি অ্যান্ড ট্রেনিং কমপ্লেক্সে (সিইআটিসি) প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালিত হবে। প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে চোখের ছানি, অকুলোপ্লাস্টিক, সার্জিক্যাল রেটিনা, শিশু গ্লুকোমা ও কর্নিয়ার পাশাপাশি অ্যানেস্থেসিওলজি, নার্সিং ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।
ডা. মুনির আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং চট্টগ্রাম আই ইনফার্মারি এবং ট্রেনিং কমপ্লেক্সের সঙ্গে সমন্বিতভাবে বাংলাদেশে আবার উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতাল আনতে পেরে আমরা গর্বিত। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্ব বাংলাদেশে মানসম্পন্ন চক্ষুসেবার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।